সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
ফিচার
বাবার অবদান বাবার সম্পত্তিতে নয়, বাবার অবদান আমাদের অস্তিত্বে
আবদুল আজিম
প্রকাশ: রোববার, ১৫ জুন, ২০২৫, ৮:২৪ পিএম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাবা হলেন নীরব বয়ে চলা নদীর মতো। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন একটি নীরব গল্প—যেখানে কখনো জোয়ার, কখনো ভাটা। বাবা কখনো উচ্চস্বরে দাবি করেন না কিছু, কিন্তু প্রতিটি কাজে তার উপস্থিতি, ত্যাগ আর ভালোবাসা ঠিকই বোঝা যায়। পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে ধৈর্যশীল কারও নাম নিতে হয়, তবে সেটা নিশ্চিতভাবে বাবার।

বাবা যেন এক নির্ভীক নাবিক, যিনি শত ঝড়-তুফানের মাঝেও তার পরিবার নামক জাহাজটিকে নিরাপদে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তার কঠিন মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অপার কোমলতা। সন্তানের সামান্য সাফল্যে মুখে না হেসে গম্ভীরভাবে বলেন, ‘আরও ভালো কিছু হতে হবে’, অথচ আড়ালে গিয়ে চোখের জল ফেলেন—এটাই বাবা।

বাবা নিয়ে লেখার মতো যোগ্যতা হয়ত আমার নেই, তবে অনুভবের গভীরতা আছে। আমার বাবা খুব রাগী, অল্পতেই রেগে যান। কিন্তু রাগের আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক কোমল, আবেগময় হৃদয়। ছোটবেলায় বাবা ঢাকায় চাকরি করতেন। তখন মোবাইল এত সহজলভ্য ছিল না, যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। বাবা ঢাকা থেকে চিঠি পাঠাতেন, আম্মাও চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন। একবার আমিও আম্মার চিঠির সঙ্গে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম বাবাকে। তখন আমি স্কুলে ভর্তি হইনি। বাড়ি ফিরে বাবা বলেছিলেন, আমার চিঠিতে কিছু বানান ভুল আছে—সেই কথা আজও মনে গেঁথে আছে।

বাবা বাড়ি আসবেন, এই অপেক্ষার প্রহর যেন কখনও শেষ হতো না। আর ছুটি শেষে বাবা যখন ঢাকায় ফিরে যেতেন, তার অশ্রুসজল চোখ দেখে আমার মনটা কেঁদে উঠত। আমাদের তিন ভাই ও এক বোনের চাওয়া-পাওয়ার বাইরে কিছু ভাবেননি তিনি। কখনো আমাদের মুখে কিছু শুনলে, নিজের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই সেটা পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।

আমার বাবা নিজের জন্য কখনো কিছু কেনেননি। ঈদে তিনি পুরাতন জামা পরেই কাটিয়ে দিতেন, কিন্তু আমাদের জন্য থাকত নতুন জামার আয়োজন। নিজের চাহিদাগুলো নিঃশব্দে বিসর্জন দিয়ে আমাদের হাসিমুখ নিশ্চিত করতেন। আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে তিনি প্রতিদিন পরিশ্রম করেছেন, স্বপ্ন বুনেছেন শুধুই আমাদের জন্য।

বাবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা কখনো ভাষায় সম্পূর্ণ প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তার ত্যাগ, শ্রম, সততা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। জীবনের সুখের মুহূর্ত সবার সঙ্গে ভাগ করলেও দুঃখের সময়ের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া মানুষটিই আমাদের বাবা।

ছোটবেলায় হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলে, কান্না পেলে, আমাদের একমাত্র নির্ভরতা ছিলেন বাবা। তার আঙুল ধরে আমরা পৃথিবী চিনেছি। একেকটা গাছ, পশু, পাখি, নদী সব কিছু চিনিয়েছেন ধৈর্য ধরে। অথচ সময় বড়ই নির্মম। সেই মানুষটিই যখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েন, শিশু হয়ে যান, তখন সমাজের অনেকেই তাকে অবহেলা করে। যখন তিনি সন্তানের হাত খোঁজেন, সন্তানকে জড়িয়ে একটু ঘুমোতে চান—তখন অনেক সন্তানই সেই স্পর্শ ফিরিয়ে নেয়।

এই সমাজের অবহেলা সত্যিই লজ্জাজনক। আমরা ভুলে যাই, যিনি না থাকলে আমাদের অস্তিত্বই থাকত না, সেই মানুষটিই বাবা। আমাদের জীবনের প্রকৃত নায়ক তিনি। তার জায়গা হোক আমাদের ঘরে, আমাদের মনে, আমাদের ভালোবাসায়। বার্ধক্যের সময়ে যেন প্রতিটি বাবা ভালোবাসা, যত্ন আর নিরাপত্তায় থাকেন।

ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক এবং নিরাপদ থাকুক পৃথিবীর সব বাবা।

কেকে/এএম

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মধ্যরাতে ঢাবি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার

ফিচার- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close