বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫,
১৮ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
শিরোনাম: খাদের কিনারে এনসিপি      আমরা ক্ষমতায় গেলে পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে: মির্জা ফখরুল      নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে আমরা মানি না: জামায়াত আমির      চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন      পাকিস্তানি বাহিনীর উপস্থিতি দেখেই পালাল ভারতের যুদ্ধবিমান      জামিন পেলেন ইসকন নেতা চিন্ময় দাস      ‘বরাদ্দের অর্ধেকে তিনশ ঘর নির্মাণ করায় সেনাবাহিনীকে কৃতজ্ঞতা’      
মুক্তমত
নানামুখী সংকটে মানুষ, বাড়তে পারে দারিদ্র্যের সংখ্যা
ওসমান গনি
প্রকাশ: রোববার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ৩:০১ পিএম আপডেট: ২৭.০৪.২০২৫ ৩:১৬ পিএম  (ভিজিটর : ২৬৬)

গত ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর দেশের এক শ্রেণির মানুষ মনে করেছিল দেশের সাধারণ মানুষের হয়তো ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হতে পারে। দেশের মানুষ মনে করেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারিশমায় এ দেশের আম-জনতার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে, কিন্তু তা এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না।

অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকে বিভিন্নভাবে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা আশ্বস্ত হচ্ছি। বিদেশ থেকে শুধু বড় বড় বিনিয়োগের হাতছানির খবর পাচ্ছি, কিন্তু ছিটেফোঁটা বিনিয়োগও আসছে না। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার পেছনে প্রথমে দেশের ভেতরে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেশীয় বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। ৯ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৩৭ শতাংশেরও কম, বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, এলসি নেই, নতুন করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না, শ্রমিক অসন্তোষসহ পরিবেশ না থাকায় অনেক ছোট-বড় শিল্প-কারখানা একের পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি ব্যবসার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে থেকে ‘নতুন ঋণ’ চাহিদাও নেই। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। তাই দেশি বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগে আসছেন না; বরং ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন।

বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি গত বছরের শেষ দিকে পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরো দুর্বল করা হয়েছে। নানামুখী সংকটে মানুষের হাত খালি, অর্থের প্রবাহ নেই। যে কারণে দেশে বেড়েছে দারিদ্র্যের হার। একইসঙ্গে বেড়েছে অতি দারিদ্র্যের হারও। এমনকি মানুষেরা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পারসেপশন সার্ভে প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে, অতি দারিদ্র্যের হার গোটা দেশেই বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা ব্যবহার করে বিশ্বব্যাংক এ পূর্বাভাস দিয়েছে।

‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে দারিদ্র্য পরিস্থিতির এ অবনতির আশঙ্কা করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে, যাদের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলারের নিচে। এ ছাড়া সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী ৩০ জুন শেষ হতে চলা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশে, যা গত ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে বিনিয়োগ কমে যাওয়া, এখনো বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতে দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সেই আশাবাদও মলিন হয়ে গেছে। এ ছাড়া গত মার্চে দেশের ব্যাংকিং খাতেরও ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত সে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস। মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে। আগে ঋণমান ছিল ‘বি-ওয়ান’, এখন তা নেমে এসেছে ‘বি-টু’ পর্যায়ে। এতে দেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ হয়ে গেছে।
 
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এ পূর্বাভাস দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। তাদের মতে, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের এ অবনমন শুধু একাডেমিক সমন্বয় বলে ধরে নেওয়ার অবকাশ নেই; বরং একইসঙ্গে এটি নির্মম সতর্কবার্তাও বটে। একদিকে জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে মজুরি বাড়ছে না। ফলে প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। গবেষকদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগ কম, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং রাজস্ব ঘাটতিও এ সংকটকে আরো বাড়াচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে এবং আরো মানুষকে এ কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে ওপরে উঠতে পারবে।

সূত্র মতে, হাসিনার ভারতে চলে যাওয়া পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ও বিনিয়োগে মন্দার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের আশ্বাস মিললেও বর্তমান অর্থনীতিতে উদ্দীপনা সৃষ্টিতে কোনো সুখবর নেই। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছাড়া বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
 
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘ম্যাক্রো পোভার্টি আউটলুক’, যা সাউথ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আপডেটের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে, যাদের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলারের নিচে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থান হ্রাস বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের কল্যাণে বড় আঘাত হেনেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, এবং স্বল্প দক্ষ কর্মীদের মজুরি ২ শতাংশ ও উচ্চ দক্ষদের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে চরম দারিদ্র্যের হার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। ফলে অর্থনৈতিক দৈন্যতায় পড়বে আরো ৩০ লাখ মানুষ।
 
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তা-বিনিয়োগ, রফতানি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরো দুর্বল করে দিতে পারে। তবে বাহ্যিক চাপ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিঘ্ন, সংস্কার বাস্তবায়নের দুর্বলতা, অব্যাহত মুদ্রাস্ফীতি, মৌসুমি জ্বালানি ঘাটতি এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা— অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরো পিছিয়ে দিতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও দেশি-বিদেশি গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে, চলতি বছর দেশে আরো ৩০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে। এতে অতি দারিদ্র্যের হার ৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। দুর্বল শ্রমবাজার, মূল্যস্ফীতির চাপ এবং মজুরি না বাড়ার কারণে গরিব মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। যার ফলে অনেকেই অতি দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন। একটি পরিবারে যদি এক সপ্তাহ কাজ না থাকে, তাহলেই তারা দারিদ্র্যের নিচে চলে যাচ্ছে।
 
এদিকে কয়েক মাস আগে দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষণায়ও দেশের মানুষের করুণ অবস্থার বিষয়টি উঠে আসে। বিআইডিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে গরিব ছিল ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশে। একইসঙ্গে অতিদারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা ৬ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশে। ২০২২ সালে গ্রামে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ২২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ। একইভাবে অতিদরিদ্র মানুষের হার ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে। শহরে দারিদ্র মানুষের হার ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ ছাড়া অতিদারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

অর্থনীতি বিগত এক বছরে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগে স্থবিরতা, প্রবৃদ্ধি হ্রাস ও চাকরি সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যা নিম্ন আয়ের ও আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতির পরও আজো অনেক নাগরিক এ দুর্বল সীমায় অবস্থান করছেন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

কেকে/এএম

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

খাদের কিনারে এনসিপি
শহিদকন্যা লামিয়া ধর্ষণের ডাক্তারি প্রতিবেদনে ৩ জনের আলামত
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র সীতাকুণ্ড: আসলাম চৌধুরী
ছাত্ররা সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বড় ভুল করেছে: হাবিব-উন-নবী
মৌলভীবাজারে ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে নারী জাগরণের পথিকৃৎ ইউএনও ফেরদৌস আরা
মানিকগঞ্জে বিল্লাল হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড
পত্নীতলায় নদীতে ডুবে এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
নালিতাবাড়ীতে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন
খাদের কিনারে এনসিপি

মুক্তমত- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close