রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
পাথর লুটকাণ্ড নিয়ে দুদকের প্রতিবেদন
ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০০ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আছেন। এ ছাড়া লুটাপাটে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা ও সহযোগিতা ছিল বলে উঠে এসেছে দুদকে প্রতিবেদনে। 

গত ১৩ আগস্ট দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সাদা পাথর এলাকায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। 

এনফোর্সমেন্ট অভিযান শেষে দুদক ঢাকায় একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অসাধু ব্যক্তিরা যোগসাজশ করে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে পাথর উত্তোলন চলতে থাকে। সর্বশেষ ১৫ দিন আগে নির্বিচার পাথর উত্তোলন ও আত্মসাৎ হয়। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে নেওয়া হয়। 

ঢাকায় পাঠানো দুদকের প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, ছয়টি ক্যাটাগরিতে পাথর লুটে জড়িত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এবং সরকারি সংস্থাগুলোর কার কী ভূমিকা ছিল, তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নিষ্ক্রিয়তা, লুটেরাদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়াসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। 

যে ছয়টি ক্যাটাগরিতে দুদক পাথর লুটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার বিবরণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, এ ক্রমে প্রথমেই আছে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। এরপর স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, রাজনীতিবিদ ও অন্যরা রয়েছেন। এর মধ্যে বিএমডি ও বিজিবির বিষয়ে পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করা যাবে বলে দুদক উল্লেখ করেছে। 

দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম জানতে পারে, জেলা প্রশাসক, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি), তহসিলদারসহ অনেকেই অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর-বাণিজ্যের কমিশন পান। প্রতি ট্রাক থেকে ৫ হাজার এবং প্রতি বারকি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা স্থানীয় প্রশাসন কমিশন পায়। সিভিল প্রশাসনের ক্ষেত্রে কমিশনের ভাগ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে বণ্টন হয়ে থাকে বলে দুদক অভিযানকালে জানতে পেরেছে। সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দিষ্ট সোর্স ও কর্মচারীর মাধ্যমে কমিশনের টাকা সংগ্রহ করা হয়। 

পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও লুটপাট ঠেকাতে সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সদিচ্ছার অভাব, অবহেলা, ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে বলে দুদক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। 

গত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ করে সাদাপাথর পর্যটন এলাকায় দিনদুপুরে উপজেলা প্রশাসনের গোচরেই পাথর লুটপাট হয়েছে বলে দুদক উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, লুটপাট চলাকালে বিভিন্ন সময়ে উপজেলাটিতে চারজন ইউএনও দায়িত্বরত ছিলেন। তারা নামমাত্র ও লোকদেখানো কিছু ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া পাথর লুট বন্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেননি। 

এনফোর্সমেন্ট অভিযানকালে দুদক জানতে পেরেছে, প্রতি ট্রাকে অবৈধভাবে উত্তোলিত প্রায় ৫০০ ঘনফুট পাথর লোড করা হয়। পরিবহনভাড়া ছাড়া প্রতি ট্রাক পাথরের দাম ধরা হয় ৯১ হাজার টাকা। প্রতি ঘনফুট পাথরের দাম ১৮২ টাকা। এর মধ্যে প্রতি ট্রাক থেকে ৫ হাজার টাকা পুলিশ এবং ৫ হাজার টাকা প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। বাকি ৮১ হাজার টাকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। 

দুদক জানিয়েছে, পুলিশের কমিশনের টাকা এসপি, সার্কেল এএসপি, ওসি ও আরো কিছু পুলিশ সদস্য পান। এ ছাড়া অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত প্রতিটি বারকি নৌকা থেকে পুলিশের কমিশনবাবদ ৫০০ টাকা তোলা হয়। পুলিশ নির্দিষ্ট সোর্সের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাক ও নৌকা থেকে এ চাঁদা সংগ্রহ করে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করে সাদাপাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে দুদক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে।

পাথর লুটে সর্বদলীয় ‘ঐকমত্য’ 

পাথর লুটপাটে ৪২ জন রাজনীতিক, পাথর ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা এনফোর্সমেন্ট অভিযানকালে পাওয়া গেছে বলে দুদক উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে বিএনপির ২১ জন (একজন বহিষ্কৃত নেতা), জামায়াতের ২ জন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ২ জন, আওয়ামী লীগের ৭ জন রয়েছেন। 

রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি (পদ স্থগিত) সাহাব উদ্দিনের নাম আছে। পাথর ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য হাজী কামাল, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি লাল মিয়া, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদ বাহার ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিনের নাম রয়েছে।

তালিকায় থাকা অন্যরা হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও তার ভাই সাজন মিয়া, উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী ও মানিক মিয়া, আওয়ামী লীগের কর্মী মনির মিয়া (অন্য মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার), হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান ও বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন, জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম, গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স উল্লেখযোগ্য।

দুদক অভিযানের সময় জানতে পেরেছে, বিএমডি সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার বিএমডির। অথচ তারা সেটা করেনি।

সাদাপাথর এলাকায় তিনটি বিজিবি ক্যাম্প/পোস্ট আছে বলে দুদক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। দুদক বলছে, এসব ক্যাম্প থেকে সাদাপাথরের দূরত্ব ৫০০ মিটারের কম। এত কম দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি কমান্ডার ইকবাল হোসেনসহ বিজিবি সদস্যদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা খুব সহজেই পাথর লুটপাট করতে পেরেছেন। তবে এ বিষয়ে ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ তথ্যের কোনো সত্যতা নেই। এটা মিথ্যা।’ 

এদিকে দুদকের প্রতিবেদন জানাজানি হওয়ার পর গত বুধবার বিকালে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান ব্যাখা করেন। তারা বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, কোনোভাবেই এই অপকর্মের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।’ 

মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন দাবি করেন, তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এতে প্রকৃত সত্য আড়াল হচ্ছে।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  পাথর লুটকাণ্ড   দুদক   প্রতিবেদন  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
ফতুল্লায় ঝগড়া থামাতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close