বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫,
৬ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা       নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য জরুরি      ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু      ‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস      আবারো সংঘর্ষে ঢাকা-সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা      রাজসাক্ষী হতে চান পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ আফজালুল      গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ৮১      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
সবুজ বিপ্লবের স্থপতি
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৃষি সংস্কার ও খাদ্য নিরাপত্তার অভিযাত্রা
মোহাম্মদ মাসুদ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫, ৬:২৫ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রনায়ক বা জাতীয়তাবাদী চিন্তার প্রবর্তক হিসেবে নয়— বরং বাংলাদেশের সবুজ বিপ্লবের রূপকার হিসেবেও স্মরণ করা হয়। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে হলে অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষিকে আধুনিকায়ন করা অপরিহার্য। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে তিনি কৃষককেন্দ্রিক উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করেন এবং কৃষিকে রাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে স্থান দেন।

# খাল খনন কর্মসূচি: প্রাকৃতিক জলাধার সৃষ্টি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা

বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিগত বাস্তবতায় পানির সঠিক ব্যবহারের জন্য জিয়া শুরু করেন খাল খনন কর্মসূচি।

• প্রায় ১৫০০ খাল খনন করে গড়ে তোলা হয় প্রাকৃতিক জলাধার।
• ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমে যায়, উপরিভাগের পানি কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয়।
• খালে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পায়, গ্রামীণ জনগণের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।
• সেচের সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে আসে বৈপ্লবিক সাফল্য।

এ কর্মসূচি ছিল জনগণকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার এক অনন্য নজির। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, এই খাল খনন কর্মসূচি গ্রামীণ সমাজকে এক নতুন উদ্দীপনায় সংগঠিত করেছিল।

# সমবায়ভিত্তিক কৃষির চিন্তা

জিয়া বিশ্বাস করতেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজন সমষ্টিগত উদ্যোগ।

• কৃষিজমির আল তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি, যাতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হয়।
• সমবায়ভিত্তিক কৃষি ও যৌথ খামারের চিন্তা করেছিলেন, যা একদিকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ন্যায় সহযোগিতা তৈরি করত, আবার অন্যদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো।

# প্রযুক্তি ও কৃষি উপকরণ বিতরণে বিপ্লব

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া একজন বিজ্ঞানীর মতো উপলব্ধি করেছিলেন—“ভালো বীজ মানেই ভালো ফসল।”
তাই তিনি নেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ:
• উন্নত মানের বীজ গবেষণা ও বিতরণ ব্যবস্থার সংস্কার।
• রাসায়নিক সার, শ্যালো টিউবওয়েল, ডিপ টিউবওয়েল, পাওয়ার টিলার, রিপার, হারভেস্টার—সব আধুনিক কৃষিযন্ত্র কৃষকের হাতে পৌঁছে দেওয়া।
• কৃষি উপকরণ ব্যবসা উদারীকরণ নীতি প্রণয়ন করে বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানানো।

# কৃষকবান্ধব আর্থিক সহায়তা

জিয়াউর রহমান কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেন:
• ১৯৭৭ সালে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ কৃষিঋণ কর্মসূচি চালু করেন। জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা ঋণ সুবিধা পান।
• ১৯৭৮ সালে শস্য গুদাম ঋণ কর্মসূচি চালু করেন। কৃষকরা শস্য মজুদ রেখে ঋণ নিতে পারত, ফলে শস্য কম দামে বিক্রি করতে হতো না।
• কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল ক্রয়ের উদ্যোগ নেন, যাতে তারা ন্যায্য মূল্য পান।

# ধান, গম ও ফসল বৈচিত্র্যে সাফল্য

• তাঁর শাসনামলেই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ধানের বাম্পার ফলন হয় এবং চাল রপ্তানি শুরু হয়।
• দেশের গম উৎপাদন বাড়াতে ১৯৮০ সালে দিনাজপুরের নশিপুরে প্রতিষ্ঠা করেন গম গবেষণা কেন্দ্র।
• গম আমদানি নির্ভরতা কমে আসে এবং কৃষকরা গম চাষে উৎসাহিত হয়।
• সবজি ও ডাল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করেন।

# গ্রামীণ অবকাঠামো ও বিদ্যুতায়ন

কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি গ্রামীণ উন্নয়নকে গুরুত্ব দেন।
• পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
• বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সেচ সুবিধা বাড়ানো ও গ্রামীণ শিল্পোদ্যোগ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন।
• গ্রামীণ সড়ক, সেতু, সেচব্যবস্থা উন্নয়ন করে কৃষি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সহজ করেন।

# যুব সমাজকে কৃষি ও উন্নয়নে সম্পৃক্তকরণ

জিয়া জানতেন, উন্নয়নে যুবসমাজের ভূমিকা অপরিহার্য।
• ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন যুব মন্ত্রণালয়।
• ১৯৮১ সালে স্থাপন করেন যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে যুবকদের কৃষি, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।

# গ্রামীণ জীবনে সরাসরি সম্পৃক্ততা

রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি মাঠে নেমে কৃষকদের সাথে কাজ করেছেন।
• কখনো লাঙল হাতে, কখনো কাস্তে হাতে, আবার কখনো কোদাল হাতে।
• কৃষকের সাথে কথা বলেছেন, তাদের সমস্যা শুনেছেন এবং সমাধান দিয়েছেন।
• কৃষকের এই প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা তাঁকে জনগণের কাছে আরও আপন করে তুলেছিল।

# সবুজ বিপ্লবের সাফল্য

জিয়াউর রহমানের দূরদর্শী কৃষিনীতির ফল মাত্র দুই বছরের মধ্যেই দৃশ্যমান হয়—
• খাদ্যশস্যে রেকর্ড উৎপাদন।
• আমদানি নির্ভরতা কমে আসে।
• কৃষক সমাজে আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ে।
• গ্রামীণ অর্থনীতি জোরদার হয়।
• দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে এগিয়ে যায়।

উপসংহার

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু একজন রাষ্ট্রনায়কই নন, ছিলেন কৃষকের প্রকৃত বন্ধু। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে শুরু হয় সবুজ বিপ্লবের যাত্রা। খাল খনন, কৃষিঋণ, শস্য গুদাম নীতি, পল্লী বিদ্যুতায়ন, গম গবেষণা কেন্দ্র—সবই প্রমাণ করে তিনি কৃষিকে দেখতেন দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে।

আজকের বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে যে সফলতা অর্জন করেছে, তার বীজ বপন করেছিলেন শহীদ জিয়া। তাই ইতিহাস তাঁকে কেবল মুক্তিযোদ্ধা বা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নয়, বরং সবুজ বিপ্লবের স্থপতি হিসেবেই অমর করে রাখবে।

লেখকঃ সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ।

কেকে/ এমএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সভাপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ
চীনের এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শ্রম উপদেষ্টার বৈঠক
তিস্তা নদীর বুকে ভেসে আসা নবজাতকের লাশ উদ্ধার
খাদ্য উপদেষ্টার সাথে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা

সর্বাধিক পঠিত

‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস
জয়পুরহাটে বজ্রপাতে আলু ব্যবসায়ীর মৃত্যু
নবীগঞ্জে সিএনজি পাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ১২ গাড়ি পুড়ে ছাই
জামালপুরে পূবালী ব্যাংকের সহযোগিতায় আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
কেশবপুরে ৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধ, ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close