বিতর্ক যেন পিছুই ছাড়ছে না অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। বিশেষ করে ঘনিষ্ঠজনদের নানা কেলেঙ্কারিতে বারবার বিব্রত হতে হচ্ছে তাকে। সর্বশেষ আসিফ মাহমুদের প্রেস সেক্রেটারি মাহফুর আলমের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে টেন্ডারের কমিশন নিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায় তাকে। এ নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।
এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে আসিফ মাহমুদের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার বাবা বিল্লাল হোসেনের নামেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে নানা বিতর্কে আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠজনদের নাম উঠে আসাকে ভালোভাবে দেখছেন না সাধারণ মানুষ।
উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিওটি ফাঁস করেছেন সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর। ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে তাকে টেন্ডারের কমিশন নিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরের দাবি, কথোপকথনটি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রেস সেক্রেটারি মাহফুজ আলমের। গত বুধবার রাতে জাওয়াদ নির্ঝর তার ফেসবুকে অডিওটি ফাঁস করেন। মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ফেসবুক পোস্টে জাওয়াদ নির্ঝর বলেন, ‘মাহফুজ আলমের (আসিফ মাহমুদের প্রেস সেক্রেটারি) সিডিআর মানে কললিস্ট নিয়ে কাজ করছিলাম। সে দুবাইয়ে রিয়েল স্টেট এবং বিনিয়োগ কোম্পানিতে ফোন দেয়। আগেও এর ধান্দাবাজির অন্য অডিও ফাঁস হয়েছে।’ মাহফুজ আলম এবং এই অডিও নিয়ে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন জাওয়াদ নির্ঝর।
ফাঁস হওয়া অডিওতে মাহফুজ আলমকে এক ব্যক্তির সঙ্গে টেন্ডার নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। কথার একপর্যায়ে ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি ৩ পার্সেন্ট কমিশন দেওয়ার কথা বলেন। তখন মাহফুজ আলম বলেন, ‘কাজ কনফার্ম করে দিলে ৩ পার্সেন্ট, এটা হইল। এখন কিছু কাজ চলতেছে, যেগুলো আমি সিক্স পার্সেন্টে করেছি আপনি খোঁজ নেন। ওয়ান পার্সেন্ট মিডিলম্যান এবং ফাইভ পার্সেন্ট মিনিস্ট্রির জন্য। এগুলো ফিক্সড থাকে।’
কাজের প্রসেস সম্পর্কে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি যেটা করছি তা হলো অ্যাডভাইজর মহোদয় সাইন করবেন, ফিফটি পার্সেন্ট দিয়ে দিবে; সিসিজিবি পাস হবে, বাকি ফিফটি পার্সেন্ট দিয়ে দেবে।’ তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘আপনি ওদের বলেন এখন সবগুলা হচ্ছে এই ফরমেটে।’ কথা ঠিক না থাকলে ফাইল আটকে দেওয়ারও হুমকি দেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘আমি ফাইল আটকে রাখব এখন। কমিটমেন্ট ঠিক না থাকলে তো এখন দেখছেন। কথা দুরকম হইলে কিন্তু সমস্যা হয় বুঝছেন?...আমি আজকে ইজিপি করাব, করায়ে কিন্তু আমি নোয়া (চুক্তিপত্র) ঝুলিয়ে রাখব। আপনি কনফার্মেশন দেবেন এরপরে নোয়া। আর দুইটা ১.৫, দুইটা ১ পার্সেন্ট এগুলো কিন্তু হবে না ভাই; ১.৫ মানে ১.৫, দ্যাটস ইট।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ অডিও ফাঁস নিয়ে চলছে আলোচনা। অনেকেই ঘটনাটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টি সত্য হলে এটি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতি বড় চ্যালেঞ্জ। একজন মন্তব্যে লিখেছেন, ‘এটা যদি সত্যি হয়, তবে এটা শুধু ব্যক্তি মাহফুজের না, পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্নীতির প্রতিফলন।’
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বিতর্কিত কাণ্ডে আলোচনায় আসেন উপদেষ্টা আসিফের এ প্রেস সচিব। চলতি বছরের শুরুতে বিপিএল নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে মাহফুজুল আলমের বিরুদ্ধে। যদিও তখন তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট আসিফ সাহমুদের এপিএস হিসেবে নিয়োগ পান মোয়াজ্জেম হোসেন। এপিএস পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শতকোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোয়াজ্জেম হোসেনকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনও জারি করে। পরে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। একই সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লক করে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে কুমিল্লা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঠিকাদারি লাইসেন্স নেন আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন। কিন্তু এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নিজে। বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে তার লাইসন্সটি বাতিল করা হয়। কনফ্লিক্ট ও ইন্টারেস্টের (স্বার্থের সংঘাদ) বিষয়টি উঠে আসলে এ বিষয়ে ক্ষমা চান আসিফ মাহমুদ।
কেকে/ এমএস