শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫,
৭ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: ফের পিএস বিতর্কে আসিফ      ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও      রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই      ইতা‌লির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ঢাকা সফর বাতিল      সাগর-রুনির পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হলো রাজউকের প্লট      মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা       নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য জরুরি      
জীবনানন্দ
সেই তো ফিরে এলে
সুলেখা আক্তার শান্তা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৪৬ পিএম আপডেট: ২৫.০৪.২০২৫ ৯:৫২ পিএম

মা বললেন, ‘আয় তো মা, তোর হাতে বালা দুটি পরিয়ে দিই।’ রিয়া অবাক হয়ে বলল, ‘মা, এই বালা তো তোমার! তুমি আমাকে পরাবে কেন?’ ‘আমার মন চাচ্ছে। আর এই বালা দুটি তোর হাতেই মানাবে। তোর হাতের গঠন খুব সুন্দর!’ রিয়া হেসে বলল, ‘মা, আমি তো কালো। আমার হাতে সৌন্দর্য কোথায়?’ মা বললেন, ‘আমার কাছে তুই রাজপরী!’ রিয়া মায়ের কথায় হেসে বালা দুটি হাতে পরল। রোকেয়া কাকুতি করে বললেন, ‘মা, আর দুদিন থাক! তোকে চোখের সামনে দেখতে শান্তি পাই।’ রিয়া বলে, ‘মা, বাপের বাড়ি পাশে, চাইলে আসা-যাওয়া করা যায়। তবে এবার আসি।’ রিয়া ফিরে গেল স্বামীর বাড়ি।

রিয়া মায়ের দেওয়া বালা স্বামীকে দেখায়। স্বামী আক্কাস বালা দুটি দেখে বলল, ‘তুমি শাশুড়ির থেকে বালা আনতে গেলে কেন?’ রিয়া বলল, ‘আমি আনতে চাইনি। মা হাতে পরিয়ে দিলেন, তাই নিয়ে আসতে হলো।’ আক্কাস আর রিয়া তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে খুব আন্তরিকতা। সংসার নিয়ে কিভাবে কী করা যায় সেই নিয়েই তাদের ভাবনা।

আক্কাস বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবে। তবে আক্কাসের চিন্তা ছিল বিদেশ গিয়ে অর্থ উপার্জন করে পরিবারের জীবনমান উন্নত করা। রিয়া স্বামীকে বিদেশ যেতে দিতে চায় না। আক্কাস বলল, ‘এখন তো বিদেশ থেকেও প্রতিদিন কথা বলা যায়। চিন্তা করো না। আমি আমার প্রয়োজন জানাব, তুমিও তোমার প্রয়োজন জানাবে।’ রিয়া অশ্রুসিক্ত চোখে বলল, ‘আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।’ তারপরও আক্কাস বিদেশ যাবেই। তার বিদেশের টাকায় সংকুলন হয় না। রিয়ার স্বর্ণালংকার বিক্রি করে তার যাবতীয় টাকা ব্যবস্থা করে দেয়।

তিন বছর পরে আক্কাস বিদেশ থেকে ফিরে এলো। পরিবার আনন্দে মেতে উঠল। বউ ছেলে মেয়েদের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসে। রিয়া স্বামীকে পেয়ে বেজায় খুশি! স্বামীর জন্য কী রেখে কি করবে দিশা পায় না। বিভিন্ন রকমের খাবারের আইটেম তৈরি করে। ছেলে, মেয়ে বাবার সঙ্গে গল্পতে মেতে ওঠে। আক্কাস বাহিরে ঘুরতে বের হয়। পথেই দেখা আসমার সঙ্গে। আসমা কলেজে যাচ্ছে। দু’জনে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয়। আলাপচারিতায় খুব মেতে ওঠে। প্রায় দিন আসমা কলেজে যাওয়া আসার পথে আক্কাসের সঙ্গে কথা হয়। আসমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আক্কাস অস্থির হয়ে পড়ে। আক্কাসের উদাসীন ভাবটা চোখে পড়ে রিয়ার।

আক্কাসের সঙ্গে আসমার সম্পর্ক তা নিয়ে গ্রামে গুঞ্জন শোনা যায়। রিয়া উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি যা কিছু শুনছি, সেটা কি সত্য?’ রিয়া জানতে চাইলে আক্কাস বিষয়টি অস্বীকার করে। আক্কাস বলল, ‘গ্রামের লোকজনের কথা কানে দিও না। আমি তোমার স্বামী, সব সময় তোমারই থাকব।’ রিয়া স্বামীর এই কথায় খুশি হয়।

আক্কাস আর আসমা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই কথা শুনে রিয়া আসমার কাছে যায়। আসমা আমার সন্তান আছে তুমি অবিবাহিত মেয়ে বিবাহিত পুরুষকে কেন বিয়ে করবা? আসমা দেমাকের কন্ঠে বলে, আমাকে আপনার উপদেশ দিতে হবে না। আক্কাস বিবাহিত কিনা সেটা তো আমি দেখেই ওর সাথে সম্পর্ক করছি। রিয়া কোনোভাবেই বুঝাতে পারে না আসমাকে। সে কিছু না করতে পেরে ফিরে যায়। 

আক্কাস উত্তেজিত হয়ে রিয়াকে বলে তুমি আসমার কাছে গেছিলে? তোমার কপাল তুমি পুড়লে। রিয়া প্রতিবাদ করে। কিন্তু আক্কাস তার সিদ্ধান্তে অনড়। রিয়া কাকুতি-মিনতি করে বলে, তুমি কয়েকদিন আগেও বলছো, আমি তোমার স্বামী, তোমার স্বামীই আছি। কারো কথা যাতে কান না দিই। এখন সেই তুমি উল্টা সুর ধরছো? আক্কাস কোনো কথা বলে না।

আক্কাস আর আসমার বিয়ের মুহূর্তে হাজির হয় রিয়া। হাজির হয়ে বলে, ‘এই বিয়ে যদি না থামাও, আমি সংসার ছেড়ে চলে যাব।’ আক্কাস ক্ষুব্ধ হয়ে বলে, ‘তুই সংসার ছাড়লে আমি তোকে ঠেকাব না।’ রিয়া অভিমানের কন্ঠে বলে আমি সন্তান নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরবো আর তুমি করবা সংসার? সেই সংসার যদি তোমাকে না করতে দেয় আল্লাহ! আসমা বলে, আমাদের দুজনকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমি আক্কাসকে নিয়ে সংসার করবো তুমি চেয়ে দেখবা। রিয়া অনুনয় করে বলে, তুমি আমাদের সোনার সংসারটা ভেঙো না। আসমা চোখ বড় বড় বলে, সংসার তো তোমার ভেঙেই গেছে! আমি আক্কাসের সংসারে থাকতে তুমি করবা আক্কেসকে নিয়ে সংসার তা তো আমি করতে দেবো না। 

যখন আমার স্বামী বিদেশ যাবে। সেদিন আমি আমার গহনা বিক্রি করে টাকা দিই। সেদিন আক্কাস আমি তো তোমার পাশে ছিলাম। এখন আমাকে কাঁদিয়ে, বাচ্চাদের কাঁদিয়ে ওকে তোমার জীবন সঙ্গী করতে চাও? আক্কাস এটা তুমি করতে পারো না। 

আক্কাস বলে, তোমার কোনো কথাই আমার মন গলবে না। তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও। ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। সঙ্গে আমার বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছি। তুমি আর আমাকে ফিরে পাবে না। স্বামীর দিকে তাকিয়ে রিয়া বলে, আমি আর তোমার জন্য কাঁদব না সংসার ফিরেও পেতে চাইব না। রিয়া বাচ্চাদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়।

আক্কাস আসমাকে নিয়ে সংসার করে। তার মনে হয় না তার আর কোনো বউ, বাচ্চা আছে। ছেলে, মেয়ে বাবার কাছে যেতে চাইলে রিয়া যেতে দেয় না। যে বাবা তার সন্তানের কথা মনে করে না তার কাছে যেয়ে লাভ কী!

আক্কাস বাহিরে চলে যায়। টাকা-পয়সা যা কামায় সব আসমার কাছে পাঠায়। আক্কাস যে কোম্পানিতে কাজ করত সেটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে অন্য কোম্পানিতে কাজের সন্ধান করে কোনো কোম্পানিতেই সে কাজে যোগদান করতে পারে না। আসমা বলে তুমি টাকা পয়সা তো কিছুই পাঠাও না। এদিকে আমি চলি কী করে! আমি তো কাজেই যোগদান করতে পারি না টাকা পাঠাব কী করে! কত মানুষ বিদেশ থাকে তারা তো ঠিকই টাকা পাঠায়। তাহলে তুমি পাঠাইতে পারো না কেন? তোমার কাজেই থাকে না। আক্কাস আর আসমার মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। দুজনের কথা হয়না। আক্কাস ভাবে আমার এখানে নেই কাজ। আর সে শুধু বলে টাকা পাঠাও টাকা পাঠাও। একবারও ভাবে না আমার কথা। আমি এখানে কীভাবে আছি কেমন আছি। আসমা কোনো কিছু আক্কাসকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় আক্কাসের পাঠানো টাকা পয়সা গয়নাগাটি যা ছিল সব নিয়ে যায়। আক্কাস এই কথা জেনে হায় হায় করতে থাকে। আমার তো সব গেছে, বউ গেছে, বাচ্চা গেছে। সে দেশে ফিরে আসে। এসে আসমার খোঁজ করে তার কোনো খোঁজ পায় না। আমার তো সব গেল এখন আমি কী করি! আমি রিয়ার কাছে ফিরে যাব।

সব হারিয়ে আক্কাস রিয়ার কাছে ফিরে যায়। রিয়া আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। রিয়া বলে, তুমি তো কোনো অন্যায় করো নাই ক্ষমা চাচ্ছ কেন? আমি তোমার সাথে যেই অন্যায় করেছি এ ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না। তুমি বাচ্চাদের নিয়ে আমার বাড়ি চলো। কোথায় যাব কোন বাড়ি যাব? আমার তো কোনো বাড়ি নেই। আজ তুমি কোনো কিছু চোখে মুখে না দেখে আমার কাছে ফিরে এসেছ। যদি তোমার সবকিছু থাকত তুমি আমার কাছে ফিরে আসতে না। রিয়া কথা বাড়ি না। আমি ভুল করেছি ভুলের সাজাও পেয়েছি। রোকেয়া মেয়েকে বুঝিয়ে বললেন, ‘মা, স্বামীর সংসারেই মেয়েদের আসল ঠিকানা।’ সে সন্তান নিয়ে ফিরে যায় স্বামীর সংসারে। ছেলে, মেয়ে দুজন বাবা, মাকে একসঙ্গে পেয়ে খুশি! তাদের সংসার ভরে ওঠে হাসিখুশিতে। আর যেন আমাদের সংসারে না লাগে কালো দৃষ্টি।

কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ফের পিএস বিতর্কে আসিফ
ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও
রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই
কুমিল্লায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে যুবক নিহত
খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শ্বশুরের বিরুদ্ধে পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

মদনে স্ত্রীর নির্যাতন মামলায় সাবেক কমিশনার গ্রেফতার
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৃষি সংস্কার ও খাদ্য নিরাপত্তার অভিযাত্রা
জয়পুরহাটে বজ্রপাতে আলু ব্যবসায়ীর মৃত্যু
জামালপুরে পূবালী ব্যাংকের সহযোগিতায় আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close