বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: প্লট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফের ১৮ বছর কারাদণ্ড      প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড      শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      হংকংয়ে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯      শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে      
জীবনানন্দ
তরুণদের সাহিত্য বোধ
মো. ওসমান আলী
প্রকাশ: রোববার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ৭:১০ পিএম

সাহিত্যের সীমানা ব্যাপক ও বিস্তৃত। কাল পরিক্রমায় মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়। জীবনাচরণে আসে পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের স্পর্শে সাহিত্যও আক্রান্ত হয়। চির নতুনের পথে ছুটে চলা সভ্যতার ধর্ম, সাহিত্যও তার ব্যতিক্রম নয়। সাহিত্য জগতে ‘চিরন্তন সাহিত্য’ বলে একটি বিষয় প্রচলিত আছে—তবে এই বিশ্বাসের ওপর মানুষের স্থির থাকা সম্ভব নয়। কেননা তার মধ্যে দোলাচল বৃত্তি কাজ করে। যেহেতু মহাবিশ্বে কোনো কিছুই চিরন্তন নয় সব কিছুই আপেক্ষিক, তাই সাহিত্য জগতে চিরন্তন সাহিত্য বলে যে কথা সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে তাও হয়তো বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রশ্নবিদ্ধ।

বর্তমানে তরুণ সমাজ সাহিত্য নিয়ে নানারকম চিন্তাভাবনা করছেন, হরেক রকম পরীক্ষা নিরীক্ষায়ও পিছিয়ে নেই। নদীর মতো জীবনও বাঁক বদলায়, সাহিত্যেও আসে চেতনার পরিবর্তন। সরল রৈখিক বোধের বৃত্ত ভেঙ্গে গেছে। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতায় জীবন যান্ত্রিকতার যূপকাষ্ঠে পিষ্ট। মানুষের বোধ, চিন্তা-চেতনা ক্রমান্বয়ে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। তরুণরাও সামাজিক মানুষ। তাদের বোধের বৃত্তে, মস্তিষ্কের অনু-পরমাণুতে দুর্বোধ্যতার জটাজালে দুরূহ থেকে দূরতর হচ্ছে। আর এই প্রভাব পড়ছে সাহিত্যের ক্ষেত্রে। সাহিত্য সীমানার প্রচলিত সংজ্ঞাগুলো পাল্টে যাচ্ছে। বৈশিষ্ট্যগুলো নতুন আঙ্গিক ধারণ করছে। সম্ভবত তরুণ সাহিত্যিকরা সাহিত্যের নন্দন কাননে বিপ্লবী অভিযান শুরু করেছেন। কিন্তু এই অভিযান নিন্দিত ও নন্দিত। নিন্দার কাঁটায় বিদ্ধ, নন্দনের গোলাপে সিক্ত। তবে আশার কথা এই যে, তরুণদের সাহিত্যাকাশে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ এই স্পর্শ-কাতর বিষয়গুলো চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। কালের মানদণ্ডে সব তরুণ সাহিত্যিকই যে টিকে যাবেন একথা আমি বিশ্বাস করি না। চির নতুনের বার্তা সুষমামণ্ডিত না হলে, কালের ঘূর্ণিপাকে অতলের গহ্বরে তলিয়ে যাবে।

রবীন্দ্রনাথ এক সময় দুর্বোধ্য ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে, এরাও দুর্বোধ্য ছিলেন কিন্তু দুরূহ নন। আমাদের উত্তর আধুনিক তরুণ কবিরা (যদিও উত্তর আধুনিক বলে কিছু আছে তা আমি বিশ্বাস করি না। আধুনিক তো আধুনিকই) দুর্বোধ্য তো বটেই এরা আরো এক ধাপ এগিয়ে দুরূহ থেকে দুরুহতর হচ্ছেন। আমার মনে হয় এঁরা চর্যাপদের কালে ফিরে গেছেন। চর্যাপদের আলো আঁধারি ভাষা বোঝার জন্য পণ্ডিতেরা গবেষণা করছেন, এখনো করছেন, কিন্তু তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এখনো আমাদের কাছে অধরা। পণ্ডিতে পণ্ডিতে মতভেদ, কিছু বোঝা যায় কিছু বোঝা যায় না। আধুনিক কবিদের কবিতা যদি এরকম হয় তাহলে কবিতা সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়বে, সর্বজনীন আবেদন শেষ হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত যাদুঘরের শো-কেচে তার স্থান হবে। তবে এঁরা চরম রোমান্টিক, পরম প্রেমিক। পরাবাস্তববাদ এদের সাহিত্যের এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে।

সাহিত্যের গতানুগতিক ধারাকে এরা প্রত্যাখ্যান করেছেন, বোধে ও আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যে উভয় ক্ষেত্রে।  তরুণ কবিরা অনেকেই মনে করেন কবিতা সকলের জন্য নয়। কথাটি আংশিক সত্য হলেও সর্বাংশে নয়। কেন না কবিতাকে এক সময় শিল্পের নন্দন কাননে আবদ্ধ করে, সুষমার আবরণে রাজদরবারের রাজকীয় সভায় জড় পুত্তলিকা হিসেবে উপস্থিত করা হতো। রাজা-বাদশা আমির উমরাহগণ তারা সুন্দরী নারীর সৌন্দর্য পান করার মতো রাজকীয় কবির ছন্দায়িত সুললিত পংক্তিগুলো মদপানের ভাবের আবেশে শ্রবণ ইন্দ্রকে রসোসিক্ত করতেন। অনেক আগেই সে যুগ শেষ হয়েছে। এখন কবিতা সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে। কবিতা এখন সংগ্রামের হাতিয়ার, জাতীয়তাবোধের বাঙময়রুপ প্রস্ফুটিত হয়ে জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয়। কবিতায় ওঠে আসে জীবনবোধের ক্ষরিত রক্তস্রাব। কবিতা শোষকের রাজতক্ত কাঁপায়, কবিতা শিল্পের শ্রেষ্ঠ আসন যাতে সওয়ার হয়ে সুষমামণ্ডিত সত্য - সুন্দরের প্রণয়ে অভিষিক্ত হওয়া যায়। কবিতা জীবনবোধের সহস্রাধিক উন্মোচন করে অভিষ্ট সত্যে - সুন্দরে সমাজকে স্থিতি দান করে। কবিতা আপনার আমার সকলের।

অতএব, কবিতাকে শোকেচে রেখে মুষ্টিমেয় পুঁজিবাদী নষ্টদের রক্ষিতা করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সাহিত্য হতে হবে সাধারণের। সাহিত্যের মধ্যেই ফিরে পাবে জাতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকনির্দেশনা। জটিলতর জীবনবোধের সহজিকরণ রূপ উপস্থাপনই সত্যিকার প্রতিভার অন্বেষা। তরুণ প্রতিভাধর সাহিত্যিকগণ হয়তো সকলেই নয়, কেউ কেউ এই পথে এগিয়ে যাবেন, কালের পরিক্রমায় নকলের ভিড়ে আসলের জয় জয়কার হবেই হবে।
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

প্লট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফের ১৮ বছর কারাদণ্ড
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে কুরআন খতম ও মাহফিল
দ্বিতীয় বারের মতো ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন-মার্কিন দ্বৈরথ
বয়ান শিল্পাঙ্গনের তৃতীয় নাট্য কর্মশালা ৩০ নভেম্বর থেকে

সর্বাধিক পঠিত

চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
বেনাপোলে বিএনপির উঠান বৈঠক, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরলেন তৃপ্তি
ধামরাইয়ে সাত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ১৫ লাখ জরিমানা
বুধবারের আলোচিত ছয় সংবাদ
কলাপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close