ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব হয়ে উঠেছে দেশের ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের সমন্বিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি নির্দিষ্ট ‘ভোটবক্স’ নির্ধারণ এবং আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার উদ্যোগে এগোচ্ছে তারা।
 
এ ধারাবাহিকতায় বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসে পাঁচটি ইসলামি দল। ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস নেতারা এ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে জানানো হয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ ধরনের আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং ধাপে ধাপে অন্য ইসলামি দলগুলোকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

এদিকে আলোচনার ধারাবাহিতকায় দেশের অন্যতম প্রধান ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনা হবে কিনা এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি। যদিও বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা আন-অফিসিয়ালি জানান আপাতত জামায়াতে ইসলামিকে বাইরে রেখেই তারা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কাটিয়ে কাছাকাছি আসার প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামপন্থিদের আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার যে আলোচনা চলমান রয়েছে, এই আলোচনায় জামায়াত নেই।

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা আরো জানান, আলোচনায় ইসলামপন্থিদের মধ্যে আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়া ও পারস্পরিক সমঝোতা গড়ে তোলার বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্ব পায়। একইসঙ্গে আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর ব্যাপারে নেতারা একমত হন, যাতে দেশে নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে। আলোচনায় আরো উঠে আসে আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ হিসেবে চিহ্নিত করে অতীতের গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার দাবি, প্রয়োজনীয় ও মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার সম্পন্ন করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান এবং ইসলামি মূল্যবোধের পরিপন্থি হিসেবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী খোলা কাগজকে বলেন, ‘এটা আমাদের প্রাথমিক আলোচনার অংশ ছিল। আজ কয়েকটি বিষয়ে আমরা কথা বলেছি, তবে এগুলোই চূড়ান্ত আলোচনা নয়। সামনে আরো ব্যাপকভাবে এ নিয়ে কথা হবে। আমরা আশাবাদী, আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর ব্যানারে ভালো কিছু হবে।’ জামায়াত ইসলামী সঙ্গে আলোচনায় বসবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট দল হিসেবে জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে বসা হবে কি হবে না, এটা আজকে আলোচনায় ছিল না। সুতরাং, আপাতত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। ’
 
এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে গেলে ইসলামি দলগুলো ভোটের মাঠে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে পারলে ভোটের মাঠে ইসলামি দলগুলো ভালো করবে। কারণ, এর মাধ্যমে সকল ইসলামি ঘরানার মানুষ এক জায়গায় ভোট দিতে পারবে। আর আমরা যদি বিভক্ত হয়ে থাকি, তাহলে প্রত্যেকেই তাদের সমর্থকদের ভোট দিবে। ফলে এ ভোটের সংখ্যা খুব কম হবে।’   

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী খোলা কাগজকে বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা সমমনা ৪টি ইসলামি দল বৈঠক করেছি। সেই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আমরা আজ ইসলামী আন্দোলনে সঙ্গে বসেছি। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় রাজনৈতিক জোট গঠন না, প্রার্থী কেন্দ্রিক একটি ঐক্য। কোনো আসনে যেন ইসলামি দলের একাধিক প্রার্থী না হয় এ ব্যাপারে সকলেই একমত হয়েছেন।’ তবে এটিও প্রাথমিক আলোচনা, চূড়ান্ত নয় বলেও জানান তিনি। 
 
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার খোলা কাগজকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সব ইসলামপন্থি দলগুলো যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি প্ল্যাটফর্মে আসে সেই চেষ্ঠা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ৫টি ইসলামি দল একসঙ্গে বসা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, আগামী নির্বাচনে সব আসনে একজনই ইসলামপন্থি দলের প্রার্থী থাকবে, কোনো আসনেই ডাবল প্রার্থী হবে না। তবে এটি কীভাবে হবে তা নিয়ে সামনে আরো ব্যাপক আলোচনা হবে।’ এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি লেয়াজো কমিটি করা হবে বলেও জানান নেজামে ইসলাম পার্টির এ নেতা। 

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মহসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমরা ইসলামি দলগুলো এর আগেও এরকম বৈঠকে বসেছি। তবে আমাদের আজকের বৈঠকের মূল বিষয় হলো নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি সমঝোতা। অর্থাৎ, আসনভিত্তিক ইসলামি দলের একজন প্রার্থী দেওয়া। এটাই আমাদের অন্যতম টার্গেট। এটি স্থায়ী কোনো ঐক্যের বিষয় নয়।’ এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘দেশের মানুষের প্রত্যাশা হলো ইসলামি দলগুলো এক কাতারে এসে ভোটে অংশ নেওয়া। আমরা তাদের প্রত্যাশাকে প্রধান্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা, তা বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ।’
 
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে ৫টি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। এগুলো বাস্তবায়নে আমরা সামনে কাজ করব। বিশেষ করে, আজকে আমরা যারা বসেছি, এই ৫টি দল কীভাবে নিজেরা আরো সুসংগত হতে পারি; এ বিষয়ে কৌশলগত অনেক আলোচনা হয়েছে। সামনে আরো আলোচনা হবে, বসা হবে। আমরা আশাবাদী এ উদ্যোগে আমরা সফল হবো ইনশাআল্লাহ।’

কেকে/ এমএস