ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই উৎসব। এই উৎসবে ঘুরে বেড়ানোর অন্যতম বাহন হয়ে উঠেছে অটোরিকশা। পায়ে চালিত রিকশা থেকে আধুনিক অটোরিকশা, নগর জীবনে এর কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঈদের দিন থেকে টানা তিন দিন রাজধানীর রাস্তাগুলো দখলে ছিল এই বাহনের। বিনোদন কেন্দ্র, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা বিশেষ স্থান পরিদর্শনে নগরবাসী বেশি ব্যবহার করেছে অটোরিকশা।
মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষ এই বাহন ব্যবহার করে থাকেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য অনেকেই অটোরিকশাকে বেছে নেন। ঈদের মৌসুমে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অটোরিকশার আধিক্য লক্ষ করা গেছে। যদিও এটি শব্দহীন একটি বাহন, তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কিছুটা থেকেই যায়।
রিকশা থেকে অটোরিকশার বিবর্তন
রিকশার ইতিহাস বেশ পুরনো। ‘রিকশা’ শব্দটি এসেছে জাপানি ভাষা থেকে, যার মূল শব্দ ‘জিনরিকিশা’। এর অর্থ হচ্ছে মানুষের শক্তি দ্বারা চালিত বাহন। উনিশ শতকের শেষ দিকে রিকশার উদ্ভাবন হয়। ধারণা করা হয়, ১৮৭০ সালের দিকে জাপানের সিমালয়ে মিশনারি হিসেবে কাজ করা মার্কিন নাগরিক জোনাথন স্কোবি প্রথম রিকশা আবিষ্কার করেন। তখনকার রিকশাগুলো ছিল দুটি চাকা বিশিষ্ট এবং একজন মানুষ ঠেলে নিয়ে যেত। পরে তিন চাকার রিকশার প্রচলন শুরু হয়।
ঢাকার অটোরিকশা তৈরি করার এক কারিগর খোলা কাগজকে জানায়, অটোরিকশার পার্টস এবং মোটর জাপান থেকে আসে। এই বাহনটির যত যন্ত্রাংশ আছে সবই তৈরি হয় জাপানে। অন্য দেশেও তৈরি হয়ে থাকে, কিন্তু জাপানের যন্ত্রাংশ ভালো মানের। সেজন্য অনেক মিস্ত্রি জাপানি যন্ত্রাংশ দিয়ে রিকশা তৈরি করে থাকেন।
রিকশার আবির্ভাব
বাংলাদেশে রিকশার প্রচলন শুরু হয় ১৯১৯–১৯২০ সালের দিকে, যা বার্মার রেঙ্গুন থেকে চট্টগ্রামে আসে। ঢাকায় রিকশার আগমন ঘটে কলকাতা থেকে, যেখানে ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জের বিদেশি পাট ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য এটি নিয়ে আসেন। ঢাকায় প্রথম রিকশার লাইসেন্স প্রদান করা হয় ১৯৪৪ সালের দিকে।
প্রথমদিকে রিকশার দাম ছিল ১৮০ টাকা। ১৯৩৬–৩৭ সালে চন্দননগরের ফরাসি উপনিবেশ থেকে ঢাকার মৌলভীবাজারের দুজন ব্যক্তি দুটি ‘সাইকেল রিকশা’ নিয়ে আসেন। তখন প্রতিটি রিকশার মূল্য পড়েছিল ১৮০ টাকা। এরপর এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং নগর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বাহনে পরিণত হয়।
১৯৪০-এর দশকে রিকশার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সংকটের কারণে জাপানে রিকশার ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। যদিও বর্তমানে জাপানে রিকশার ব্যবহার নেই, তবে দেশটি রিকশার যন্ত্রাংশ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অটোরিকশার আবির্ভাব
২০০০ সালের দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রচলন শুরু হয়। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো রাজশাহীতে অটোরিকশা তৈরি করা হয়, যার জন্য খরচ হয়েছিল ৪০–৪৫ হাজার টাকা। বর্তমানে একটি অটোরিকশা তৈরি করতে খরচ হয় ৬০–৭০ হাজার টাকা।
ঢাকার রাস্তায় বর্তমানে আনুমানিক ১২ লাখ অটোরিকশা চলাচল করে। এগুলো সাধারণত ব্যাটারিচালিত, যা তুলনামূলক দ্রুতগতির ও আরামদায়ক। তবে, এই বাহন নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অটোরিকশা চলবে কি চলবে না, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।
ঈদ মৌসুমে অটোরিকশা চালকদের আয় বেড়ে যায়। সাধারণত একজন চালক প্রতিদিন ৬০০–৭০০ টাকা আয় করেন, কিন্তু ঈদের সময় এই আয় বেড়ে ১৫০০–১৮০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কেকে/এএম