সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: হামাস-ইসরায়েল বন্দি বিনিময় শুরু, প্রথম দফায় ৭ জিম্মি হস্তান্তর      ভারী বর্ষণ-বন্যায় মেক্সিকোতে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭      ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      
ফিচার
বান্দরবানে বাড়ছে বাঁশ কোড়লোর চাহিদা
কৌশিক দাশ, বান্দরবান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০২৫, ৯:৫০ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের প্রতিটি হাট-বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে পাহাড়ি জনপ্রিয় সবজি বাঁশের অঙ্কুর (বাঁশ কোড়ল)। বর্ষা মৌসুমে জুমিয়া নারী ও পুরুষের আয়ের প্রধান উৎস হয়ে উঠে এই পাহাড়ি সুস্বাদু সবজি বাঁশ কোড়ল। পাহাড়ের প্রাকৃতিক বন-জঙ্গল থেকে কচি বাঁশের অঙ্কুর সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করছেন জুমিয়া পরিবারগুলো। বর্ষাকালে বাঁশের অঙ্কুর বিক্রির মাধ্যমে সংসার চালায় পাহাড়ে বসবাসরত অনেক জুমিয়া নারীরা।

বাঁশ কোড়ল (বাঁশের অঙ্কুর) হলো মূলত ছোট বা কচি বাঁশ। বাঁশের ছোট ডগার ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত বাকলের (ছোবরা) ভেতরে যে কচি অংশটি থাকে, সেটিকেই মূলত বাঁশ কোড়ল বলা হয়, যা খাওয়া হয়।

স্থানীয় পাহাড়িরা জানান, বাঁশ কোড়লের মূল খাদ্য উপাদানটি থাকে বাকল (ছোবরা) দিয়ে মোড়ানো। এই কচি বাঁশের অঙ্কুর পাহাড় থেকে সংগ্রহ করার পর এটির খোসা বা বাকল ছাড়ানো পর ভেতরের অংশটিকে স্থানীয়রা বলে বাঁশ কোড়ল।

ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ


জানা যায়, বছরের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত এই বাঁশ অঙ্কুরের ভরা মৌসুম থাকে। অঙ্কুর মাটি হতে ৪-৬ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। বাঁশ পরিণত হওয়ার আগে স্থানীয় পাহাড়িরা বাঁশ গাছের গোড়া থেকে কচি অংশ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। ৮ থেকে ১০টি অঙ্কুর একসাথে আঁটি বাঁধা হয়। প্রতি আঁটির বাঁশ কোড়লের দাম ৫০-৬০থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। অবশ্যই বর্ষার প্রথম যেসব বাঁশ কোড়ল বাজারের আসে সেগুলো ১২০ থেকে ১৫০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বর্তমানে স্বল্পমূল্যে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এ বাঁশ কোড়ল।

স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বান্দরবান পার্বত্য জেলার পাহাড় ও বনাঞ্চলে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। তবে সব বাঁশের অঙ্কুর খাওয়া যায় না। যেগুলো খাওয়া যায়, তারমধ্যে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশের অঙ্কুরই পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

পাহাড়িরা জানান, বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ কোড়ল (অঙ্কুর) স্বাদেও ভিন্নতা রয়েছে। বাঁশ কোড়ল সবজিকে নানাভাবে রান্না করে খেয়ে থাকেন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীরা। এরমধ্যে সিদ্ধ করে চাটনী, ছোট ছোট করে কেটে ভাজি করে, গোটা বাঁশ কোড়লের ভিতরে মাংস ঢুকিয়ে, মরিচের ভর্তা ঢুকিয়ে ফ্রাই করে ও নানা সবজির সাথে মিক্স করে নাপ্পি দিয়েও রান্না করে খেয়ে থাকেন অনেকেই। বর্তমানে এই বাশঁকোড়ল বাঙ্গালী সম্প্রদায় ও পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় একটা খাবারে পরিণত হয়েছে। 

পাহাড়ে মারমা ভাষায় বাঁশ কোড়লকে বলা হয় মেহ্যাং, চাকমা ভাষায় বাচ্ছুরি, ত্রিপুরা ভাষায় মেওয়া এবং তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বাচ্ছুই আর বাঙ্গালী ভাষায় বাঁশ কোড়ল।

বান্দরবানের মধ্যমপাড়ার বাসিন্দা উমং মারমা বলেন, বর্ষাকালে কর্মহীন হয়ে পড়ে দরিদ্র জুমিয়া পরিবারগুলো। বর্ষায় অনেকে আয়-রোজগার ও খাদ্য সংকটে ভোগেন। এই মৌসুমে দরিদ্র জুমিয়া পরিবারগুলোর আয়ের একমাত্র উৎস হয়ে উঠে পাহাড়ি বিভিন্ন সবজি ও বাঁশ কোড়ল বিক্রির অর্থ।

ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ


বাজারে বাঁশ কোড়ল বিক্রি করতে আসা জুমিয়া নারী উনুচিং মারমা বলেন, প্রতিদিন ভোরে তিনি পাহাড়ে গিয়ে বাঁশ কোড়লসহ নানা সবজি সংগ্রহ করে দুপুর ১টার দিকে বাড়ি ফিরেন। বাড়ির অন্যান্য কাজ শেষ করে খাওয়ার পর ৩টার দিকে বাঁশ কোড়ল ও সবজিগুলো বাজারে নিয়ে যায় বিক্রি করতে। ৫থেকে ৬শত টাকার বাঁশ কোড়লসহ সবজি বিক্রি করে তার পরিবার চলচে এখন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পাশাপাশি বাঙ্গালীদের কাছেও সবজি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পাহাড়ি বাঁশ কোড়ল। এছাড়াও ভ্রমনে আসা পর্যটকদের খাবারের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছে সুস্বাদু এ খাবার। বর্তমানে বান্দরবান জেলা শহর ও পর্যটন এরিয়াগুলোর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ, রেস্টুরেন্ট, রির্সোট গুলোতেও রকমারি খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় বাঁশ কোড়ল। পর্যটকদের কাছেও এটি অন্যতম একটি আকর্ষণীয় খাবারে পরিনত হয়েছে। এছাড়াও বাঁশ কোড়ল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারীরা। চট্টগ্রাম-ঢাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট গুলোতেও পাওয়া যায় বাঁশ কোড়লের সুস্বাদু বিভিন্ন খাবারের রেসিপি। এছাড়াও চট্টগ্রাম-ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চাকমা, মারমা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীরা বাঁশ কোড়লসহ পাহাড়ি খাবারের হোটেল-রেস্তোরাঁ শুরু করছেন।

স্থানীয় অনেক পাহাড়ি বাসিন্দা জানান, এখন বিভিন্ন পাহাড়ি রেস্তোরাঁয় রকমারি খাবার হিসেবে বাঁশ কোড়ল সবার কাছে প্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছেও এটি পছন্দের খাবার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়। পাহাড়ের বাঁশ কোড়ল ব্যাপারীরা বাহিরের জেলাগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে। এখন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও কিনতে পাওয়া যায়। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রামে অনেক পাহাড়ি যুবক-যুবতী পাহাড়ি রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছে। এগুলোতে পাওয়া যায় বাঁশ কোড়লসহ পাহাড়ি সুস্বাদু বিভিন্ন খাবার।

কেকে/এজে
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

যাত্রীবাহী বাস ও অটোরিকশার সংঘর্ষে নারী নিহত
চিত্রনায়ক বাপ্পারাজের রহস্যময় পোস্টে উদ্বিগ্ন ভক্তরা
ফ্যাসিস্ট নাসিমের প্রতারণার শিকার শতাধিক নারী
হামাস-ইসরায়েল বন্দি বিনিময় শুরু, প্রথম দফায় ৭ জিম্মি হস্তান্তর
বিশ্ব ব্যর্থতা দিবস আজ

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
নালিতাবাড়ীতে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা

ফিচার- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close