বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও সাত, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৭      ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প      দুদকের সব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে      প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি      নির্বাচনী জোটের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে : রাশেদ খান      গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
গলার কাঁটা মজুদ লবণ
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: রোববার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:২৩ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

কক্সবাজারে স্বনির্ভর লবণশিল্প চরম সংকটে পড়েছে। গত মৌসুমের ৩ লাখ ৪০ হাজার টন লবণ এখনো মজুত রয়েছে। এর পরেও বাহির থেকে লবণ আমদানির হওয়ার কথার গুঞ্জনের কারণে স্থানীয় লবণ চাষিরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, যদি বাহির থেকে লবণ আমদানি হয় তবে তাদের মজুতকৃত লবণ বিক্রি হবে না। এতে লবণের দাম কমে যাবে। যার কারণে প্রতিনিয়িত চাষিরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় লবণ উৎপাদন কেন্দ্র। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজারের। তার মধ্যে টেকনাফ ও  মহেশখালীতে অন্যতম। এ ছাড়া কক্সবাজার সদর, ঈদাগাঁও, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। গত মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় দেশীয় উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।

তবে লবণ উৎপাদনের মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজার উপকূলে মাঠে নেই চাষিরা। এখনো প্রস্তুত হয়নি লবণ মাঠ, গর্তে পড়ে আছে শত শত মণ লবণ। যদিও বর্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অক্টোবর মাস থেকে চাষিরা লবণ চাষের জন্য প্রস্তুত হন। চাষিদের দাবি, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লবণ মাঠে নামবেন না তারা। 

বিসিক জানায়, শীতকালকে ঘিরে শুরু হয় দেশের লবণ উৎপাদনের প্রধান মৌসুম। যা চলে নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। এই সময়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ মাঠ তৈরি থেকে শুরু করে উত্তোলন হয় সমুদ্রের নোনা পানি শুকানোকে কেন্দ্র করে। তবে বিসিকের আশা, শিগগির লবণ উৎপাদনে মাঠে নামবেন চাষিরা। 

কক্সবাজার বিসিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, লবণ মৌসুম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। শিগগির চাষিরা মাঠে নামবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুম বিলম্বিত হওয়ায় চাষিরা সময়মতো মাঠে নামতে পারেননি। বর্তমানে চাষিরা মণপ্রতি মাত্র ২৪০ টাকা দরে লবণ পাচ্ছেন, যা তাদের হতাশার কারণ। তবে সামনে লবণের দাম বাড়বে বলে বিসিক আশাবাদী।

গত ৯-১১ নভেম্বর বিসিক চেয়ারম্যান কক্সবাজার সফর করে লবণ মাঠ পরিদর্শন করেন এবং চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন। চাষিদের উৎসাহিত করতেই তার এই সফর। উপ-মহাব্যবস্থাপক আরো জানান, যেসব এলাকায় চাষিরা এখনও মাঠে নামেননি, তারা দ্রুত মাঠে নামবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর এক সপ্তাহ পর বাঁশখালীর ছনুয়া এবং কুতুবদিয়া থেকে নতুন লবণ পাওয়া যাবে। উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, এখনও মাঠে গত বছরের ৩ লাখ ৪০ হাজার টন লবণ মাঠে মজুত রয়েছে। আর লবণ আমদানি বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও বিসিকের আয়োজনে স্থানীয় লবণ মিল মালিকদের সঙ্গে বার্ষিক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বর্তমান লবণের মজুত, ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, লবণ মিল মালিক, প্রান্তিক চাষিদের সমস্যা ও লবণ শিল্পের সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সভা শেষে শিল্প সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, শিল্প লবণের আড়ালে কোনো অজুহাতে খাবার লবণ আমদানি করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মাঠ পর্যায়ে লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে বিষয়ে শিল্প সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্টদের উত্থাপিত প্রস্তাবনা সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে পর্যালোচনা করে লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কক্সবাজারে জমি পেলে লবণ সংরক্ষানাগার স্থাপনা গড়ে তোলা হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার হায়দারপাড়া বটতলী এলাকা। গত বছর এই সময় মাঠে লবণ উৎপাদনের ব্যস্ত ছিল চাষিরা। আর এ বছর লবণ উৎপাদন তো দূরে থাক, এখনো মাঠ প্রস্তুত কিংবা মাঠেই নামেনি তারা। হায়দারপাড়া বটতলী গ্রামের লবণ চাষি ছৈয়দ আলম। তিনি বলেন, গত বছর ২ একর জমিতে লবণ চাষ করে উৎপাদন করে সাড়ে ৯শ মণ লবণ। মাঠে প্রতি মণ লবণ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা। কিন্তু বিক্রি করে পেয়েছি ২০০ টাকা। যার কারণে গত আড়াই লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। তাহলে এবার বলেন এত টাকা লোকসান দেয়ার পর কীভাবে মাঠে নামব?’

শুধু কক্সবাজার সদর উপজেলার ছৈয়দ আলম নন; এখনো লবণ মাঠে নামেনি কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, টেকনাফ, মহেশখালী, চকরিয়া ও পেকুয়ার চাষিরা। তাদের দাবি- লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং জমির লিজ মূল্য না কমালে মাঠে নামবেন না তারা। 

লবণ চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই বছরের প্রায় এক হাজার মণ লবণ এখনো মাঠে গর্তে পড়ে রয়েছে। কারণ লবণের দাম না পেয়ে এ অবস্থা। যদি প্রতি মণ লবণ সাড়ে ৪শ টাকা থেকে ৫শ টাকা বিক্রি করে পাওয়া যায়, তাহলে চাষি বেঁচে থাকবে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তো লবণের মূল্য পাচ্ছি ২০০ টাকা। তাহলে কীভাবে আমাদের সংসার চলবে। লোকসান দিতে দিতে আর মাঠে নামতে ইচ্ছে করছে না।

লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ উল্লা সিকদার জানান, দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের নাম দিয়ে সরকারের মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে লবণ আমদানি করার পাঁয়তারা করছে লবণকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট। যা দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি প্রান্তিক চাষিদের রক্ষার্থে লবণ আমদানি বন্ধের দাবি জানান।

মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা এলাকার লবণ চাষি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লবণ মাঠে নামব না। আর লোকসান সইতে পারছি না। সরকার তো ধান-চাল মাঠ পর্যায় থেকে ন্যায্যমূল্য ক্রয় করে। কিন্তু লবণ কেন ন্যায্যমূল্য চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করতে পারে না। লবণ চাষিরা কেন এতো অবহেলিত?’

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘কক্সবাজারে প্রায় ৪১ হাজারের বেশি লবণ চাষি রয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুম পহেলা নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখনো মাঠে নেমেছে মাত্র কুতুবদিয়া ও ছনুয়ার কয়েক হাজার চাষি। কিন্তু প্রায় ৩৯ হাজার লবণ চাষি এখনও মাঠে নামেনি। কারণ হিসেবে উঠে আসছে বাজারে প্রচারিত প্রচুর পরিমাণ শিল্প লবণ আমদানি হয়েছে, মিল মালিক সিন্ডিকেটের কারণে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হচ্ছে না, অন্যদিকে জমির লিজ মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরি বেশি এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। এসব সমস্যা নিরসনে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি মাঠ পর্যায়ে চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয় তাহলে চাষিরা মাঠ নামতে সবসময় প্রস্তুত। এখনও মাঠে মজুত রয়েছে গত বছরের ৩ লাখ ৪০ হাজার টন লবণ। এখন শুধু বাঁশখালীর ছনুয়া এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকার চাষিরা মাঠে নেমেছেন। তবে শিগগির লবণ উৎপাদনে মাঠে নামবেন অন্য এলাকার চাষিরা এমনটা আশা বিসিকের।

উল্লেখ্য, গত বছর ৬৯ হাজার একর জমিতে ৪১ হাজারের বেশি চাষি লবণ উৎপাদনে নিয়োজিত ছিল। আর চলতি বছর লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১৮ হাজার টন।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় বীজ বিক্রিতে অনিয়মের দায়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
শ্রীপুরে ইভটিজিং ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্কুলছাত্রের ছুরিকাঘাত, আহত ৬
শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে না লড়ার সিদ্ধান্ত জেডআই খান পান্নার
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ১২.৫ ডিগ্রি
মোহনপুরে বিএসটিআই লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

সর্বাধিক পঠিত

ইয়ুথ ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটিকে ব্যারিস্টার খোকনের বরণ
পাটগ্রাম উপজেলায় সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারে 'চতুরবাড়ী বিওপি'র যাত্রা
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প
নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
দুই ট্রলারসহ সেন্টমার্টিনে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close