বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও সাত, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৭      ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প      দুদকের সব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে      প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি      নির্বাচনী জোটের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে : রাশেদ খান      গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
অপহরণ আতঙ্কে টেকনাফবাসী
আবদুল্লাহ আল সম্রাট, টেকনাফ (কক্সবাজার)
প্রকাশ: শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:০৩ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে বছরজুড়েই লেগে আছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের ঘটনা। ২০১৭ সারে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে এ অপহরণ বাণিজ্য বেড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভিড়ে স্থানীয় কিছু সংখ্যক লোক এখন অসহায় দিন যাপন করছে। এমন কি প্রশাসন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইশারায় চলে বলে জানা গেছে। 

শিশু থেকে বৃদ্ধ- সব বয়সি মানুষই অপহরণের শিকার হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান-গ্রেফতারেও অপহরণের ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। যার কারণে কক্সবাজারের টেকনাফবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বঙ্গোপসাগর, নাফ নদ ও পাহাড়ের সৌন্দর্যে ঘেরা কক্সবাজারের টেকনাফে এখন বড় আতঙ্কের নাম অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য। কিছুদিন আগে এখানকার বাসিন্দারা মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে গোলাবারুদের বিস্ফোরণজনিত আতঙ্কে থাকত। বর্তমানে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম এ মানবপাচার, অপহরণ-মুক্তিপণ। দিন দিন এ ধরনের ঘটনা বেড়ে চললেও কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো মিলছে না। এখনো মিয়ানমার রাজ্যে প্রায় ১৫০ জন জেলে অপহরণকারীদের হাতে জিম্মি আছে এমন খবর রয়েছে।

জানা যায়, গেল এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে অপহরণের শিকার হয়েছেন সাড়ে তিনশ’র কাছাকাছি। আর পাচার হয়েছেন অন্তত ৭ শতাধিক। গেল ৬ মাসে টেকনাফ থানায় অপহরণ ও মানবপাচার মামলা হয়েছে চল্লিশের অধিক। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব পাচারকার্যে জড়িত স্থানীয় কিছু দালালচক্র। তাদের কবলে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটক ছাড়া পাচার ও অপহরণের শিকার হয়েছেন রোহিঙ্গা নাগরিকও। অধিকাংশই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। তবে যারা মুক্তিপণ দিতে পারেনি, তাদের অনেককে মালেশিয়া- ইন্দোনেশিয়া সাগর পথে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের টেকনাফে বসতঘরে গুলি চালিয়ে দরজা ভেঙে নুরুল ইসলাম নামে এক এনজিও শ্রমিককে অপহরণ করেছে ডাকাতদল। এ সময় তারা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারও লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারে এসে ডাকাতদলের সঙ্গে এপিবিএন পুলিশের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। অপহৃত নুরুল ইসলাম টেকনাফের হ্নীলা পশ্চিম লেদা শামশু আলমের ছেলে। 

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা পশ্চিম লেদায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন অপহৃত নুরুল ইসলামের ছেলে কামাল হোসেন। 

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আমরা পরিবারের সদস্যরা বাড়ির ভেতরে ছিলাম। হঠাৎ করে পাহাড়ি দিক থেকে ২০-৩০ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাতদল আমাদের বাড়ির সামনে এসে ঘেরাও করে। তারা প্রথমে বসতঘরে প্রবেশের চেষ্টা করে, কিন্তু দরজা শক্ত থাকায় ভেতরে ঢুকতে না পেরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। পরে বড় হাতুড়ি দিয়ে দরজা ভেঙে তারা ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঢোকার পর ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং আলমারি তছনছ করে নগদ এক লাখ টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়। এরপর আমার বাবা নুরুল ইসলামকে টেনেহিঁচড়ে বেদম মারধর করতে করতে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাদের বাড়িতে প্রবেশের সময় থেকে অপহরণ করে নেওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত প্রায় ৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়।

তিনি আরো জানান, আমাদের বাড়ির পাশেই এপিবিএন পুলিশ  ক্যাম্প। সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে শুরু করলে ভয় পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পে খবর দিই। কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো সহযোগিতা পাইনি। লাগাতার গুলির শব্দে আশপাশের কেউও এগিয়ে আসতে পারেনি। ডাকাতদল ঘরের সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে ও লুটপাট চালিয়েছে। এখনো পর্যন্ত বাবাকে কোথায় নিয়ে গেছে বা তার অবস্থা কী, তা কেউ জানে না। আমরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। এবং আমার আব্বা এনজিও সংস্থার একজন শ্রমিক। এবং ঘরের ভেতরে ফায়ারের কিছু গুলির খোসা থেকে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে হঠাৎই ২০-৩০ জন সশস্ত্র ডাকাত বাড়িটি ঘিরে ফেলে। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে নুরুল ইসলামকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার সময় বেধড়ক মারধর করতে করতে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। পরিবারের আর্তচিৎকারেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে আশপাশের কেউ এগিয়ে যেতে পারেনি।

টেকনাফ ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন পুলিশের লেদা ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম রাজু জানান, বসতঘরে ডাকাতদলের হানার বিষয়টি  জানার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। এসময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রায় ৬১ রাউন্ড গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

তিনি আরো জানান, ধারণা করা হচ্ছে- ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে কয়েকটি অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। তারাই নুরুল ইসলামকে অপহরণ করতে পারেন। তাকে উদ্ধারের জন্য পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানায়।

তথ্যসূত্র বলছে, গত ২ ও ৩ অক্টোবর ৬০ জন, ১৯ সেপ্টেম্বর, ৬৬ জন নারী-শিশুকে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী উদ্ধার করে। একইভাবে ২২ সেপ্টেম্বর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) যৌথ প্রচেষ্টায় ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন মানব পাচারকারীর আস্তানা থেকে। এর মধ্যে র‌্যাবের অভিযানে বেশ কয়েকজন উদ্ধার হলেও এখনো খোঁজ মেলেনি অনেকের। গত কয়েক বছরে শতাধিক লোক এমন অপহরণ হলেও যারা টাকা দিতে পেরেছে তারা ফিরে এসেছে আর যারা অপহরণকারিদের চাহিদা মেটাতে পারেনি তাদের এখনো খোঁজ নেই। এমন শতাধিক ঘটনা টেকনাফে রয়েছে বলে জানা যায়।

গত ২৫ ফ্রেরুয়ারি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড় থেকে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করে। 

অপহৃত আহমদ উল্লাহ ও জসিম উদ্দিন গরু নিয়ে পাহাড়ের পাশে গেলে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা তাদের গভীর পাহাড়ের দিকে নিয়ে যেতে দেখেছেন স্থানীয় লোকজন। 

জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২২৭ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে ৮৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছে।

স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরাও অভিনব কৌশলে কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের বাসিন্দাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। এ অপহরণ-বাণিজ্য ঘিরে সক্রিয় অন্তত ১০ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পাহাড়-জঙ্গলের আস্তানায় নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছে তারা। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, বাহারছড়া, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নে প্রতিদিনই অপহরণের ঘটনা ঘটছে। শুধু হ্নীলা ইউনিয়নে গত চার মাসে ২০টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে অপহৃতদের ছাড়ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় বীজ বিক্রিতে অনিয়মের দায়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
শ্রীপুরে ইভটিজিং ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্কুলছাত্রের ছুরিকাঘাত, আহত ৬
শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে না লড়ার সিদ্ধান্ত জেডআই খান পান্নার
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ১২.৫ ডিগ্রি
মোহনপুরে বিএসটিআই লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

সর্বাধিক পঠিত

ইয়ুথ ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটিকে ব্যারিস্টার খোকনের বরণ
পাটগ্রাম উপজেলায় সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারে 'চতুরবাড়ী বিওপি'র যাত্রা
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প
নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
দুই ট্রলারসহ সেন্টমার্টিনে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close