বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও সাত, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৭      ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প      দুদকের সব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে      প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি      নির্বাচনী জোটের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে : রাশেদ খান      গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
আমদানির উদ্যোগে শঙ্কায় লবণ চাষিরা
এম. মনছুর আলম, চকরিয়া (কক্সবাজার)
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:১৫ এএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

পুরো দেশের লবণের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হয় দেশীয় উৎপাদন থেকে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে কক্সবাজারেই প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ২৩-২৫ লাখ টন লবণ উৎপাদিত হয়, যা দেশের লবণের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থেকে যায়। তবে কোনো কোনো বছর প্রকৃতির বৈরী আচরণের কারণে লবণ উৎপাদন কিছুটা কম হলেও পরের বছরের উৎপাদন থেকে নির্ধারিত চাহিদা নিবারণ হতো। 

কক্সবাজার বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি ও ক্ষেত্র বিশেষে আবহাওয়া বৈরী আচরণের কারণে নভেম্বর মাসের শুরুতে লবণ চাষে নামেন চাষিরা। কিন্তু ইতোমধ্যে মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ উৎপাদন এলাকার বেশিরভাগ লবণ মাঠ এখনো খালি পড়ে রয়েছে। বিপুল টাকা লগ্নি করে জমি বর্গা নিয়ে চাষে নামতে গিয়ে চরম উদ্বেগ আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয় লবণ চাষিরা। 

কারণ মৌসুমের শুরুতে আবারো সোডিয়াম সালফেট শিল্প-কারখানার জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে বিসিক।

এমন খবরে মাঠপর্যায়ের চাষিরা লবণ চাষে এ বছরও কাক্সিক্ষত দাম পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন এমনটাই জানিয়েছেন চকরিয়া মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী। 

তার অভিযোগ, গত মৌসুমের চার লাখ টনের বেশি লবণ এখনো মাঠে মজুত রয়ে গেছে। সেখানে সরকার নতুন করে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে উৎপাদন মৌসুম শুরু হলেও আগেকার বছরগুলোর মতো ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় অনেক চাষি এখন চাষে নামতে গিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। 

বিসিক সূত্র জানায়, গত মৌসুমে দেশে ২৬ লাখ ১০ হাজার টনের চাহিদার বিপরীতে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন। এর আগের মৌসুমে উৎপাদন ছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন।

চাহিদা পূরণে ঘাটতি থাকলেও মৌসুম শেষ হওয়ার ছয় মাস পর পর্যন্ত ৪ লাখ ২০৩ টন লবণ বিক্রি হয়নি। এসব লবণ এখনো মাঠেই পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। 

বিসিক আরো জানায়, চকরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের পশ্চিম বড়ভেওলা, দরবেশকাটা, বদরখালী, ঢেমুশিয়া, রামপুর, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়নের ৬টি বড় মোকামসহ কক্সবাজারের সাত উপজেলা মিলিয়ে ৫৯ হাজার ৯৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়া উপজেলার (আংশিক) ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে প্রতিবছর লবণ চাষ হয়ে থাকে। উৎপাদন এলাকায় লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ৪১ হাজার ৩৫৫ জন চাষি।

দেশে উৎপাদিত মোট লবণের ৮৭ শতাংশই উৎপাদন হয় কক্সবাজারের সাত উপজেলা থেকে। বাকি অংশ উৎপাদিত হয় বাঁশখালী ও পটিয়ার উপকূলীয় এলাকা থেকে। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম চলে। এবারো নভেম্বর থেকেই উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে কক্সবাজারের মধ্যে শুধু কুতুবদিয়ার চাষিরা উৎপাদনে নেমেছেন। কিন্তু তারাও লবণের দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। বর্তমানে মণপ্রতি লবণের দাম ২৪০ টাকা।

ইতোমধ্যে কুতুবদিয়ার চাষিরা আগেভাগে লবণ চাষে নেমেছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার লবণ মাঠের লাগিয়ত (ভাড়া) ও  শ্রমিক মজুরি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বেশিরভাগ চাষি। 

লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী নেতা মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে আমদানির সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে দেশীয় লবণের দাম অনেক কমে গেছে। এখন মণপ্রতি লবণ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়, যেখানে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩০০ টাকার বেশি। এতে চাষিরা আবারো ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রতিবছর এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশীয় লবণ শিল্প অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে লবণ চাষ, পরিবহন, গুদামজাত ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ। 

এদিকে দেশে মজুত লবণ ব্যবহার করে আগামী দুই মাস চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (লবণ সেল প্রধান) সরোয়ার হোসেন। তিনি জানান, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ লবণ মজুত রয়েছে, তা চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এরপর যাতে কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেজন্য দেড় লাখ টন লবণ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমদানির প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান থেকে অপরিশোধিত লবণ আমদানি করা হবে। 

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ নেতা সোয়াইবুল ইসলামের অভিযোগ, শিল্প-কারখানা ও কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিতে মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে প্রতিবছর বিদেশ থেকে লবণ আমদানি জিইয়ে রেখেছে। সিন্ডিকেট চক্রের এমন কারসাজির কারণে প্রতিবছর দেশীয় লবণ উৎপাদনে জড়িত স্থানীয় চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। 

কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক)-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, বাজারে লবণের দাম কম থাকায় অনেক চাষি মাঠে নামেননি এ কথা সত্য। তবে দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে লবণ কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তার জন্য গোডাউন করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

কেকে/ আরআই
আরও সংবাদ   বিষয়:  আমদানি   লবণ চাষি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় বীজ বিক্রিতে অনিয়মের দায়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
শ্রীপুরে ইভটিজিং ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্কুলছাত্রের ছুরিকাঘাত, আহত ৬
শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে না লড়ার সিদ্ধান্ত জেডআই খান পান্নার
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ১২.৫ ডিগ্রি
মোহনপুরে বিএসটিআই লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

সর্বাধিক পঠিত

ইয়ুথ ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটিকে ব্যারিস্টার খোকনের বরণ
পাটগ্রাম উপজেলায় সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারে 'চতুরবাড়ী বিওপি'র যাত্রা
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প
নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
দুই ট্রলারসহ সেন্টমার্টিনে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close