বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও সাত, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৭      ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প      দুদকের সব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে      প্রাথমিক শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি      নির্বাচনী জোটের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে : রাশেদ খান      গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
পর্যটন মৌসুমে অতিরিক্ত লাভের চিন্তা ব্যবসায়ীদের
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:৪৩ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

আসছে মৌসুমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল জোনে হোটেল ভাড়া কয়েকগুণ বাড়ানো হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রেস্তোরাঁগুলোও হোটেলের নিয়মে চলতে শুরু করেছে। পর্যটক বেশি আসা শুরু করলে এক হাজার টাকার রুমভাড়া হয়ে যায় তিন হাজার টাকা। বিশেষ করে হোটেল ইউনি রিসোর্ট ও রিগ্যাল প্যালেসের তারকা মানের হোটেল ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বলে জানা গেছে। আবার অনেক কটেজ রয়েছে যারা এখন ৫শ’ টাকায় ভাড়া দেন। কিন্তু পর্যটন মৌসুমে তারা দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করে থাকে। 

এ-ব্যাপারে কোনো ধরনের মাধাব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। তবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আজিম খান জানান, যারা হোটেল ভাড়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমার জেলা প্রশাসন থেকে চেষ্টা করছি কক্সবাজারে যেসব পর্যটক আসবে তাদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য। তারা যেন কোনো প্রকার হেনস্তার শিকার না হয়।   

এদিকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে থাকার কারণে দেশ ও বিদেশ থেকে পর্যটক আসছে। যদিও বিদেশি পর্যটক কম দেখা মিলে। এই সমুদ্র আর হোটেল লবি ছাড়া দেখার তেমন কিছু না থাকার কারণে দেশি পর্যটক কমতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তারা মনে করেন, এই কক্সবাজারে বিনোদনের জন্য পর্যটক আসে ঠিক সেইভাবে কক্সবাজারকে সাজাতে হবে। এখন যানজট আর কোলাহলে ভরা শহরে পরিণত হয়েছে, যার কারণে বিশেষ দিন ছাড়া পর্যটক থাকে না।

তবে বিশেষ দিন ও সরকারি ছুটির দিনে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম হলেও এরপর তেমন পর্যটক কক্সবাজারে আসে না। অন্যদিকে  সপ্তাহে তিনদিন বেশ পর্যটক থাকলেও বাকি চারদিন কাটাতে হয় পর্যটকশূন্য। আর এই তিন দিনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীরা তাদের গলাকাটা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। 

সম্প্রতি জেলা প্রশাসন বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে হোটেল-মোটেল জোনের বেশ কয়েকটি হোটেলকে জরিমানা করা হয়েছিল ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণে।

সপ্তাহে তিন দিন ব্যবসার কারণে পর্যটন এলাকার হোটেল মোটেল জোনের সবকিছুর দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সপ্তাহে চার দিন বসে থাকতে হয়, তিন দিন ব্যবসা হয়, তা দিয়ে চলতে হয়। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবাররের টানা তিন দিনের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক এখন কক্সবাজারে অবস্থান করে। তবে এখন বর্ষাকাল হওয়ার কারণে তেমন পর্যটক নেই। বর্ষাকাল ছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির কারণে পর্যটকের ঢল নামে কক্সবাজারে। এখন বর্ষার কারণে বালিয়াড়িতে পর্যটকের পা পড়বে না। চারদিন পর্যটকশূন্য থাকবে। এদিকে পর্যটক সমাগম হলে বাস-ফুটপাতে রাত কাটালেও শৌচাগারটি না থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয় পর্যটকদের। পাবলিক টয়লেট পর্যাপ্ত না থাকার কারণে হয়রানির শিকার হতে হয়। 

পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পরিবহণগুলো করছে ইচ্ছেমতো ভাড়া। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমদ্রসৈকতের গৌরব বহনকারী কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, হোটেল-মোটেলগুলোতে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত রুম ভাড়া আদায় করছে। আগে যে রুম ভাড়া ১ থেকে ২ হাজার টাকা ছিল, এখন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে বাড়ছে পরিবহন, খাবারের দাম। পাহাড়, নদী ও বালিয়াড়ির অবিচ্ছিন্ন সৈকতের অপূর্ব মিলনের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার কক্সবাজারকে বলা হয়ে থাকে দেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ কাটাতে প্রতিদিন ভিড় জমান হাজারো  থেকে লাখো পর্যটক। কিন্তু এই সমুদ্র শহরে সমুদ্র সৈকত, স্নান, হিমছড়ি-ইনানী সৈকতে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া কি এমন সুবিধা রয়েছে?

এমন প্রশ্নের মারপ্যাঁচে ২৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয়েছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী নেতা, পর্যটকসহ সাধারণ মানুষ বলছে, এখানে সৈকত ছাড়া পর্যটকদের বিনোদনের জন্য গড়ে ওঠেনি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত কোনো পার্ক, নেই অ্যামিউজমেন্ট জোন কিংবা বৈদেশিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করার আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থা। এতে বহুমুখী অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনা আর কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে থমকে আছে পর্যটনের বিকাশ।  

যদিও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ ভ্রমণকে নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশেও সরকারের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসময় শীতের আগে-পরে কক্সবাজার পর্যটনের আনা-গোনা হিসেবে ধরা হতো পর্যটন মৌসুম। কালের পরিক্রমায় এই ধারণা বদলে গেছে। এখন পুরো বছরজুড়েই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত দেখতে কম-বেশি পর্যটকের আনা-গোনায় মুখরিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে ছুটির দিনসমূহে পর্যটকে মুখরিত থাকে পর্যটনস্পটও।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। ঢেউয়ের উত্তাপ না থাকলেও মুক্ত আকাশের নিচে হাসিতে মেতে উঠেন তারা। বালিয়াড়ি থেকে বার্মিজ পণ্যের দোকান, সব জায়গায় পর্যটকের পদচারণায় মুখর।

গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্বস্তির খোঁজে আর নোনাজলে পা ভেজাতে ঢেউয়ের উত্তাল শহরে ভিড় জমান দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। সৈকতে মেলে শান্তির ছোঁয়া। বালিয়াড়িজুড়ে চলে ঘোড়ায় চড়া, বিচ বাইক রাইড আর ফটোসেশনের উৎসব। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠেছেন নোনাজলের আনন্দে।

পর্যটক হায়দার আলী বলেন, “সাগরপাড়ে আসলেই মনটা উদার হয়ে যায়। মন-মানসিকতা পুরোটায় পরিবর্তন হয়ে যায়। এখানে যে স্বস্তি পাওয়া যায় তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই বারবার কক্সবাজার ছুটে আসি, ছুটি পেলেই।” বালিয়াড়িতে ঘুরতে আসা রিয়াদুল ইসলাম বলেন, “সাগর আর বালিয়াড়ি খুবই পছন্দের। তাই পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজার এসেছি। এখানে বালিয়াড়িতে খেলা করা আর নোনাজলে গোসল করার মজাটাই আলাদা।”

রুনা আক্তার বলেন, “সাগরে আসলে মনে হয় সংসার জীবনের সব ক্লান্তি মুছে গেছে। মনে হয় অন্য জগতে আছি। খুবই ভাল লাগছে সাগরে।”

তবে সৈকতের ফটোগ্রাফার কিংবা কিটকট ব্যবসায়ীরা নানাভাবে হয়রানি করছে অভিযোগ পর্যটকদের। 

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে কিটকটে বসেছি সকাল ১০টায় আর এক ঘণ্টা না পেরোতেই কিটকটের ছাতাটা সরিয়ে ফেলে বাজে ব্যবহার শুরু করে এবং অতিরিক্ত টাকা দাবি করে ব্যবসায়ী। এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আরেক পর্যটক রবিউল ইসলাম বলেন, ফটোগ্রাফারকে ছবি তুলতে বলেছি ১০০ টার মতো। কিন্তু সে ছবি তুলেছে ৫শ বেশি। এখন এই ছবি তোলা নিয়ে তর্কা-তর্কি করতে হয় ফটোগ্রাফারের সঙ্গে, আর ৩শ ছবি না নেয়া পর্যন্ত পিছুই ছাড়েনি।

তবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সৈকতের তিনটি পয়েন্টে জোরদার করা হয়েছে লাইফগার্ড সেবা।

সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফগার্ড মনঞ্জুর হাসান রাজু বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। তাই ৩টি পয়েন্টে লাইফ গার্ড কর্মীরা নিয়োজিত রয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। আর সীগাল পয়েন্টে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে, যাতে পর্যটকরা ওই পয়েন্ট দিয়ে সমুদ্রস্নান করতে না পারে।

হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজের জিএম ইয়াকুব আলী ও সী-ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুরসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজারে ২৪ ঘণ্টাই বিনোদন উপভোগের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কিন্তু পরিকল্পনা, উদাসীনতা ও উদ্যোগের অভাবে পর্যটনের বিকাশ সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এই শিল্পের বিকাশেও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের উদ্যোগও প্রশাসনিক নানা জটিলতার কারণে ভেস্তে যাচ্ছে। এতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ থমকে আছে বলে মন্তব্য তাদের।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, ‘কক্সবাজারকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা হাতছানি দিলেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে তা তিমিরেই পড়ে আছে। বিশ্বমানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শুধু সমুদ্র নয়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জরুরি।’

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কক্সবাজারের পর্যটন সৈকত ও সাগরকেন্দ্রিক। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে পর্যটনকে বহুমাত্রিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারলে কক্সবাজার আন্তর্জাতিকমানের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় বীজ বিক্রিতে অনিয়মের দায়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
শ্রীপুরে ইভটিজিং ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্কুলছাত্রের ছুরিকাঘাত, আহত ৬
শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে না লড়ার সিদ্ধান্ত জেডআই খান পান্নার
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ১২.৫ ডিগ্রি
মোহনপুরে বিএসটিআই লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

সর্বাধিক পঠিত

ইয়ুথ ফোরামের নবনির্বাচিত কমিটিকে ব্যারিস্টার খোকনের বরণ
পাটগ্রাম উপজেলায় সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারে 'চতুরবাড়ী বিওপি'র যাত্রা
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প
নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
দুই ট্রলারসহ সেন্টমার্টিনে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close