রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানি টোলার একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়েদ রহমানের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি জবি শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সদস্য।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে স্থানীয়রা তার মরদেহ দেখতে পেয়ে বংশাল থানাকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার খবর পেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও লালবাগ জোনের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আরমানিটোলার নূর বক্স লেনে জুবায়েদ রহমানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। যে ভবনের সিঁড়িতে তার লাশ পাওয়া যায় সেই ভবনেই টিউশনি করতেন জুবায়েদ রহমান। আমরা তদন্ত করছি।’
একটি সূত্র বলেছে, জুবায়েদের ছাত্রীর নাম বর্ষা। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। পড়াতে আসার আগে কখন আসবে আর কোথায় জুবায়েদকে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয় ছাত্রী। মারা যাওয়ার পর জুবায়েদের রুমমেটকে ফোন দিয়ে জানায়। ছাত্রী কীভাবে তার স্যারের রুমমেটের নাম্বার পেলো এ প্রশ্ন করেছেন জুবায়েদের সহপাঠীরা।
জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত জুবায়েদ বর্ষাকে পড়াতো গত এক বছর ধরে। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি পড়াতো বর্ষাকে। গতকাল পড়ানোর জন্যই ছাত্রীর বাসায় যাচ্ছিলো। এর আগে বিকালে ছাত্রী জুবায়েদকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে স্যার আজ পড়াতে আসবেন? জুবায়েদ তখন বলেন হ্যাঁ পড়াতে আসতেছি। এ নিয়ে ছাত্রী একাধিকবার জুবায়েদকে ফোন দেন এবং বার বার তার লোকেশন দেখেন। হত্যাকাণ্ডের পর এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্ষাকে জেরা করেছে। এসময় পুরো আলাপে ছাত্রীর মাকে উদ্বিগ্ন দেখালেও মেয়েটির মধ্যে এরকম কিছু চোখে ধরা পড়েনি বলে শিক্ষার্থীরা জানান।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বর্ষাদের বাসা ৫ তলায়। রক্ত ৩ তলা থেকে নিচ তলার সিঁড়ি পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঘটনার খবর পেয়ে জুবায়েদকে হত্যা ঘটনার দুইজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডে ছাত্রী এবং ছাত্রীর বয়ফেন্ডের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। বর্ষাকে দুজন টিউশন করাতো। একজন তার বয়ফেন্ড আরেকজন জুবায়েদ। নিহত জুবায়েদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়।
এদিকে জুবায়েদ নিহতের ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহপাঠীরা দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। পুলিশ আমাদেরকে বলেছেন তারা ইতোমধ্যে দুইজনকে শনাক্ত করেছেন।’
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, ‘কোতোয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুল হক ও বংশার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ওই ভবনের ৫ম তলায় থাকা ছাত্রীর পরিবারকে (রিপোর্ট লেখাকালীন সময় পর্যন্ত) জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলে জানা গেছে।’
কেকে/এজে