মৌলভীবাজারে হাওরাঞ্চলে অপরিকল্পিত সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের প্রতিবাদে কৃষক, শ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
হাওর রক্ষা আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলার আহ্বায়ক আসম সালেহ সোহেলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ধরার সিলেট জেলা সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম, হাওর রক্তা আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলার সদস্য সচিব এমএ খসরু চৌধুরী, হাওর রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মো. খায়রুল ইসলাম, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রভাষক মোহাম্মদ সেলিম।
হাওর রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ শাহিন ইকবালের সঞ্চালানায় বক্তব্য দেন মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, রওশন আহমদ, কাউয়াদিঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি শামসুদ্দিন মাস্টার, পূবের হাওর কৃষকদের প্রতিনিধি আব্দুস সুবহান, মাওলানা মহসিন আজহার, শামিমুর রহমান, গোলজার মিয়া প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার ৪ নম্বর আপার কাগাবালা ইউনিয়নের আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া গ্রামসহ আশপাশের ১৫ হাজার কৃষক-মৎস্যজীবীর মিঠাপানির মাছ, ভাত ও কৃষিজ ফসল উৎপাদনের চাহিদাপূরণ করছে ‘পূবের হাওর’ নামের হাওরটি। যুগযুগ ধরে এ এলাকার প্রায় আড়াই হাজার কৃষক-মৎস্যজীবী পরিবারের জীবন-জীবিকা এই হাওরের উপর নির্ভরশীল। উল্লিখিত তিন গ্রামের মানুষের কৃষিজ উৎপাদনে এ পূবের হাওর-ই একমাত্র হাওর।’
তারা আরও বলেন, ‘পূবের হাওরের ১০০ একর ফসলী ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘মৌলভীবাজর সোলার পিভি পার্ক’ নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে চিরতরের জন্য পূবের হাওরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ফসলী জমির কৃষিজ উৎপাদন হারিয়ে গেছে। অথচ, এ হাওরের জমিতে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে রাবার ড্যাম্প প্রকল্প করে স্থানীয় গোপলা নদী থেকে শীত মৌসুমে হাওরে পানির ব্যবস্থা করেছিলেন।’
তারা বলেন, ‘পূব-হাওরে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে এতো বেশি পরিমাণ কৃষি জমির অপচয় হবে বলে আমরা কৃষকরা বুঝিনি। তাছাড়া কোম্পানির লোকেরা সৌরবিদ্যুত স্থাপনের আগে স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষক-মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাছে প্রচার করতো যে, সৌরবিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনে ধান-মাছ চাষের কোনোরূপ ক্ষতি হবে না। তাদের আশ্বাসে ভরা কথাগুলো এখন মিথ্যা প্রমাণ হচ্ছে। অর্থাৎ সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের দখলী ভূমিতে ধান, মিঠাপানির প্রাকৃতিক মাছ বা অন্য কোনো ফসলের চাষাবাদ হবে না।’
‘এ অবস্থায় এই পূব-হাওরের এক তৃতীয়াংশ কৃষিজ ভূমি কৃষি-কাজের জন্য অকার্যকর করার পরেও আমরা শুনেছি, হাওরের বাকি দুই তৃতীয়াংশ কৃষি জমি জুড়ে আরও ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প করা হবে এবং সাথে হাওর ভরাট করে নানা ধরনের শিল্প কারখানাও হবে। তার মানে হলো এই পূবের হাওরের কৃষিজ উৎপাদন, জলজ উদ্ভিদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। হাওরকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহকারী কষক মৎস্যজীবী কর্মহীন হবে এবং এলাকার বনেদী কৃষক পরিবারগুলোও ১২ মাস কিনে খেতে হবে। এলাকার মানুষের জীবন-যাপন ও জীবন-জীবিকার অংশ ‘পূবের হাওর’-এর বাকি অংশ বাঁচাতে ‘পূবের হাওরে’ ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন প্রতিরোধ করতে হবে।’
কেকে/ এমএ