শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫,
১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: কারওয়ান বাজার ও মগবাজারে অগ্নিকাণ্ড      নির্বাচনি কার্যক্রম শুরুর আগেই পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছি      শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা শুরু      বন্যা-ভূমিধসে শ্রীলঙ্কায় নিহত ৪৪      দুদকের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ      বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ      ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’      
খোলাকাগজ স্পেশাল
আরাকান আর্মি-রোহিঙ্গা সংঘাত
নিরাপত্তা হুমকিতে দেশ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:৩৬ এএম আপডেট: ০৭.১০.২০২৫ ১২:৩৯ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেই থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশ। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যকার সংঘর্ষ, খুন, গুম ও অপরাধচক্রের কর্মকাণ্ডে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে শরণার্থী শিবিরগুলো। 

তবে এবার আগের সব সংকটকে ছাড়িয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তীব্র সংঘাত শুরু হয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজার এই দুই জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানচি, রুমা এবং উখিয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর এই সংঘাত সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তাদের মতে, যদি এই সংঘাত সীমান্ত অতিক্রম করে, তবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ এতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি গুরুতর হুমকির মুখে পড়বে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্য, পরিস্থিতি যদি এখনই সামাল না দেওয়া যায়; তাহলে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর এই যুদ্ধ ধীরে ধীরে গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। এই যুদ্ধে যোগ দেবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। এতে আরাকান আর্মির পক্ষ নেবে পাহাড়িরা। আর সেনাবাহিনী নেবে রোহিঙ্গার পক্ষ। আরাকান পাবে ভারতের সাহায্য আর রোহিঙ্গারা পাবে মার্কিন সমর্থন। আর এভাবেই বাংলাদেশ একটা যুদ্ধের ময়দান হয়ে উঠবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভারী অস্ত্রের গুলি বিনিময় ও বিস্ফোরণের শব্দ সীমান্ত থেকেও শোনা যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে গোলাগুলির আলোর ঝলকানি। এতে সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সীমান্তজুড়ে টহল ও নজরদারি জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি সদস্যদের বলা হয়েছে, অনাকাক্সিক্ষত যে কোনো পরিস্থিতি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে।

বিজিবি সূত্র বলছে, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ৪ নম্বর কুরুকপাতা ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের লংপংপাড়া ও বুচিডং এলাকায় আরাকান আর্মি (এএ) এবং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসওর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়। শনিবার সকাল ৮টা থেকে গোলাগুলির তীব্রতা বাড়ে বলে সীমান্তবর্তী গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা জানিয়েছেন।

সীমান্তবর্তী ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন জানিয়েছেন, সীমান্ত পিলার ৫৫ ও ৫৬-এর মধ্যবর্তী এলাকায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে টানা গোলাগুলি চলছে। ৪ অক্টোবর আরসা ও আরএসও যৌথভাবে ‘ওয়াই হ্লান’ নামের একটি আরাকান আর্মি ক্যাম্পে হামলা চালালে এএ-এর কয়েকজন সদস্য নিহত হন। তবে তারা ক্যাম্পটি দখল নিতে ব্যর্থ হয়। এখনো সেখানে আরাকান আর্মির পতাকা উড়ছে।

স্থানীয় কামলাই ম্রো বলেন, আরাকান আর্মিকে হটাতে আরসা-আরএসওর সঙ্গে সীমান্তবর্তী কিছু স্থানীয় গোষ্ঠীও সহযোগিতা করছে। কিন্তু এখনো ওয়াই হ্লান ক্যাম্পটি তারা দখল নিতে পারেনি।

কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো জানান, সীমান্তের ওপারে এখনো আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ বজায় আছে। তবে আরসা, আরএসও এবং স্থানীয় কিছু গোষ্ঠী মিলে যুদ্ধ চালাচ্ছে। এই সংঘর্ষের কারণে সীমান্তবর্তী অনেক ম্রো পরিবার বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে।

তিনি আরো জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে নারী ও শিশুসহ প্রায় ২০০ ম্রো বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে বিজিবি তাদের পুশব্যাক করে।

রামু ব্যাটালিয়নের (৩০ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্ত পিলার ৫৫ ও ৫৬-এর মাঝামাঝি জিরো পয়েন্ট থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে লংপংপাড়া ও বুচিডং এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে হতাহতের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং অনাকাক্সিক্ষত যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে গত রোববার সকালে টেকনাফের হোয়াক্যং সীমান্ত দিয়ে একজন আহত রোহিঙ্গা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। একইসঙ্গে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত দিয়েও আরো চারজন আহত রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছেন। তারা কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা নিশ্চিত করা না গেলেও, নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিজিবি সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানচি, রুমা ও উখিয়া সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাস ও পাচার রোধে পুলিশ ও বিজিবির যৌথ টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় মাইন সচেতনতামূলক কার্যক্রম, জরুরি চিকিৎসা সহায়তা ও তথ্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তুমব্রু, চাকমাপাড়া, ঘুমধুম ও হোয়াক্যং সীমান্ত এলাকার মানুষ বর্তমানে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তারা রাতে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহিদুজামান বলেন, এটা মনে রাখতে হবে যে আরাকান আর্মি কোনো সংঘবদ্ধ দায়িত্বশীল সংগঠন নয় এবং তারা সেন্ট্রাল তাটমাদর নিয়ন্ত্রণে নেই। তারা তাটমা থেকে আলাদা হয়ে দুর্ধর্ষ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে আমাদের সেনাবাহিনীর যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে। 

আগেরকার মতো ভিক্ষাবৃত্তি আর দয়ার ওপরে এরা নির্ভর করে না। সুতরাং এদেরকে যদি আমরা পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই অঞ্চলটা- পুরা কোস্টাল এরিয়াটা খুব সহজেই দখল করে নিতে পারে। 

সার্বভৌম দেশে আমরা হামলা করে দখল করে নেব এই আলোচনায় আমরা না যাই। কিন্তু আমরা যে ঝুঁঁকিতে আছি। আমাদের নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করতে হবে। এরকম দায়িত্বহীন আচরণ তো ওরা করছে। আমাদের দোষারোপ করছে যে- কেন আমরা ওই আরাকান দখল করে নেব। আমরা কিছুই করিনি তারপরও কিন্তু তাটমাদা বাংলাদেশকে দোষারোপ করছে। 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  নিরাপত্তা   হুমকি   দেশ   আরাকান আর্মি   রোহিঙ্গা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

কারওয়ান বাজার ও মগবাজারে অগ্নিকাণ্ড
নেতৃত্বের অযোগ্যতায় পিছিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম: সাদিক কায়েম
কুমিল্লায় কাফনের কাপড় পরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ
সমাজ পরিবর্তনে যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে: তাওহিদুল ইসলাম
খুলনায় পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতির মতবিনিময়

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল
চাঁদপুর-২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা রয়েছে: তানভীর হুদা
বন বিভাগে সুফল প্রকল্পে দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দাম্ভিকতা
সোনাইমুড়ীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা
খুলনায় পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতির মতবিনিময়
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close