কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে রাতে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকালে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। রাতে ব্যারাজ রক্ষায় ফ্লাড বাইপাস কেটে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের লাখো মানুষ।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বেলা ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১০ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার নিচে। গেল রাতে পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩ দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। রোববার সকাল থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১২ ঘন্টার ব্যাবধানে ৮০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সন্ধ্যা ৬ টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা ক্রমেই বেড়ে গিয়ে রাতে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তাপাড়ে রেডএলার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অতিরক্ত পানির চাপ নিয়ন্ত্রন করতে ফ্লান্ড বাইপাস কেটে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে। ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের। ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কিছু অংশ বন্যার কবলে পড়ে।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটে ৫টি উপজেলার তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষ। পানির চাপে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বিশেষ করে আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্প্যার বাঁধ ২ এর ব্রীজ অংশের নিচে সুরঙ্গ হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বাঁধটি ধ্বসে যাবারও শ্বঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বেশ কিছু রাস্তা ঘাট সড়ক ডুবে গেছে। দোয়ানি গড্ডিমারী সড়ক উপচে নতুন নতুন এলাকায় ডুকে পড়েছে বন্যার পানি। সময়ের সাথে বাড়ছে পানিবন্দি এলাকার সংখ্যা। নিদারুন কষ্টে পড়েছেন পানিবন্দি পরিবারগুলো। বিশেষ করে শিশু বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধিদের নিয়ে বড্ড বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। চার দিকে শুধু পানি আর পানি। গবাদি পশুপাখি নিয়ে বেশ বিপদে পড়েছেন খামারিরা। কেউ কেউ এসব পশুকে পাশে সড়কে বা উচু এলাকায় তাবুর নিচে রেখেছেন। উচু স্থানে মাচাং বানিয়ে চলছে রান্না। টিউবয়েল টয়লেট ডুবে যাওয়ায় শৌচকাজে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছেন এসব এলাকার নারীরা। ডুবে গেছে মৎস খামাড়, আমন ধানসহ নানান জাতের সবজির খেত।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর রেকর্ড করা হয়েছে। রাতে তা বেড়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকালে নিচে নেমে আসে। সোমবার সকাল ৯ টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচে।
সিন্দুর্না এলাকার রইচ উদ্দিন বলেন, বাড়ির উঠানে কোমড় পানি। রাতে ঘুমাতে পারিনি। শিশুদের কোলে নিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। কখন কোনো সন্তান বিছানা থেকে পড়ে পানিতে ডুবে যায়। সে আতংকে রাত কেটেছে।
গোবর্দ্ধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, হুহু করে আসছে পানি। সবখানে পানি আর পানি। মধ্য বয়সি আমন ধানের খেতসহ ফসল ডুবে নষ্ট হচ্ছে। পুকুর ডুবে ভেসে যাচ্ছে মাছ।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে রাতে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও সকালে কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। বৃষ্টির পানি থাকায় বন্যার পানি নেমে যেতে একটু সময় লাগছে। তবে উজানের চাপ কমে যাওয়ায় বিকালে জেলার বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
কেকে/ এমএস