পরিচর্যার অভাবে বেশিরভাগ গাছের চারা মরে যাচ্ছে। কোথাও চারা মাথা তুলে দাঁড়ালেও গরু-ছাগল তা খেয়ে ফেলছে। আবার কোথাও চারার অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি জঙ্গলের কারণে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন বলছে, ৪০ শতাংশ গাছের চারা নষ্ট হয়ে গেছে।
বনায়নের এ চিত্র কক্সবাজারের আট উপজেলায় বন বিভাগের নেওয়া সবুজ বেষ্টনী সৃজন প্রকল্পের। ২০১৯ সালে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলায় ‘সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার ও ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন’ শিরোনামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বন বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালীতে বৃক্ষরোপণ করা হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় হিমছড়ি ও মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে।
ছবি: খোলা কাগজ
তবে পরিচর্যার অজুহাতে কোন ধরনের কাজ না করে লাখো টাকা উঠিয়ে মিলেমিশে লুটপাট করেছে বলে জানা গেছে। ২০২৩-২৪ সালের ৯৯০ হেক্টরের বনায়ন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা উত্তোলন করা হলেও কাজের বেলায় তেমন কিছু নজরে আসেনি প্রতিবেদকের। গত সোমবার কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের টেংখালী, দোছড়ি, মছুরখোলা ভালুকিয়াসহ বেশ কয়েকটি বনায়ন ঘুরে এমন চিত্র নজরে এসেছে প্রতিবেদকের। তবে সাবেক উখিয়া রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, ৯৯০ হেক্টরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করা হয়েছে। এখন আবার হয়তো জঙ্গল উঠে যেতে পারে।
এদিকে সাধারণ মানুষ জানিয়েছে উখিয়া রেঞ্জের ২০২৩-২৪ বছরে টেংখালি বিটে ৩০০ হেক্টর, দোছড়ি ২৯০ হেক্টর, উখিয়া বিটে ১৯০ হেক্টর, মছুর খোলা বিটে ১৯০ হেক্টর, ভালুকিয়াতে ২০ হেক্টর বনায়ন করা হয়। এবছর এসব বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি হেক্টরে তিন হাজার ৫০০ টাকা করে ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হলেও বাগানগুলোতে কোনো ধরনের কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।
কোনো ধরনের কাজ না করে লাখ টাকা উঠিয়ে কোথায় ব্যবহার করেছেন তা জানতে ফোন করা হলে তৎকালীন রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম জানান, আমি কাজ করেছি। আবারো হয়তো জঙ্গল হয়ে গেছে। এদিকে স্থানীয় সাধারণ মানুষের প্রশ্নÑ এত বড় একটা বাগান যদি কাজ করা হতো, তবে কাজ করার জন্য শ্রমিক নেওয়া হতো। কিন্তু বনবিভাগ কোনো ধরনের শ্রমিক নিতে নজরে আসেনি। অন্যদিকে বাগান যদি পরিষ্কার করা হতো, তবে এত তাড়াতাড়ি জঙ্গল হওয়ার কথা নয়।
এদিকে ২০২৫-২৬ সালের ৩২৫ হেক্টর বাগান হোস্ট কমিউনিটি হেল্প প্রজেক্ট থেকে করা হলেও সেখানেও অনিয়ম রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
জানা যায়, এ অর্থবছরে মোছারখোলা বিটে ১৫০ হেক্টর থাইংখালী বিটে ১০০ হেক্টর দোছড়ি বিটে ৫০ হেক্টর, ওয়ালাপালং বিটে ২৫ হেক্টর বাগান করা হয়েছে। শ্রমিক থেকে শুরু করে অনেকেই জানিয়েছে প্রতি হেক্টরে দুই হাজার ৫০০ করে ৩২৫ হেক্টর বাগানে আট লাখ ১২ হাজার ৫০০ চারা রোপণের কথা। সেখানে তার পরিদর্শনকৃত কিছু জায়গায় ভালো চারা রোপণ করা হলেও অন্যান্য জায়গায় ৫০ শতাংশ চারাও রোপণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শাহিনুল ইসলাম জানান, কিছু কাজ করে ট্রেনিংয়ে আসার কারণে বাকি কাজ বর্তমানে দায়িত্বরত রেঞ্জ কর্মকর্তার অধীনে হয়েছে। আমি এরপর খবর রাখিনি যেহেতু আমি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।
সামগ্রিক বিষয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, আপনার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।