ভোলার মেঘনা নদীতে জেলেদের নিরাপত্তা ও ইলিশ সম্পদ রক্ষা করার জন্য নৌপুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে রক্ষকই ভক্ষক হিসেবে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন অভিযানের নামে চাঁদাবাজি আর জাল লুটের ঘটনায় দিশেহারা মেঘনার পাঁচ লাখ গরিব জেলে। ভোলা সদর, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, বোরহান উদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী জেলেরা রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমরা গরিব জেলেরা যাব কোথায়? গত মঙ্গলবার সকালে হাকিম উদ্দিন নৌপুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম স্পিডবোট নিয়ে নদীতে নেমে সোজা চলে যান নাছির মাঝি এলাকার মেঘনায়। সেখান থেকে ১৬ হাজার মিটার জাল এবং একটি নৌকাসহ ৬ জন জেলেকে আটক করে নিয়ে যান হাকিমদ্দিনের একটি নির্জন স্থানে। জালে মাছের পরিমাণ কত ছিল তা জানতে পারেনি কেউ। স্ত্রীর কানের পাশা বিক্রি করে ছয় জেলেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে এবং জালগুলো গোপনে দালালদের মাধ্যমে অন্য জেলেদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী জেলেরা।
গতকাল বুধরার দুপুরে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় ২২ দিন মা ইলিশসহ সব প্রকার মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ভুক্তভোগী জেলোরা জানান, মেঘনায় গত দুই মাস জেলেরা কোন মাছ পাননি। বিভিন্ন এনজিও, মহাজন এবং ব্যক্তিগত লোকদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সংসার পরিচালনা করতে হয়েছে তাদের। ধার-দেনা করে মাছের আশায় জাল নৌকা নিয়ে নদীতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের। গত ৪-৫ দিন নদীতে কিছু মাছ ধরা পরতে শুরু করেছে, তাও পর্যাপ্ত নয়। তার পরেও যা পাওয়া যায় তা দিয়ে খেয়ে পরে টিকে আছে তারা।
মঙ্গলবার সকালে হাকিমদ্দিন নৌ ফাঁড়ির একটি টিম মেঘনায় নেমে তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে সদরের নাছির মাঝি এলাকার মেঘনায় জেলেদের নৌকা-জাল আটকিয়ে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি করেন। আটক করে ছয় জেলেকে এবং নদীতে ফেলানো ১৬ হাজার মিটার জাল তুলে নিয়ে যান। একদিনে প্রায় দুই শতাধিক নৌকা থেকে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। আটক ৬ জেলে থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। তা ছাড়া নৌপুলিশকে মাসিক একটি নৌকা দুই হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা তোলার জন্য আলাদা মাঝি রয়েছে বলে জানান জেলেরা। টাকা না দিলে তাদেরকে নৌকা-জাল মাছ সব হারাতে হয় এবং জেল জরিমানাও গুনতে হয়। কোথাও অভিযোগ করলে তাদের ডাকাত সাজিয়ে কোটে চালান করা হয়। ভয়ে তারা এসব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে আসছেন। বাধ্য হয়ে নৌপুলিশে যেমনে নাচায় তারাও তেমনে নাচে। মেঘনায় কোনো জলদস্যু নাই, নৌপুলিশই এখন সব।
ভোলা জেলায় নৌপুলিশের ইলিশায় ওসি শাহিন উদ্দিন ১টি থানা, ওসি সনাতন-তজুমদ্দিনের হাকিম উদ্দিন ও ওসি সুকল্লান-চর কুকরিমুকরি ২টি ফাঁড়ি দীর্ঘ বছর পরিচালনা করেন। তারা ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া এবং সাগর মোহনা নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রায় সময় নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও আলেক জেন্ডারের নৌপুলিশের টিম ভোলার অংশে প্রবেশ করে নৌকা-জাল এবং জেলেদের আটক করে নিয়ে জেল-জরিমানা এবং চাঁদা আদায় করে বলে জেলেরা জানান। এখন রাষ্ট্রের কাছে তাদের প্রশ্ন মেঘনার পাঁচ লাখ গরিব জেলে যাবে কোথায়।
ইলিশা নৌপুলিশ থানার ওসি শাহিন উদ্দিন জানান, নৌপুলিশ টিম কোন সময় কোন এলাকার মধ্যে প্রবেশ করে তা সীমানা না দেখে বলা যাবে না। হাকিমউদ্দিনের পুলিশ ফাঁড়ির ওসি সনাতন জানান, আমি ছুটিতে রয়েছি, (৩০ সেপ্টন্বর) মঙ্গলবারের বিষয়ে কিছুই জানি না।
তার থানায় দায়িত্বে থাকা এস আই আশরাফ জানান, আমরা মঙ্গলবার নাছির মাঝি এলাকার মেঘনা থেকে পরিত্যক্ত ১৬ হাজার মিটার জাল তুলে এনেছি। তার পরে তিনি আর কোন উত্তর দিতে পারেননি।
নৌপুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিনের অফিস বরিশাল থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা নৌপুলিশের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
কেকে/এআর