মাত্র পাঁচ দিন আগেই ব্যর্থ এশিয়া কাপ মিশন শেষ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ফাইনালের পথে এগোতে পারেনি লিটন দাসের দল। সুপার ফোরে লিটনের দল কেবল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেছিল। ভারত ও পাকিস্তানের কাছে পরাজয়ে শেষ হয়ে যায় তাদের এশিয়া কাপ মিশন। তবে এসব ছাড়িয়ে আলোচনায় লিটনদের বোর্ডের নির্বাচন।
বর্তমানে দেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন পরিচালক পর্ষদ নির্বাচন। আগামী ৬ অক্টোবর বিসিবির নির্বাচন। যেখানে ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলরদের ভোট প্রদান এবং প্রার্থীতা বাতিল নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। ক্লাবগুলোরও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
নির্বাচন নিয়ে গতকাল হলো আরেক নাটকীয় মোড়! নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে অন্তত ১০-১৫টি ক্লাবের প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্র। তারা আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। এ ব্যাপারে গতকাল রাতে জরুরি সভায় বসে ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা।
এক ক্লাবের পরিচালক পদপ্রার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, বিসিবি নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে ১৫টির মতো ক্লাবের প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পরিচালক পদপ্রার্থী আরেক সদস্য বলেন, ১৫টি ক্লাব নাটক করবে এটা তো কারো কাম্য না। গতকাল বন্ধ করে রাখল। প্রথমে বোর্ডে একবার উঠাল সভাপতি, এরপর তো এটা ইসি কাউন্সিলরশিপ দেওয়া থেকে বিরত থাকল। পরে ওটাও পাস হলো, তারপর কাউন্সিলরশিপ দিল। আবার রিট করে বন্ধ করে দিল, অথচ আজ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে। তার আগে এটা কেমন দেখা যায়। সব মিলিয়ে ১৫টি ক্লাবের মতো প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে।
এর আগে গতকাল বিকালে তৃতীয় বিভাগ বাছাই থেকে উঠে আসা বিতর্কিত ১৫টি ক্লাবের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এতে ৬ অক্টোবরের নির্বাচনে এই ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরদের ভোট প্রদান এবং প্রার্থী হওয়ার পথে বাধা তৈরি হলো। বিতর্কিত ১৫ ক্লাবের দুটি ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমি ও এক্সিওম ক্রিকেটার্স থেকে বিসিবির পরিচালক পদে নির্বাচন করার কথা ছিল বর্তমান বোর্ডের মিডিয়া কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমান ও বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরুর।
নাজমুল হাসান বিসিবি সভাপতি থাকার সময় বিতর্কিত ১৮টি ক্লাব লিগ না খেলেই তৃতীয় বিভাগ বাছাই পার হয়েছিল। তিনটি ক্লাব পরে আবার তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে নেমে যাওয়ায় এদের মধ্যে কাউন্সিলর হওয়ার মতো ক্লাব ছিল ১৫টি। কিন্তু গত ১৩ আগস্ট দুদকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রকাশ্য অনুসন্ধানেরও সুপারিশ করে তারা।
এ কারণে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের দেওয়া খসড়া ভোটার তালিকায় এই ১৫টি ক্লাবকে রাখা হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে আপিলের সুযোগ ছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শেষে পরদিন বিতর্কিত ১৫টি ক্লাবকে রেখেই ঘোষণা করা হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, অভিযোগ প্রমাণিত না হলে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। অভিযোগ যেহেতু এখনো প্রমাণিত হয়নি, তাদের যেন নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনও সেটি বিবেচনা করেই তাদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় রেখেছিল।
যদিও সূত্র জানিয়েছে, এই ১৫টি ক্লাবকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় রাখার পেছনে কাজ করেছে সরকারপন্থিদের সঙ্গে বিএনপিপন্থিদের বিশেষ সমঝোতা। তাতে ঠিক হয় ক্লাব ক্যাটাগরির ১২টি পরিচালক পদের তিনটি সরকারপন্থিদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। বাকি ৯টি পদ পাবেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালসহ বিএনপিপন্থিরা।
কিন্তু এই সমঝোতার কারণে ক্লাব সংগঠকদের প্যানেলে থাকার পথ সংকুচিত হয়ে যায়। বিএনপির চারজন নেতার ছেলেকে সুযোগ দিতে গিয়ে কয়েকজন প্রকৃত ক্লাব সংগঠককে বাদ দিয়ে ৯ জনের প্যানেল করার চিন্তা করেন তামিম ইকবাল। ক্লাবগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করে এই সিদ্ধান্ত। বাদ পড়া পরিচালকরা তখন এককভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন, ক্ষুব্ধ ক্লাব কাউন্সিলরদের অবস্থান চলে যায় তামিমদের বিপক্ষে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে আবারো সভায় বসেন ক্লাব সংগঠকরা। ক্রীড়া উপদেষ্টাকে তারা জানিয়ে দেন, ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে তিনটি পদ ছাড়া সম্ভব নয়। ১২টি পদেই নির্বাচন করবেন তামিমপন্থিরা। ক্লাব ক্যাটাগরির কাউন্সিলরদের মধ্যে পরিচালক হয়ে বোর্ডে আসার কথা ছিল ক্রীড়া উপদেষ্টার পছন্দের তিন কাউন্সিলর সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ, আমজাদ হোসেন ও মেজর ইমরোজ আহমেদের (অব.)।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্লাব সংগঠকদের অবস্থান বদলে ক্রীড়া উপদেষ্টাও জানিয়ে দেন, বিসিবির নির্বাচনে তিনি তার মতো এগোবেন। এরপরই গতকাল নির্বাচনে ১৫টি ক্লাবের অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেন ফারুক।
এদিকে শেষ পর্যন্ত বিনা ভোটে বিসিবি পরিচালক হতে পারছেন না দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম। ঢাকা বিভাগ থেকে তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
কারণ, ঢাকা বিভাগে তাদের দুজনার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী এসএম আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ানের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন; কিন্তু আপিল করে নিজের মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পেয়েছেন জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই কাউন্সিলর। ফলে, সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্যানেলের সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও হাই প্রোফাইল প্রার্থী নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়েই বোর্ডে আসতে হবে।
ঢাকা বিভাগে এখন ত্রিমুখী লড়াই হবে। বলে রাখা ভালো, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিভাগ থেকে দুজন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। এখন দেখার বিষয় ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তথা সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্যানেলের সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বুলবুল আর নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সঙ্গে আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ানের ত্রিমুখী লড়াই কেমন জমে ওঠে?
তফসিল অনুযায়ী আজই মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন, একই দিনে প্রকাশ করার কথা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।
কেকে/ এমএস