দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। মাত্র ৭৩ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারায় কৃষকদের মুখে এখন আনন্দের ঝিলিক।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামে দেখা যায়, কৃষক রবিউল ইসলাম বিক্রির জন্য তার মাচা থেকে তরমুজ তুলছেন।
তিনি বলেন, ২০ শতক জমিতে মার্সেলো গোল্ড জাতের তরমুজ চাষ করেছি। মাচা তৈরি ও পরিচর্যায় খরচ হয়েছে প্রায় ২০–২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাঁশের মাচায় গেছে ১৪–১৫ হাজার টাকা, বাকিটা শ্রম, সার ও জৈব বালাইনাশকে। প্রথম দফায় ১৫–১৬ মণ তরমুজ বিক্রি করেছি। প্রতি মণ ২ থেকে ২.৫ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় ভালো লাভ হয়েছে। আরো দুই ধাপে বিক্রি মিলিয়ে ৬০–৭০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছি।
কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হলে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলতি মৌসুমে ৬০ শতক জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের দেওয়া হয়েছে বীজ, সার, ফেরোমন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ও আন্তঃপরিচর্যার জন্য নগদ অর্থ সহায়তা। পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষকরা নিজের উদ্যোগে আরো প্রায় ১ একর ৪০ শতক জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। সব মিলিয়ে উপজেলায় এ মৌসুমে ২ একরের বেশি জমিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ হয়েছে।
গ্রীষ্মকালীন তরমুজ
রানীরবন্দর বাজারের ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আগে দিনাজপুরে তরমুজ বাইরে থেকে আনতে হতো। এখন স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে ৫০–৬০ টাকা কেজি দরে কিনে বাজারে ৮০–৯০ টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে। এতে কৃষক যেমন লাভবান, আমরাও ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, মোট ২ একর ৬০ শতক জমিতে মাচায় তরমুজ আবাদ হয়েছে। কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে সার, বীজ ও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মাচা তৈরিই ছিল সবচেয়ে বড় খরচ। তবে কৃষকেরা যেহেতু লাভবান হয়েছেন, এ উদ্যোগ আগামী মৌসুমে আরো সম্প্রসারিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার বলেন, সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি মাচায় তরমুজ চাষে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষণই এই সাফল্যের মূল কারণ। ভবিষ্যতে আরো নতুন ফসল যুক্ত করে খানসামাকে কৃষিতে সমৃদ্ধ উপজেলায় পরিণত করা হবে।