আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন সরগরম। ভোটযুদ্ধে এগিয়ে থাকতে নানা কৌশল ও পরিকল্পনা সাজাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক ‘ফান্ড’ বা তহবিল সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে দেশের অন্যতম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যা অতিসম্প্রতি দলটির কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যে আরো স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
গত শনিবার রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, যারা আমাদের পছন্দ করেন, ভালোবাসেন এবং আমরা যাদের ভালোবাসি, তাদের নিয়েই আমরা আগামী নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশা করছি। নির্বাচনে বিজয়লাভ করতে হলে শুধু সাংগঠনিক শক্তিই নয়, অর্থনৈতিক সক্ষমতাও থাকতে হবে। তাই আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা আর্থিক কুরবানিসহ সব ধরনের সহযোগিতা করুন। এই সহযোগিতাই আমাদের বিজয়ের পথ সুগম করবে।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর খাস রহমতে সম্প্রতি ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির বিজয়ী হয়েছে। এ বিজয়ে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, এই বিজয়ের ইতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে ইনশাআল্লাহ।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে জামায়াত ইসলামী অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দল। তবে নির্বাচনের আগে তারা যেভাবে তহবিল সংগ্রহ করছে, তা অন্য দলগুলোর তুলনায় তারা এগিয়ে। তাদের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজেদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে, যা অন্য রাজনৈতিক দলে বিরল। এটি জামায়াতকে নির্বাচনের ময়দানে অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে রাখবে। বিশেষ করে দলটির আমিরের দেওয়া বক্তব্য নির্বাচনি ফান্ড সংগ্রহে আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে।
তাদের মতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী শুধু সাংগঠনিকভাবে নয়, আর্থিকভাবেও প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের ঘিরে তাদের কার্যক্রম এবং তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহের যে প্রচেষ্টা, তা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন তারা।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আসন্ন নির্বাচনে নারী ভোটকে ঘিরে বিশেষ কৌশল নিয়েছে। তাদের মহিলা বিভাগ ইতোমধ্যেই রাজধানীসহ সারা দেশে মানববন্ধন, উঠান বৈঠক, ভোটার সমাবেশ, রুকন সম্মেলন, কর্মী সম্মেলন, সভা-সেমিনার এবং এমনকি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই কার্যক্রমগুলো প্রমাণ করে যে জামায়াতের মহিলা বিভাগ নির্বাচনের ময়দানে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগ শুধু সাংগঠনিক কাজেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে নিরলসভাবে কাজ করছে। তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত এই মহিলা বিভাগ আগামী নির্বাচনে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
জামায়াতের এক নেতা বলেন, আমাদের মহিলা বিভাগে কয়েক লক্ষাধিক নারী কর্মী রয়েছে। তারা শুধু সাংগঠনিক কাজই করছে না, মাঠপর্যায়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর তুলনায় আমাদের প্রস্তুতি অনেক এগিয়ে।
এ ছাড়া শুধু নারী ভোটারদের সমর্থনই নয়, জামায়াতের মহিলা বিভাগকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে বড় একটি অর্থনৈতিক জোগান। দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, তৃণমূল পর্যায়ে নারী কর্মী এবং সমর্থকদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত সমর্থকরাও অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছে।
এসব বিষয়ে কথা হলে এক জামায়াত কর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবাই স্বেচ্ছায় তহবিলে অর্থ দিচ্ছি। এটা আমাদের দায়িত্ব মনে করি। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি- দলের লক্ষ্য পূরণ হলে দেশের উন্নয়ন হবে।’
সাবেক ছাত্রশিবির এক নেতা বলেন, জামায়াতের প্রতিটি স্তরে অর্থ সংগ্রহের জন্য আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে। বিদেশি সমর্থকরাও প্রচুর অর্থ দেয়। তাই নির্বাচনের আগে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ফান্ড থাকবে।
জামায়াতের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত একটি সুসংগঠিত অর্থ সংগ্রহ প্রক্রিয়া চালু রয়েছে বলে জানায় দলীয় সূত্র। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত চাঁদা, বিশেষ তহবিল, দান এবং ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে আয়। এসব অর্থ সরাসরি নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার-ব্যানার মুদ্রণ, পরিবহন খরচ, ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ এবং আইনজীবী ও প্রার্থীদের ব্যয়ে ব্যয়িত হবে।
কেকে/ এমএস