রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে জুবেরি ভবন থেকে সরে এসে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষার্থীরাও প্রতিটি হল থেকে বেরিয়ে এসে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
এই প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত (রোববার রাত ১২টা ) উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে বসে 'পোষ্য কোটা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক', 'ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, পোষ্য কোটা নো মোর', 'অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন, পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন'সহ একের পর এক পোষ্যকোটা বিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং সাবেক সমন্বয়কসহ রাকসুর বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা অবস্থান করছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু, এটিকে সামনে নিয়ে এসে রাকসু বানচালের পায়তারা করা হচ্ছে। তারা আগেই পোষ্য কোটার কবর রচনা করেছেন। নতুন করে পোষ্য কোটাতে ফিরতে দিবেন না তারা। পোষ্য কোটা বাতিল এবং যথাসময়ে রাকসু নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক জরুরি একাডেমিক সভায় পোষ্যকোটা পুনর্বহালের পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সাবেক সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন শিক্ষার্থীরা। এদিন রাত ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন চালান তারা। পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর পোষ্যকোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েক শিক্ষার্থী।
রাতভর আমরণ অনশনের পর আজ দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ার পোড়ায়। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে। এসময় তারা উপ-উপাচার্যের গাড়ি আটকায় এবং সেখানে টাকা ছুড়ে মারে। এরপর তারা উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাইন উদ্দিন খানের এর বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এতে তিনি তার বাসভবনে প্রবেশ করতে না পারায় প্রক্টর মাহবুবর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে আবারো শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হয়। এসময় কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক, উপ-উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়। এই ধ্বস্তাধস্তিতে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি পোষ্যকোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করে। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে এক জরুরি একাডেমিক কমিটির সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একাডেমিক সভায় ১০ শর্তে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কেকে/এআর