জয়পুরহাটে কালাই উপজেলার পাট চাষ বিলুপ্তির পথে, কারণ গত পাঁচ বছরে ৭০% পর্যন্ত কমেছে, যার প্রধান কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনাবৃষ্টি, উপাদান খরচ বৃদ্ধি, ভালো বীজের অভাব, এবং পাটের দাম ভালো না পাওয়া। কৃষকরা এখন পাটের বিকল্প হিসেবে ধান, ভুট্টা, আলু, কলা ও সবজির মতো লাভজনক ফসল চাষে ঝুঁকছেন, যা জমির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং জমিকে তিন-চার ফসলি জমিতে পরিণত করছে।এ উপজেলায় এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না সবুজ পাটক্ষেত।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষকেরা জানান, একসময় ব্যাপক হারে পাটের চাষ হতো এ উপজেলায়। নদী-খাল ও পুকুর-ডোবায় সারিবদ্ধভাবে নারী-পুরুষ ও শিশুরা পাটের আঁশ ছাড়াতেন। পাটের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত আশপাশে। এ দৃশ্য এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। দিন যত যাচ্ছে, পাটের আবাদ ততই কমছে। ‘সোনালী আঁশ’ খ্যাত পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত।এবং পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়া, সার, বীজ ও প্রণোদনা এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ না পাওয়ায় তাঁরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
কালাই উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, ২৩- ২৪ মৌসুমে এ উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ ১৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে।এবং প্রণোদনা হিসেবে ১১০ জন কৃষককে ১কেজি করে পাটের বীজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২৪- ২৫ মৌসুমে পাটের প্রণোদনা না আসায় বিতরণ করা হয়নি কৃষকদের মাঝে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে আর পাট চাষ হচ্ছে না।
এ উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বলীগ্রাম গ্রামের কৃষক প্রতুল চন্দ্র বলেন,গত ৩০ বছর ধরে পাট চাষের সঙ্গে জড়িত।এবারও আমি ৪০ শত জমিতে পাট চাষ করেছি। শ্রমিকের মজুরি এখন ৬০০ টাকা। খরচের তুলনায় বিক্রি কম, লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুনতে হয়।
আরেক পাট চাষী মহাভারত ও অমিত বলেন, পাট চাষে আগে যা লাভ হতো, এখন আর হয় না। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ—সব কিছুর দাম বেড়েছে। অথচ বাজারে ন্যায্য দাম পাই না। তাই বাধ্য হয়ে ধান কিংবা ভুট্টার দিকে ঝুঁকছি।
কালাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ বলেন, পাট চাষে লাভজনকতা কমে যাওয়ায় কৃষকের আগ্রহ কমেছে। এছাড়া পাট কাটার পর জাগ দেওয়ার জায়গা ও শ্রমিক সংকটও বড় সমস্যা।
কেকে/ এমএস