মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় রেজাউল করিম খন্দকার নামে এক যুবক তার বাড়ির আঙ্গিনায় শখের বাগানে শতাধিক বিদেশী জাতের ফল চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে রয়েচে ৫০ জাতের বিদেশি আম, ২০ জাতের আঙ্গুর, ১০ জাতের কমলা-মালটা, ৭ জাতের ড্রাগন গাছ, আফ্রিকান পিচ ফল, তুরকী মালবেরি, বিদেশী লংগান, মিরাকেলবেরিহ দেশি-বিদেশি জাতের দুর্লভ প্রজাতির ফল। দেশের মাটিতে এমন ব্যতিক্রমধর্মী ও দুর্লভ জাতের ফলের বাগান দেখে দর্শনার্থীরা প্রশংসা করছেন রেজাউল করিমের।
এ বাগান উদ্যোক্তার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের অফিসবাজার এলাকায়। তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মাদরাসায়) শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার অফিসবাজার এলাকায় টিলার ওপরে বাড়ির আঙ্গিনায় দুই একর জমিজুড়ে দেশি-বিদেশি শতাধিক প্রজাতির ফলের গাছে সমৃদ্ধ বাগানের কোনো কোনো গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে ফল। আবার কোনো গাছে শোভা পাচ্ছে নানা আকার আর রঙবেরঙের ফুল।
রেজাউল করিম খন্দকার জানান, বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদনের স্বপ্ন থেকে শখের বশে ২০১৭ সালে কয়েকটি বিদেশী জাতের আম গাছ রোপণের মাধ্যমে বাগানটি শুরু করেন। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বাগানের পরিচর্যা করেন তিনি নিজেই। প্রথমে কয়েকটি বিদেশী জাতের আম গাছ রোপণ করলেও এখন এই বাগানে দেশি-বিদেশি জাতের শতাধিক দুর্লভ প্রজাতির ফলের গাছে সমৃদ্ধ বাগান। এখন তার বাগানে ৫০ জাতের বিদেশী আম গাছ, ২০ জাতের আঙ্গুর, ১০ জাতের কমলা-মালটা, ৭জাতের ড্রাগন, আফ্রিকান পিচ ফল, তুরকী মালবেরি, বিদেশী রামবুটান, ফিলিপাইন আখ, আপেল, মিরাকেলবেরি, লুকাট, ত্বীন, জামরুল, সালাক, আনার, ফুলে আরাকতা, মৃদুলা, আপেল, পারসিমন, নাশপাতি, ব্ল্যকবেরি, স্ট্রবেরি, সালাক ফল, কাজুবাদাম, আতাফল, শরিফাসহ দেশে-বিদেশী বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ রয়েছে।
শৌখিন চাষি রেজাউল করিম আরও জানান, আম গাছের মধ্যে রয়েছে-আলফানসো, আমেরিকান কেন্ট, হিমসাগর, চেংমাই, পাকিস্তানি চোষা, আমেরিকা গালমা, সামার বেহেশত, সূর্য ডিম (নাচ-১, নাচ-২, নাচ-৩), বৈশাখী, বান্দি মুড়ি, গৌরমতি, কটিমন, গাই কাছা মিত্রা, কুনাই, বাউ-৩, বারি-১১, নাম ডাক মাই, হাড়িভাঙ্গা ব্ল্যাকস্টোন, মহাচনক, কিউজাই, ব্রনাই কিং, ব্যানানা, আম্রপালি, সুপার ভাগোয়া ও পাকিস্তানি জাতের আম গাছ। কমলা ও মাল্টার মধ্যে রয়েছে হানিডিউ, কমলা তারাক, রুপি গ্রেপ, কারা কারা অরেঞ্জ, ওয়াশিংটন নেভাল, ঘেয়ার সুম মাল্টা, চায়না কমলা, দিলোটি কমলা ও থাই-২। আঙুরের মধ্যে রয়েছে-আঙুর গ্রিল লং, এলিস, ফ্যান্টাসি, বাইকুলুর, জয়, ভিতুবি ব্ল্যাক ও এবিউ জায়ান্ট। চেরি ও পিচের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকান রেড পিচ, সাবান চেরি ও ব্ল্যাক সুরিনাম চেরি। লংখানের জাতগুলো হলো আরকা পেয়ারা, ম্যাটোয়া লংগান, সিজন লংগান টাকা, জাম্ব লংগান, গাই লংগান, শিংপং লংগান, শিং শিংপং লংগান, রেড পিংগং ও রেড ক্রিস্টাল।
দুর্লভ জাতের এই ফলের বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত বাগানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। ইতোমধ্যে রেজাউল করিমের বাগানে কয়েক বার এসেছেন বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. মনোয়ার হোসেন। যারাই বাগান দেখতে এসেছেন মুগ্ধতা না নিয়ে ফিরে যাননি কেউ। এমন কথাই জানালেন রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘বাগান করার উদ্দেশ্য ছিল, ভিনদেশি ফলের অভাব পূরণ, বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদন এবং পারিবারিক চাহিাদা মেটানো। গত কয়েক বছর আমের ভালো ফলন হয়েছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিও করেছি। পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকেও দিয়েছি। এবার চার শতক জমিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে আঙুর চাষ করেছি। আশা করছি, ফলন ভালো হবে। দিন দিন চাষে সফল হচ্ছি, সম্ভাবনা দেখছি। তাই, বাণিজ্যিকভাবে বাগান করার চিন্তা করছি।’
রেজাউল জানান, কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বাগানের পরিচর্যা করেন তিনি নিজেই। কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়াই ফল গাছগুলোর যত্ন-পরিচর্যা করেন। এ পর্যন্ত বাগানে খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ বছর এখন পর্যন্ত শুধু স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশী অন্যান্য ফল বিক্রি করে আরো কয়েক লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন রেজাউল করিম।
স্থানীয়রা বলছেন, ‘দুর্লভ প্রজাতির ফলের গাছে সমৃদ্ধ এই বাগানের শৌখিন কৃষি উদ্যোক্তা সারা দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারেন।’
কৃষিবিদ মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বড়লেখার রেজাউল করিম শৌখিন ফল চাষী হলেও এমন একজন উদ্যোক্তা সারা দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারেন। আমি তার ফলের বাগানে কয়েকবার গিয়েছি। বাগানে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফলের গাছ দেখে বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রসারিত করার জন্য উৎসাহ দিয়েছি।’
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘রেজাউলের মতো অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে মানুষ রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে পারবে। আমরা এমন উদ্যমী উদ্যোক্তা খুঁজছি। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।’
কেকে/ এমএ