জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় নলকূপের সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। ধান ও আলুর ভালো ফলন হলেও উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে দাম মেলাতে না পারায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা সেচ কমিটি বিঘাপ্রতি আলু চাষে ৮০০ টাকা ও বোরো চাষে ১ হাজার ২৫০ টাকা সেচ খরচ নির্ধারণ করলেও বাস্তবে তাদের গুনতে হচ্ছে আলুতে ১ হাজার ২০০ ও বোরোতে ১ হাজার ৬০০ টাকা। শুধু সেচ বাবদই বিঘাপ্রতি প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এতে জেলার কৃষকরা এ বছর অতিরিক্ত প্রায় ২৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছেন।
কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের কৃষক রাশিদুল আলম বলেন, “পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়েও লাভ নেই। সেচ মালিকরা যেভাবে দাম ধরেন সেভাবেই আমাদের টাকা দিতে হয়। বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়া হলেও এর সুবিধা আমরা পাই না।”
একই এলাকার কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আট বিঘা জমিতে আলু চাষ করেও লাভ করতে পারেননি। সেচ কমিটির নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি টাকা গুনতে হয়েছে।’
কৃষক লুৎফর রহমান জানান, ধানের লাভ কম হওয়ায় তিনি এখন সবজি চাষে ঝুঁকছেন। শুধু পাঁচ বিঘা ধান চাষে তাঁকে সেচ খরচ দিতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
সেচ মালিকরা বলছেন, ‘বিদ্যুৎ বিল, ড্রাইভার ভাড়া ও নিরাপত্তা খরচসহ নানা কারণে তাদেরও ব্যয় বেড়েছে।’
হাতিয়র গ্রামের নলকূপ মালিক আব্দুল মজিদ জানান, চোরচক্রের হুমকি ও চাঁদাবাজির কারণে নিরাপত্তায় বাড়তি লোকবল রাখতে হয়, যার খরচ শেষ পর্যন্ত কৃষকের ঘাড়েই পড়ে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি শামীম আক্তার জাহান বলেন, “আমার যোগদানের পরই সেচ মালিকদের নিয়ে সভা করে বোরো, আলু ও আমন ফসলে সেচের দাম নির্ধারণ করেছি। মাইকিংয়ের মাধ্যমেও তা প্রচার করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. মাহবুবুল হক বলেন, ‘কৃষকদের স্বার্থে সরকার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি সেচ ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত চার বছরে জেলায় ৮৯৮টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে, যার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন বলেন, ‘ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি রোধে রাত্রিকালীন টহল বাড়ানো হয়েছে। চোরচক্রের বিরুদ্ধে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।’
কেকে/ এমএ