# মনিপুরী সম্প্রদায় ও চা শ্রমিকের সন্তানদের সাফল্য
# ৪৮তম বিসিএসে মৌলভীবাজারের ৮ মেধাবী মুখ
৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে (সহকারী সার্জন) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার ৮ মেধাবী মুখ। এর মধ্যে শুধু শ্রীমঙ্গল উপজেলারই ৪ মেধাবী মুখ রয়েছেন। তারা হলেন ডা. নিশাত নাওয়াল মুমু, ডা.আকাশ নুনিয়া, ডা. সোনালি রায় এবং ডা. দীপ্ত দেব। অন্যরা হলেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শাহ বন্দর এলাকার ডা. তাহমিদুল হক চৌধুরী, রাজনগর উপজেলার ইটা চা বাগানের সন্তান ডা. সঞ্জিত গোয়ালা এবং কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চা বাগানের ডা. অনিকেত বর্মা এবং একই উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ঘোরামারা গ্রামের ডা. সুদীপ কুমার সিনহা।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য ক্যাডারে (সহকারী সার্জন) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে এবার ইতিহাস গড়েছেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়সহ জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার চা শ্রমিক পরিবারের কয়েকজন সন্তান।
ডা. আকাশ নুনিয়া, ডা. অনিকেত বর্মা, ডা. সঞ্জিত গোয়ালা এখন চা জনগোষ্ঠীর গর্ব এবং চা বাগানের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠেছেন। পাশাপাশি চিকিৎসক মনোনীত হয়ে সমগ্র মণিপুরী সম্প্রদায়ের গর্বের কারণ হয়ে দাঁড়িছেন ডা. সুদীপ কুমার সিনহা। ডা. নিশাত নাওয়াল মুমু সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে ডা. আকাশ নুনিয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে, ডা. সোনালি রায় সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ থেকে, ডা. দীপ্ত দেব মাগুরা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ফল প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাজদিহি চা বাগানে চা শ্রমিক পরিবারে জন্ম নেওয়া ডা. আকাশ নুনিয়া নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে বড় হয়েছেন। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর নিরলস পরিশ্রম তাকে ডাক্তার বানাতে সাহায্য করেছে। চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান বিসিএস ডাক্তার হিসেবে মনোনীত হওয়ায় তার এলাকায় আনন্দ ও গর্বের আবহ তৈরি হয়েছে।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. আকাশ নুনিয়া বলেন, ‘এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাবা-মায়ের কষ্ট, শিক্ষকদের দোয়া আর নিজের চেষ্টার ফলে আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি। আমি মানবতার সেবক হয়ে মানুষের চিকিৎসা সেবায় কাজ করে যাবো। আমি চাই চা শ্রমিক পরিবারের আরও ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে যাক এবং দেশের সেবায় এগিয়ে আসুক।’
ডা. সুদীপ কুমার সিনহা মৃত পদ্ম মোহন সিংহ বাবু ও সুশীলা সিনহার ছেলে। তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়ের সন্তান। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তিনি মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি কাড়েন। ডা. সুদীপ কুমার সিনহার এ অর্জনে পরিবার, বন্ধু ও এলাকার মানুষ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, তার সাফল্য শুধু পরিবার নয়, সমগ্র মণিপুরী সম্প্রদায় এবং কমলগঞ্জের জন্য গর্বের বিষয়।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. সুদীপ কুমার সিনহা বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ও বাবা-মায়ের দোয়া এবং শিক্ষকদের পরামর্শে আজকের এই সাফল্য অর্জন করেছি। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করা আমার স্বপ্ন ছিল। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে সেই স্বপ্ন পূরণের দ্বার উন্মুক্ত হলো। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সকলের কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছি।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) শ্রীমঙ্গল সেক্টরের প্রাক্তন বেসামরিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাজেম আল কোরেশী রাফাত স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘ডাক্তার হওয়া মানে শুধু একটি পেশা নয়, বরং এটি এক বিশাল দায়িত্ব ও মহান সেবা। সরকারি চাকরিতে যোগদানের মাধ্যমে অসহায় মানুষকে সেবা করার বড় সুযোগ পাওয়া যায়।’
শুধু স্বাস্থ্য ক্যাডার নয়, মানবতার সেবক হয়ে ওঠার পরামর্শও দেন তিনি।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুদর্শন শীল বলেন, ‘৪৮তম বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে (সহকারী সার্জন) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলার মেধাবী ৪ জনের মধ্যে ডা. আকাশ নুনিয়া ছাড়া অন্য ৩ জন শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ছিল। ডা. সোনালি রায় আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক স্বর্গীয় স্বপন কুমার রায় স্যারের গর্বিত কন্যা। আর ডা. আকাশ নুনিয়া চা জনগোষ্ঠীর গর্ব এবং চা বাগানের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার প্রতীক। তাদের সফলতায় আমি আনন্দিত ও গর্বিত। অদম্য মেধা ও অকৃত্রিম সেবার মাধ্যমে তারা মানবকল্যাণে অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।’
প্রসঙ্গত, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জানায়, ৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় মোট ৩ হাজার ১২০ জনকে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সহকারী সার্জন পদে ২ হাজার ৮২০ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ৩০০ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে সহকারী সার্জন পদে মৌলভীবাজার জেলায় ৬ জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
কেকে/ এমএ