কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে স্কুল শিক্ষক পারভীন আক্তারের বসতঘরে তালা দিয়ে ৮ বছরের শিশু সন্তানসহ বাসা থেকে রেব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আশ্রয়হীন হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মা-ছেলে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। পারভীন আক্তার হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
শনিবার (১৬ আগস্ট) ভুক্তভোগী শিক্ষক পারভীন আক্তার বাদী হয়ে হোসেনপুর থানায় সহোদর ছোট ভাই এস.এম. হৃদয় (২৮) ও চাচা কাঞ্চন মিয়ার (৪০) বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক পারভীন আক্তারের পিতা মো. রুকন উদ্দিনের দুই সন্তান, পারভীন আক্তার ও এস.এম. হৃদয়। পারভীনের স্বামী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সার্জেন্ট। চাকরির সুবাদে তিনি সেনানিবাসে অবস্থান করায় পারভীন আক্তার তার ৮ বছর বয়সী ছেলে শাইয়ানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছিলেন।
তিনি ওয়ারিশসূত্রে বাবার কাছ থেকে ৩ শতাংশ ভূমি প্রাপ্ত হয়ে বাংলা চৌহুদ্দি মোতাবেক সেখানে বসতঘর নির্মাণ করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছিলেন।
কিন্তু সম্প্রতি পারভীনের সহোদর ভাই হৃদয় ও চাচা কাঞ্চন মিয়া তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালান। তারা বসতঘরের সামনে চলাচলের রাস্তা টিনের বেড়া দিয়ে বন্ধ করতে চাইলে পারভীন আপত্তি জানান। এ সময় চাচা কাঞ্চন মিয়া তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং ভাই হৃদয় কিল, ঘুসি ও লাথি মেরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পারভীন আক্তার ও তার শিশু সন্তানকে বিবস্ত্র অবস্থায় গেইটের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। তাদের হুমকি দেওয়া হয়, আর কখনো যেন ওই বাড়িতে প্রবেশ না করে, অন্যথায় প্রাণনাশ করা হবে। এরপর থেকে শিক্ষক পারভীন আক্তার ও তার শিশু সন্তান আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন এবং খোলা আকাশের নিচে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সোমবার (১৯ অগস্ট) এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই শিক্ষক বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। সরেজমিনে তাদের বাসার বাইরে এক বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এলাকার বাবুল মিয়া বলেন, ‘পারভীনের স্বামী সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকায় তিনি দীর্ঘদিন বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। বাবার জীবদ্দশাতেই সম্পত্তি ভাগাভাগি করা হলেও ছেলে হৃদয়কে তুলনামূলক বেশি দেওয়ায় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সেই বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করলে ছোট ভাই হৃদয় ও চাচা কাঞ্চন মিলে পারভীনের রুমে তালা লাগিয়ে দেন।’
প্রতিবেশী সাহেদা খাতুন বলেন, ‘পারভীন নিজের অর্থায়নে বাবার প্রাপ্ত ভূমিতে একটি ঘর নির্মাণ করে ৮ বছরের শিশু সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছে। কিন্তু ভাইয়ের চাপেই তার বাবা বাকি সব সম্পত্তি ছেলের নামে লিখে দেন। এরপর থেকেই ভাই-বোনের দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এখন তাকে ছোট ছেলেসহ ঘরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
প্রতিবেশী ইমরান হোসেন বলেন, ‘পারভীন একজন শিক্ষক, এলাকার সম্মানিত মানুষ। তাকে ছোট শিশুসন্তানসহ এভাবে উচ্ছেদ করা অন্যায় হয়েছে। একজন নারীকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।’
অভিযোগ অস্বীকার করে ছোট ভাই হৃদয় বলেন, ‘বাবা আমাদের দুজনকেই জমি লিখে দিয়েছেন। তবে বোনকে নির্দিষ্ট করে আলাদা কোনো জায়গা দেননি। সে বাবার বাড়িতে থাকতে পারবে না। তার স্বামী আছে, তার বাড়িই তার ঠিকানা হওয়া উচিত।’
পারভীনের বাবা রুকন উদ্দিন জানান, ‘আমি জীবিত থাকতেই জমি ভাগ করেছি। ছেলে যেহেতু একটাই, তাই তাকে একটু বেশি দিয়েছি। মেয়ে অভিযোগ করেছে বলেই আমি আর তাকে ঘরে ঢুকতে দেব না।’
এ বিষয়ে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, পারিবারিক জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই এ ঘটনার সূত্রপাত। ঘটনার দিন ছোট ভাই শিক্ষিকার রুমের সামনে বেড়া দিতে এলে বাধা দেওয়া হয়। পরে রুমে তালা লাগানো হয়।
কেকে/এআর