বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫,
৬ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ৮১      গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ-রফতানি      মনোনয়নপত্র জমাদানে উৎসবমুখর পরিবেশ      ভারতে আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান, অভিযোগ অস্বীকার নয়াদিল্লির      দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে: মৎস্য উপদেষ্টা      জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ       গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: সমাজকল্যাণ সচিব      
খোলাকাগজ স্পেশাল
নির্বাচনে ঝুঁকি বাড়াবে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র
সফিকুল ইসলাম সবুজ
প্রকাশ: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

গত বছরের ৫ আগস্ট থানা ও স্টেশনগুলো ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল পুলিশ সদস্যরা। লুট হয়েছিল তাদের আগ্নেয়াস্ত্র। লুট হওয়া অস্ত্রের একটা অংশ উদ্ধার হলেও এখনো প্রায় দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি। যেগুলো অপরাধীদের কাছে চলে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। আগামী নির্বাচনের আগে এই অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই।

এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত রোববার সাংবাদিকদের বলেছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর যেসব অস্ত্র হারিয়ে গেছে বা লুট হয়েছে তা উদ্ধারের ব্যাপারে একটা পুরস্কারও ঘোষণা করা হচ্ছে। যারা সন্ধান দিতে পারবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। দুই-এক দিনের মধ্যে এটি জানানো হবে। নির্বাচনের আগে এই অস্ত্র উদ্ধারের আশার কথা বলেন তিনি।

যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ অস্ত্র উদ্ধার বাকি রয়েছে। কিন্তু পুলিশের হিসাবে ১ হাজার ৩৬৬টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা ও পুলিশি স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৮১৮টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এবং ৬ লাখ ৭ হাজার ২৬২টি গোলাবারুদ লুট হওয়ার তথ্য এসেছিল।

গত মাসে ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী লুট হওয়া ৮০ শতাংশ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। বাকি ২০ শতাংশ অস্ত্র আসন্ন নির্বাচনের আগে জব্দ করা হবে। যাতে আগামী নির্বাচনে এসব অস্ত্র দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে অপরাধী চক্রগুলো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে লুটের অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিকল্প নেই।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘নির্বাচনি দায়িত্ব তো আর পুলিশ একা পালন করবে না। এখানে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। যদিও এক বছরে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ, তারপরও এই পুলিশকে দিয়েই ভালো নির্বাচন করা সম্ভব। এখন যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের আস্থায় নিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। এখনও আসামি গ্রেপ্তারের পর থানা ঘেরাও হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের অভিযানটি কার্যকরভাবে করতে হবে। তাহলেই সম্ভব।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মানুষ ভোটকেন্দ্রে হাঙ্গামা করতে আসবে, আর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, এমন যদি হয় তাহলে আমরা কিসের পরিবর্তন করলাম। সেই গণতন্ত্র তো দরকার নেই। শুধু পুলিশ কেন, রাজনীতিবিদদের কোন দায় নেই? তারাও তো নির্বাচনের অংশ। আর পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী তো থাকছে, থাকছে আনসার সদস্যরাও। ফলে পুলিশ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, তাহলে নির্বাচন কিভাবে হবে এসব চিন্তা বাদ দিতে হবে। ভালো নির্বাচনের জন্য সবার আন্তরিকতা প্রয়োজন।’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর দেশের ৬৬৪টির মধ্যে ৪৬০ থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। ১১৪টি ফাঁড়িতেও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। থানা ও ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে পিস্তল, রিভলভার, শটগানসহ ১১ ধরনের প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র লুট করে হামলাকারীরা। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত লুট হওয়া ৪ হাজার ৩৮৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ১ হাজার ৩৬৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া লুট হওয়া ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টির মধ্যে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৪৫টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ৬ মাস পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। পরদিন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনও ঘোষণা দিয়েছে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে।

সাবেক পুলিশপ্রধানরা বলছেন, মাঠে তো সেনাবাহিনী থাকছেই। ফলে সবাই মিলে সহযোগিতা করলে পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব। পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, ‘আগামী মাস থেকে পুলিশের ট্রেনিং শুরু হচ্ছে। আগামী তিন মাস ট্রেনিং চলবে। এরপর নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের বিষয়। যদিও সেই সময় এখনো অনেক দূরে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, নির্বাচনে যাতে সঠিকভাবে পুলিশ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে।’

নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করা শুধু নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব না। আইনশৃঙ্খলার কাজে পুলিশকে প্রস্তুত করে দেওয়া সরকারের নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব। যদিও আমরা এখনো পুলিশের সঙ্গে বসিনি। সেপ্টেম্বরের শেষে অথবা অক্টোবরের শুরুতে আমরা তাদের নিয়ে বসব। তখন বোঝা যাবে পুলিশ কতটুকু প্রস্তুত।’

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের নিরাপত্তায় ‘অস্ত্রসহ আনসার’ সদস্য রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে আনসার। এবার আমরা আরেকটা জিনিস করতেছি, অন্য সময়ে থাকে না, এবার প্রিসাইডিং অফিসারকে নিরাপত্তা দিতে হাতিয়ারসহ আনসার থাকছে। অনেক সময় প্রিসাইডিং অফিসারের ওপর (লোকজন) হামলা করতে যায়। এজন্য উনার জন্য হাতিয়ারসহ একটা গার্ডের ব্যবস্থা করছি। ওনাকে কেউ যেন কোনো কিছু না করতে পারে।’

নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশের জন্য কমপক্ষে ৪০ হাজার বডি-ওয়্যার ক্যামেরা সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

গত শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় এই পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়ব আহমেদ বলেন, ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা, যা সাধারণত বডিক্যাম নামে পরিচিত, সংগ্রহের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই ডিভাইসগুলো হাজার হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করবে। তিনি বলেন, আমরা অক্টোবরের মধ্যে বডিক্যামগুলো সংগ্রহ করতে চাই যেন পুলিশ বাহিনী এসব বডিক্যামের এআই সক্ষমতাসহ মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পেতে পারেন। জার্মানি, চীন ও থাইল্যান্ডের তিনটি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ করেছে ক্যামেরা সরবরাহের জন্য। পুলিশ অফিসার ও কনস্টেবলরা নির্বাচনের সময় ডিভাইসগুলো তাদের বুকে পরবেন। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এ সময় কর্মকর্তাদের বডিক্যামগুলো দ্রুত ক্রয় এবং হাজার হাজার পুলিশ কর্মীর জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  নির্বাচন   ঝুঁকি   লুট   আগ্নেয়াস্ত্র  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চাটখিলে বৃক্ষ রোপণ
গুরুদাসপুরে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
চার বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির আভাস, পাহাড়ধসের শঙ্কা
মুন্সীগঞ্জে ধাক্কায় ট্রলার ডুবে মাঝি নিখোঁজ, বাল্কহেডসহ আটক ৪
চীন গেলেন সেনাপ্রধান

সর্বাধিক পঠিত

স্যুটার মান্নান হত্যা মামলার আসামি জুয়েল আটক
গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: সমাজকল্যাণ সচিব
নীলসাগর গ্রুপের ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত
১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক
নওগাঁয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close