জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো শঙ্কা কাটেনি। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো মনে করছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভাসমাবেশে শঙ্কার বিষয়টি নানাভাবে ব্যক্ত করছেন।
দীর্ঘদিন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছে বিএনপি। সর্বশেষ গত জুনে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে কিছুটা স্বস্তি আসে। ওই বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়ার সন্তোষজনক অগ্রগতি হলে আগামী রোজার আগেই নির্বাচন সম্ভব।
এ ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক মহলে এক ধরনের স্বস্তি তৈরি হয়। তবে যত সময় গড়াতে থাকে ততই বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে। দলটির পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। এদিকে এনসিপি ও জামায়াত বিভিন্ন সময় বলেছে, নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। এ ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা তুলে জামায়াত দাবি করে, এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বৃহত্তর দল হিসেবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি। কারণ জনসমর্থনের বিবেচনায় সরকার গঠনের সম্ভাবনা বিএনপিরই বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু বিষয় দলটিকে চিন্তায় ফেলেছে। বিশেষ করে এনসিপির বিভিন্ন সময় বক্তব্য নির্বাচন পেছানোর আভাস খুঁজে পাচ্ছে বিএনপি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিভিন্ন বিষয়ে এখনো একমত নয় দলগুলো। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে দলগুলোর মধ্যে।
এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু মতভিন্নতা রয়েছে। এদিকে দেশের কয়েকটি সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর ফলে তৈরি হতে পারে নতুন জটিলতা। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরাসহ কয়েক জায়গায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিএনপির মনে করছে এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। যা নির্বাচনকে ব্যাহত করতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে দেশের বহুমাত্রিক ঝুঁকি তত বাড়তে থাকবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে বারে বারে কেন জীবন দিতে হবে? কারণ ইতিহাস থেকে রাজনীতিকরা শিক্ষা গ্রহণ করেন না। তিনি বলেন, কসমেটিক পরিবর্তন করে কোনো লাভ হবে না। মূল ভিত্তিতেই পরিবর্তন করতে হবে।’
শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যেমন জনযুদ্ধ ছিল এবারকার গণঅভ্যুত্থান ছিল দেশের লড়াকু জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রাম। বিশেষ কারো মালিকানা দাবি করা জনগণের প্রতি অবমাননার সামিল। তারা বলেন, গত এক বছরে বৈষম্য, বেকারত্ব, দারিদ্র্য কমেনি, বরং বেড়েছে। তারা বিচার ও সংস্কারের ধারায় সরকারকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
সভার বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও তারা অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার সঙ্গে সরকারের যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে জুলাই সমঝোতা সনদ স্বাক্ষরের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কারোই আর টালবাহানা করার অবকাশ নেই। তিনি রাজনৈতিক বিরোধকে সহিংস রাজনৈতিক বৈরিতায় না নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কেউই যাতে অনৈক্যের সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও শহিদ ও আহতদের উপযুক্ত স্বীকৃতি ও পরিবারগুলোর প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন হয়নি। তিনি বলেন, জুলাই চার্টার ঘোষণার আগে সব অংশীদারদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
কেকে/ এমএস