শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫,
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে      গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট      ৫ আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ : তথ্য উপদেষ্টা      যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি      শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল      ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক      বাংলাদেশকে আলাদা কোনো শর্ত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র : প্রেস সচিব      
খোলাকাগজ স্পেশাল
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি
সাজেদ রোমেল
প্রকাশ: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এত বড় বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সমান শুল্ক দিলেও বাংলাদেশে মজুরি কম বলে বড় সাফল্য পেতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন ও ভিয়েতনামের মজুরি দ্বিগুণের বেশি হওয়ায় তাদের পেছনে ফেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ দুটি দেশ থেকে কারখানাও সরে আসতে পারে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় সফল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা, এখন কাজ দেখাতে হবে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের। 

রফতানির একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটিতে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এ রফতানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ১০৯ কোটি ডলার বা ১৪ শতাংশ বেশি। 

দেশটিতে গত অর্থবছরে যে পরিমাণ রফতানি বেড়েছে, তা একই সময়ে ১৫৪টি দেশে বাংলাদেশের মোট রফতানির সমান। তার মানে হলো, ১৫৪টি দেশে গত অর্থবছরে ১০৯ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২০১টি দেশ ও অঞ্চলে মোট ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এ রফতানির প্রায় ১৯ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানি হয় ৭৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্য রফতানি হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের। অবশ্য রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রফতানির যে হিসাব দিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে গত অর্থবছরে ৮৬৯ কোটি ডলারের রফতানির তথ্য রয়েছে। 

মোট রফতানি মূল্যের হিসাবে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রফতানি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি বেড়েছে জার্মানিতে। 

পোশাক রফতানিতে কমছিল বাংলাদেশের হিস্যা

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর ২০২৪-২৫ ও ২০২৪ সালে তৈরি পোশাক রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। তবে ২০২৪ সালে কমেছে বৈশ্বিক রফতানি বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা। বিশ্বের পোশাক রফতানি বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে, যা আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনাম একই সময়ে বাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী করেছে। ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ।

বাংলাদেশের মতো চীনের আধিপত্যও কমেছে। দেশটি ২০২৪ সালে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাজার ধরে রাখতে পেরেছে, যেখানে ২০২৩ সালে তাদের দখলে ছিল ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

তারপরও বাংলাদেশ তার দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ০ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।

চীন শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশটি ২০২৪ সালে ১৬৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা ০ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।

ভিয়েতনাম শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশটি ২০২৪ সালে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ৩৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে।

তালিকায় আরো আছে তুরস্ক, যার রফতানি হয়েছে ১৭ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ভারতের রফতানি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার, কম্বোডিয়া ৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন, পাকিস্তান ৯ দশমিক ২৮ বিলিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ৮ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ৭ বিলিয়ন ডলার রফতানি করেছে।

কম মজুরির ফলে বাংলাদেশের অগ্রগতির সুযোগ

গত এক বছরে বিশ্বের অনেক দেশেই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বেড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক সূচকে এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানে গত এক বছরে ন্যূনতম মজুরি বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ভারতে বেড়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ন্যূনতম মজুরি সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। শুধু তা-ই নয়, এ অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই খাতভিত্তিক ন্যূনতম মজুরি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচের স্তরের চেয়েও কম।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পে সর্বশেষ মজুরি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। তখন ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। এখন ডলারের বিনিময় হার ১০৫ টাকা ধরা হলে এ মজুরি দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক ১৯ ডলার।

ভিয়েতনামের ন্যূনতম মজুরি ১৬২ ডলার, ২০২৩ সালে যা বেড়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনের ন্যূনতম মজুরি ১৪১ ডলার; এ বছর বেড়েছে ৯ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার ন্যূনতম মজুরি ১৭৩ ডলার।

এএফডব্লিউএ’র সেই জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা দৈনিক মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে ১ হাজার ৯৫০ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করছেন। অথচ ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে গেলে একজন মানুষকে দিনে ২ হাজার ১২২ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করতে হয়।

অন্যান্য শিল্পেও কম-বেশি এমন মজুরিই দেওয়া হয় বাংলাদেশে। শিল্প বাঁচাতে এর কারিগর শ্রমিকদের ভালো একটা মজুরি দিয়েই বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। 

মার্কিন শুল্ক খেলায় জিতবে বাংলাদেশ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রফতানি বাজারে তুরস্কের অংশীদারত্ব ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। ভারতের দখলে রয়েছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। কম্বোডিয়ার বাজার অংশীদারত্ব ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, পাকিস্তানের ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত থাকায় এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে তাদের ওপর সবশেষ ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। সেটাই যদি থাকে বা কমিয়ে যদি ২০ থেকে ২৫ শতাংশও করা হয় তাহলেও নানা খাতে হোঁচট খাবে দেশটি। কারণ চীনের শ্রমিকদের মজুরি ও উৎপাদন খরচ বেশি। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের ওপর বাংলাদেশের সমান অর্থাৎ ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভিয়েতনামের শ্রমিকদের বেতন বাংলাদেশের দ্বিগুণ হওয়ায় দেশটির পিছিয়ে যাওয়া শুরু হবে শিগগির। 

ভারতের ওপর মার্কিন শুল্ক আছে ২৫ শতাংশ, সেটা ২০ শতাংশ নামলেও পেরে উঠবে না বাংলাদেশের সঙ্গে। ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। প্রায় সমান শুল্ক দিয়ে তিনটি দেশই হেরে যাবে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার কাছে। পোশাকশিল্পে ইউরোপের প্রতিদ্বন্দ্বী জার্মানি আর চামড়া শিল্পে ইতালি। ইউরোপের দেশগুলোকে মার্কিন বাজারে দিতে হবে ১৫ শতাংশ শুল্ক। বাংলাদেশের কয়েকগুণ বেশি মজুরি থাকায় এরা ছিটকে পড়তে পারে সেখানে। 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  যুক্তরাষ্ট্র   নতুন সম্ভাবনা   হাতছানি   বাংলাদেশি পণ্য  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শালিখায় বাড়ছে পাটকাঠির কদর
গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে
জামায়াতে এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি : সুমন
সাতক্ষীরায় সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যু
গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট

সর্বাধিক পঠিত

‘হেফাজতের সাথে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নাই’
‘শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি’
সুলতানগঞ্জকে যদি বন্দর করা যায় তাহলে করা হবে: ড. এম সাখাওয়াত
নওগাঁয় চক্ষু হাসপাতালের উদ্বোধন
‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close