সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ভারী বর্ষণ-বন্যায় মেক্সিকোতে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭      ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      
দেশজুড়ে
মামলাতেই সীমাবদ্ধ
থামছেনা পাহাড় কাটা
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ৮:১৬ পিএম আপডেট: ০১.০৮.২০২৫ ৯:১৪ পিএম
ছবি : প্রতিনিধি

ছবি : প্রতিনিধি

কক্সবাজারে ৯টি উপজেলার মধ্যে কুতুবদিয়া বাদ দিয়ে বাকি ৮টি উপজেলাতেই পুরোদমে পাহাড় কাটা হচ্ছে। কক্সবাজারে ট্রেনের সড়ক করতে প্রায় কয়েক শত পাহাড় কাটা পড়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে পাহাড়খেকোরা পাহাড় কেটে অন্যত্র পাহাড়ের মাটি বিক্রি করেছে পাহাড়খেকোরা।এদিকে কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ রাতের বেলায় পাহাড় কেটে আবাসন প্রকল্প তৈরি করছে কক্সবাজার শহরে।

বিশেষ করে পর্যটন এলাকা কক্সবাজার পৌর সভার ১২ নং ওয়ার্ড়ের কলাতলী এলাকাতে জমি দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক ভূমিদস্যূরা পাহাড় কেটে সমান করে অল্প অল্প করে পাহাড় বিক্রি করছে। এদিকে এই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ি মাটি কলাতলী সড়কের ড্রেনে চলে আসার কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে গেলে বৃষ্টির পানি যেতে না পারার কারণে অল্প বৃষ্টি হলেই কলাতলীসহ পুরো কক্সবাজার শহরে বন্যায় প্লাবিত হয়।  

এদিকে কক্সবাজারের রামুসহ ৮ উপজেলায় প্রায় ৫ শতাধিক স্পটে নির্বিচারে পাহাড় কাটার উৎসব চলছে। বনকর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে পুরোদমে চলছে পাহাড় নিধনযজ্ঞ। নির্বিচারে পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুচক্র। এ কাজে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। পরিবেশ বিধ্বংসী এ পাহাড় কাটা রোধে চোখে পড়ার মতো প্রশাসনিক কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে দ্বিগুণ উৎসাহে কক্সবাজার জেলাজুড়েই শত শত পাহাড় দিনে-দুপুরে কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। 

এদিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় ৪টি পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকা তৈরির অভিযোগে জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ৪টি পাহাড় কাটার ঘটনায় সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট মো. আব্দুছ ছালাম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় চারটি মামলা দায়ের করেছেন। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম মামলা নথিভুক্ত হওয়ার বিষয়টি জানান তখন, মামলায় জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক শহরের মালিয়ারছড়া এলাকার মৃত মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আতিক উদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও আসামি হিসেবে রয়েছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের জানারঘোনা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম মানিক (৩৬), কক্সবাজার পৌরসভার বড়ুয়াপাড়া এলাকার কালীচরণ বড়ুয়ার ছেলে লিটন বড়ুয়া (৪৪), ঈদগাঁও মাইজপাড়া এলাকার বাসিন্দা লেদু মিয়ার মেয়ে রশিদা বেগম (৩৮), পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া শিলখালী এলাকার বাসিন্দা মৌলভী করিম দাদের ছেলে ডাক্তার মুজিবুল হক (৬৫) সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ও মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। 

কলাতলী এলাকায় ৪টি সরকারি পাহাড় কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রি করার খবর পেয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের একটি দল। তারা চারটি স্থানে পাহাড় কাটার প্রমাণ পান। পরে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, শহরের কলাতলী এলাকার ৪টি স্থান পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করা হয়েছে। জড়িতদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে সময় লাগায় মামলা করতে কয়েকদিন বিলম্ব হয়েছে । 

এদিকে জানা যায়,কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী, ইসলামপুর, বাঁচামিয়ার ঘোনা, ইসুলু ঘোনা, বৈদ্যঘোনা, খাজা মঞ্জিল এলাকা, বাদশা ঘোনা, ফাতের ঘোনা, ঘোনার পাড়া, লাইট হাউস পাড়া, কলাতলী, বাইপাস সড়কের দুই পাশ, নতুন জেলা কারাগার সংলগ্ন এলাকা, নতুন পুলিশ লাইন সংলগ্ন এলাকা, লারপাড়া, উত্তরণ এলাকা, হাজী পাড়া, সদর উপজেলার পেছনে, সাহিত্যিকা পল্লী, বিজিবি ক্যাম্পের পেছনে, পল্লান পাড়া, সমিতি বাজার, দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়াসহ পুরো শহরজুড়েই চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। 

এসব এলাকায় পাহাড়ের পর পাহাড় কেটে বসত বাড়ি নির্মাণ ও অসংখ্য রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠছে। অথচ প্রশাসন সব দেখেও না দেখার ভান করছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজরপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া,হরিখোলা,দৈংগ্যাকাটা, মিনাবাজার, নয়াপাড়া, খারাংখালি, হ্নীলার দমদমিয়া, মৌচনী, লেদা, নাইটংপাড়া,বাহারছড়া ইউনিয়নে শীলখালী, মারিশবনিয়া, জাহাজপুড়া। একইভাবে উখিয়া উপজেলার পাইন্যাশিয়া, ফলিয়াপাড়া, ইনানী, পাটুয়ারটেক, নিদানিয়া, সোনারপাড়া, চোয়াংখালী, মোহামদ শফির বিল, মনখালী, থাইংখালী, বাঘঘোনা, পালংখালী, মুহুরীপাড়া, ভালুকিয়া, হলদিয়া, হাতিরঘোনা, লম্বাশিয়া, লম্বাঘোনা, মধুরছাড়া, মাছকারিয়া, ওয়ালাপালংসহ পাঁচটি ইউনিয়নের শতাধিক স্পটে পাহাড় কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটার উৎসব চলছে। এছাড়া রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ির চাইল্লাতলী এলাকায় পাহাড় কাটার এ ঘটনা চলছে। এলাকাটি কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জের পানেরছড়া বন বিটের আওতাধীন। সরেজমিন দেখা গেছে, রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির চাইল্লাতলী স্টেশনে রাস্তার পাশে মজুদ করা হয় পাহাড়ি বালি। পূর্ব পাশের বারিয়াপাড়া এলাকার ৪ টি পয়েন্ট থেকে পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাক যোগে রাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে পাহাড়ি বালি পরিবহন। স্টেশনে মজুদ করা বালি সারাদিন ডাম্প ট্রাক যোগে বিক্রি করা হয় কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন স্থানে। বারিয়াপাড়ার মুফিজুর রহমান, আবদুল মান্নান, শাহাবুদ্দিন ও আবদুল মঈনের দখলীয় পাহাড় থেকে ডাম্প ট্রাক যোগে মাটি নিয়ে পাচার করা হয়। 

সূত্র মতে, রাতের আধারে প্রভাবশালী মহল শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কেটে সমতল করে পরে দিনের বেলায় ঘর-বাড়ি নির্মাণ করছে বলেও জানা গেছে। পাহাড় কাটা রোধে প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকায় জেলাজুড়ে এ কৌশল অবলম্বন করে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় পাহাড় কেটে মাটি মজুত করে রাখা হতো। পরে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মাটি ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এতে শহরের নিচু এলাকার সড়ক ও নালা ভরাট হয়ে পড়ে। এছাড়াও নিচু এলাকার লোকজন বিভিন্ন ক্ষয় ক্ষতিসহ নানা দুর্ভোগের শিকার হয়। তবে এখন আর বর্ষাকালে নয়, সারাবছরজুড়েই পাহাড় কাটা হয় জেলাজুড়ে।

কক্সবার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলালউদ্দিন জানান, কক্সবাজারে এখন বাধাহীনভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। কক্সবাজারে ৫শ এর অধিক স্থানে বর্তমানে পাহাড় কাটা হয়েছে। এছাড়া অর্ধসহস্রাধিক ডাম্প ট্রাক নিয়ে প্রকাশ্যে নির্বিচারে চলছে পাহাড় নিধন ও বালি উত্তোলন। পাহাড় কাটার এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখলে মনে হবে, এসব বন্ধে কোন প্রশাসন নেই। তবে বর্তমান বন বন পরিবেশ উপদেষ্টার আন্তরিকতায় অনেকটা কমবে বলে আশা করা যায়।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শীর্ষ মানবপাচার চক্রের মূল হোতা আটক
বিপর্যস্ত বাংলাদেশের সামনে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা
ভাইরাল গরুচোর সবুজসহ গ্রেফতার ৫
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস আজ
যখন জনগণ জানে না, তখন গণভোট অর্থহীন

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
ইমপোর্টার-এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close