শিগগির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে ঘোষণা শুনবেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে আইন মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন উপদেষ্টা। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভোট দিতে সবাই পারবেন। আমাদের হেন উদ্যোগ নেই, যা নেওয়া হচ্ছে না। ভোটাধিকারের কথা বলছেন? ক্লাসে যখন যেতাম। জিজ্ঞেস করতাম ছাত্রদের তোমাদের মধ্যে কে কে ভোট দিয়েছ? তারা হাসাহাসি শুরু করত। কেউ কেউ বলত স্যার ভোট দিয়েছি, তবে দশ বারোটা। ৯০ শতাংশ বলতো তারা ভোট দেয়নি। যা হোক আমাদের সেই দুঃখ ঘুচবে। আমরা ১৮ বছর ধরে ভোট দিতে পারিনি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই এর সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। আপনারা যারা সাংবাদিকরা আছেন, কাজ করেন, অনেক ভয়াবহ তথ্য পাবেন ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে।’
এদিকে আগামী চার-পাঁচ দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য একটি ‘ক্রুশিয়াল’ সময় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘একটি বিষয় নিশ্চিত, নির্বাচন দেরি হবে না। নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে সময়ে বলেছেন, তার থেকে একটা দিনও দেরি হবে না।’ প্রেস সচিব আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথমে বলেছিলেন নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে। পরবর্তী সময়ে লন্ডনে বলা হয়েছে যদি অনেক সংস্কার হয় এবং বিচারের কাজগুলো এগিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে। তারা সেই জায়গায় এখনো আছেন। এটি এক দিন দেরি হবে না, যাই হোক না কেন। সনদ বা ঘোষণাপত্র যাই হোক না কেন যেটা, যেভাবেই সনদ গ্রহণ করা হোক না কেন...নির্বাচন তার সময়মতো হয়ে যাবে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূসের দৃঢ় অবস্থান, পুরো উপদেষ্টা পরিষদেরই এখানে দৃঢ় অবস্থান। উপদেষ্টারা তাদের পুরোনো কাজে ফিরে যেতে চাচ্ছেন। খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, প্রতি নির্বাচনে কিছু না কিছু সহিংসতা হয়, তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে সহিংসতাকে একেবারে জিরোতে নামিয়ে আনা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এ দেশে যাতে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ ও চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। সেজন্য বিশেষ করে নারী সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে। গতকাল রাজধানীতে মহিলা দলের আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন হওয়া দরকার, তেমন দেশ গড়তে আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবার জন্য নিরাপদ, গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীরা ভূমিকা রেখেছেন। নারী শক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কোনো রাষ্ট্রই এগিয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু দেশের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার ক্ষেত্রে নারীরা অনেকাংশে পিছিয়ে। তাদের অর্থনৈতিক সাবলম্বিতায় বিএনপির বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। নারীদের শিক্ষাদান এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা গেলে পারিবারিক সহিংসতা রোধ করা সম্ভব।’ বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রথম পর্যায়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ প্রান্তিক পরিবারে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
এদিকে বিএনপি ক্ষমতার যাওয়ার জন্য অস্থির নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের মালিকানা তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, ‘জনগণ বিএনপির কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে। আমাদের কাছে এসে ভিড় করছে লোকজন, যে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আগে তো এমপি ছিল, মেয়র ছিল, তারা কথা বলতে পারত, এখন কিন্তু তারা কথা বলতে পারছে না। এই যে বিষয়টা, এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’
গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
কেকে/ এমএস