মাগুরার শালিখায় ভালো দাম, গুণগত মান ভালো, আগাগোড়া সমানসহ নানাবিধ সুবিধা থাকায় বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৮ শত হেক্টর জমিতে সাধারণ পাট চাষ করা হয়েছে যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭ শত ৮০ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ হেক্টর বেশি জমিতে সাধারণ পাট চাষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
তবে সাধারণ পাটের চাষাবাদ তুলনামূলক কম হলেও গুণগত মান ভালো, আশানুরূপ ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) এর চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর ২৮০ হেক্টর জমিতে তোষা পাট বা মেজতা পাট চাষাবাদ করা হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে চার গুণেরও বেশি। এ জাতের পাট দেখতে লাল বর্ণের, আঁশ মোটা ও ফলন ভালো হয় বলে জানিয়েছে চাষিরা।
চলতি মৌসুমে শালিখা উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমিতে তোষা পাটচাষ করা হয়েছে। এ পাটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আগাম বীজ বপন করা যায়, আগাগোড়া সমান হয়, সাধারণ পাট থেকে অপেক্ষাকৃত লম্বা হয় এবং সহজে রং নষ্ট হয় না। এ ছাড়াও আগাম চাষ করা যায়, রোগব্যাধি কম হয় এবং একটু দেরিতে কর্তন করলেও এ জাতের পাট শুকিয়ে মারা যায় না। ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে জমি থেকে পাট কাটতে পারলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পাওয়া যায়। ফলে আশানুরূপ ফলন ও দাম পাওয়া যায়।
এ পাটের জীবনকাল মাত্র ১১৫ থেকে ১২০ দিন। এ কারণে এ পাটচাষে ইতোমধ্যে উপজেলার তালখড়ি, ধনেশ্বরগাতী ও তালখড়িসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে।
জানা গেছে, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত তোষা পাটের বীজ বপন করা হয়। এটি অপেক্ষাকৃত উঁচু, জলাবদ্ধতাহীন দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে চাষের জন্য উপযোগী। স্বাভাবিক গড় উচ্চতা প্রচলিত জাত অপেক্ষা ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার বেশি। উন্নতর আঁশের এ পাট অধিকতর উজ্জ্বল এবং শক্ত।
নানাবিধ কারণে অন্য জাতের তুলনায় এ জাতটি কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত বীজ পেলে আগামীতে আরো অনেক বেশি জমিতে তোষা আবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শালিখা উপজেলার তালখড়ি ইউনিয়নের সেওজগাতী গ্রামের পাটচাষি গৌবিন্দ বিশ্বাস বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে তোষা পাট-৮ চাষ করেছি ,ফলন ভালো হয়েছে দাম ভালো হলে আগামীতে আরো এক বিঘা বেশি জমিতে চাষ করব।
একই ইউনিয়নের ছান্দড়া গ্রামের পাটচাষি ফিরোজ মোল্যা বলেন, এবার ১৪ শতক জমিতে তোষা পাট বুনেছিলাম, ফলন অনেক ভালো হয়েছে সামনেরবার এক বিঘা জমিতে চাষ করার চিন্তা করেছি।
গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের সত্তার মিয়া বলেন, তোষা পাট সাধারণ পাটের থেকে অনেক ভালো। তবে এর বীজ বেশি পাওয়া যায় না। বীজ বেশি পেলে সামনের বার ২ একর জমিতে তোষা পাট চাষ করব।
শালিখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল হাসনাত বলেন, শালিখা উপজেলায় বাংলাদেশের উদ্ভাবিত জাত বিজেআরআই চোষা পাট-৮ (রবি-১) এর চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও এ বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৮০ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় আবাদ অনেক বেশি হয়েছে এবং ফলন ভালো হয়েছে। তা ছাড়াও পাট জাগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেয়ে কৃষকগণ সন্তুষ্ট। এ ছাড়া, এবছর গতবছরের তুলনায় পাটের বাজারদরও বেশ ভালো।
কেকে/এএম