বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হেফাজত ইসলাম কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, তাদের সাথে আমাদের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নাই। তবে হেফাজত ইসলামের অধীনে কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন আছে। তাদের সাথে আমাদের রাজনৈতিক আলাপ হবে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে আড়াইটার দিকে হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ্ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির দ্বীনি বিদ্যাপিঠ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম (বাবুনগর) মাদ্রাসায় এসে একটি কক্ষে একান্ত বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে মুঠোফোনে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হেফাজত আমীরের সাথে কথা বলেন এবং দোয়া চান বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে হেফাজত আমীর ও সকলের মুরব্বি আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। আমরা তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবরও নিয়েছি।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে হেফাজতের অবদান স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদ ও গণতন্ত রক্ষার আন্দোলনে যে হামলা মামলা আলেম সমাজের উপর হয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। শাপলা চত্ত্বরে পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। সেখানে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রকৃত তালিকাও করা সম্ভব হয়নি। এমনকি অনেকের কবরও শনাক্ত করা যায়নি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে যারা সংগ্রাম করেছেন, রক্ত দিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন সকলের সাথে আমরা যোগাযোগ রাখছি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে সকলের সাথে ঐক্য রাখা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএনপি।
অন্তবর্তীকালিন সরকারের দেওয়া জুলাই সনদের ব্যাপারে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জুলাই সনদে তারা যা প্রস্তাব দিয়েছে আমরা তাতে ঐক্যমত্য পোষণ করেছি। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতেও রাজি আছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সংস্কারের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক শক্তিশালী রাষ্ট্র বিনির্মাণে একমত। এখন সংস্কারের পক্ষে কারা নাই সেটি জাতি দেখবে।’
এর আগে দুপুর ১ টার দিকে হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসাও যান তারা। এসময় বিএনপি নেতারা হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত দুই নেতা আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর কবর জিয়ারত শেষে ফটিকছড়ির দিকে আসলে স্থানীয় হাজারো নেতাকর্মী মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, সদ্য বিলুপ্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার ও সদস্য সচিব জহির আজম চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
মুলত: হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসা ও আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসা এই দুটি মাদ্রাসা থেকেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে দেশের বৃহত্তর ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড। যার ফলে পুরো দেশজুড়ে কওমি ধারার এই দুটি মাদ্রাসা বেশ আলোচিত।
জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ফটিকছড়ি ও হাটাজাহারী আসন দুইটি বরাবরই হেফাজত অধ্যূষিত। ফলে হেফাজত নেতার আশির্বাদ ছাড়া এসব আসন ভাগিয়ে নেওয়া অনেকটাই দূরূহ। ফলে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এক ধরনের রফাদফা করতে হঠাৎ বিএনপি নেতাদের এই দৌঁড়ঝাপ।
মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হেফাজত নেতা বলেন, ‘প্রায় ৪৫ মিনিট অবস্থানকালে এক কক্ষে ১৫ মিনিট একান্তে সময় কাটান বিএনপির দুই নেতার সাথে হেফাজত আমীর। এসময় তার সাথে ছিলেন দলের এক যুগ্ম মহাসচিবও। এসময় শত শত উৎসুক নেতাকর্মী উদগ্রীব ছিলেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে দুই নেতা মাদ্রাসা ত্যাগ করেন।’
কেকে/ এমএস