বাংলাদেশের জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি শিম। গ্রীষ্মকালেও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই সবজির। উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের ডেঙ্গারবনসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। জমি ভরে উঠেছে সবুজ শিমে, কৃষকের মুখে হাসি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলে শীতকালে বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষের পাশাপাশি প্রতি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে উপজেলার উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের ডেঙ্গারবন, খলিলপুর, সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এ বছর শুধু আশিদ্রোন ইউনিয়নে ৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। চাষ হওয়া শিম বিষমুক্ত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
ডেঙ্গারবন গ্রামের আহসান হাবিব ২০১৪ সালে মাত্র ১২টি বীজ সংগ্রহ করে এক শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে শিম চাষ শুরু করেন। প্রথম মৌসুমেই তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেন। বিদেশ থেকে ফিরে বর্তমানে তিনি ৬০ শতক জমিতে চাষ করছেন এবং এরই মধ্যে এক লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন, প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দরে। আরো প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার শিম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
আহসান হাবিবের সাফল্য দেখে আকবর আলী, শিপন মিয়া ও ইউনুস মিয়াসহ আরো অনেকে শিম চাষ শুরু করেছেন। তারা জানান, কম খরচে বেশি লাভের কারণে শিম চাষ তাদের কাছে খুবই লাভজনক মনে হয়েছে।
সিকৃবি উদ্ভাবিত ‘সিকৃবি শিম-১’ জাতের এ শিম গ্রীষ্মকালীন চাষের উপযোগী এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ৮ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। বারি শিম-৭, ইপসা শিম-২সহ আরো কয়েকটি জাতও জনপ্রিয় হয়ে উঠে পুষ্টিবিদদের মতে, শিমে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, থায়ামিন ও রাইবোফ্লাবিনসহ নানা পুষ্টিগুণ।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, শিম পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আমিষ, ক্যারোটিন, থায়ামিন, রাইবোফ্লাবিন।
শ্রীমঙ্গল কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান, শিম আমিষ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি সবজি। শ্রীমঙ্গলে সিকৃবি-১ জাতের গ্রীষ্মকালীন শিমের হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন হয়েছে ৮টন। বাজারমুল্য পাওয়া যাচ্ছে পাইকারি প্রতি কেজি ১৩০টাকা। ৫ হেক্টরে মোট উৎপাদন হবে ৪০ টন বা ৪০ হাজার কেজি। মোট বিক্রি হবে অর্ধ কোটিরও বেশি। উৎপাদিত এসব শিম সম্পূর্ণ বিষমুক্ত। গ্রীষ্মকালীন সময়ে বাণিজ্যিকভাবে ফসলটির চাষ আরো বৃদ্ধি পেলে আপামর জনগোষ্ঠীর পুষ্টির উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন আনা সম্ভব।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানান, উপজেলায় ৫হেক্টর জমিতে উচ্চমূল্যের গ্রীষ্মকালীন শিম আবাদ হয়েছে। সিকৃবি শীম-১ জাতের শীমটি গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী জাত। এটি আমিষ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। কৃষকদের মাঝে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বাজারে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। এই চাষে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে আমরা চাষিদেও বিভিন্ন সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
কেকে/ এমএস