ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে একমণ চালের দামে মিলছে না এক কেজি ওজনের ইলিশ। মরিচাকান্দি ঘাট বাজারে ইলিশ যেন এখন সোনার হরিণ। নদীতে মাছের দেখা না মেলায় আড়তগুলোতে তেমন ইলিশ নাই যেটুকু আছে তার দাম সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বিভিন্ন বাজার, ঘাট, সদর মাছ বাজার, কড়িতোলা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আড়তে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকা।
বাঞ্ছারামপুরে মেঘনা নদীর ইলিশ পাওয়া যায় সদর মৎস্য আড়ৎ, মরিচাকান্দি, বাহেরচর, ফেরীঘাটসহ নদীর তীরবর্তী বাজার গুলোতে। উপজেলার দুই তৃতীয়াংশ এলাকায় মেঘনা নদী।
হেলাল মিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘প্রতিবার এ মৌসুমে আমরা ইলিশ কিনে খেতাম। কিন্তু এখন তো সেটা স্বপ্ন। একটা মাঝারি ইলিশ কিনতেই দুই হাজার ৬শ থেকে আটশো টাকা লাগছে, ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম দিয়ে ১ মণ চাল কেনা যায় না। এখন ইলিশ ক্রয় করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এখন ইলিশের নাম শুনেই শান্তি।’
মাঝারি আকারের ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। অথচ বড় আকৃতির পাঙ্গাস মাছও (৫ কেজির বেশি) প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাহেরচর ফেরীঘাট বাজারের জেলে শংকর দাস বলেন, ‘মেঘনা নদীতে আগের মতো ইলিশ নেই। অনেক সময় সারারাত জাল ফেলে একটাও মাছ পাই না। নৌকা, তেল, বরফ সব খরচ নিজের ঘাড়ে, কিন্তু মাছ না থাকায় লোকসান দিতে হচ্ছে।’
মরিচাকান্দি ঘাটের জেলে জীবন মিয়া বলেন, ‘জীবন ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামি, কিন্তু জাল খালি উঠে। বর্ষায় মাছ পাওয়ার কথা, কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে পানিতেও মাছ নেই, জালেও নেই।’
বাঞ্ছারামপুর বাজার মৎস্য আড়তদার লিটন সরকার বলেন, ‘নদীতে এখন মাছের সিজনকাল। এ সময়ে মাছ কম ধরা পড়ে। সেই জন্য বাজারে ইলিশের সরবরাহও কম, তাই দাম বেশি। আমরাও চাই সস্তায় বিক্রি করতে, কিন্তু মাছ কম থাকলে আমরাও বেশি দামে কিনি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। আমদেরও কষ্ট লাগে।’
রোকসানা আমিন নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাজারে এসেছিলাম ইলিশ কেনার জন্য। কিন্তু দাম শুনে মাথা ঘুরে গেছে। এত দামে ইলিশ কেনা সম্ভব না। তাই চাষের রুই, কাতলা কিনে চলে যাচ্ছি। এক কেজি ইলিশের দাম একমণ চালের দামেরও বেশি।’
স্থানীয় একাধিক ক্রেতা শামিম শিবলী, নাসির উদ্দিনসহ অনেকে বলেন, ‘এভাবে দাম বাড়লে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ইলিশও যেন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়। খাইতে মন চায় কিন্তু সাধ্যে মধ্যে নাই।’
অপরদিকে, মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন— কিছুদিন অপেক্ষা করলে নদীতে মাছের পরিমাণ বাড়বে এবং দাম কিছুটা সহনীয় হবে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নজরদারি ও ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কারা বাজার তদারকি করেন তাদের আমরা চিনিই না।
এ বিষয় বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদা ইসলাম বলেন, ‘নদীর পানির মান খারাপ হওয়া, অপরিকল্পিত নিষেধাজ্ঞা এবং অবৈধ উপকরণের ব্যবহারের কারণে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি অবৈধ জাল ও চাঁই অপসারণে। সরবরাহ কম হলে দাম বাড়িয়ে দেয় ইলিশ ব্যবসায়ীরা। এটা ঠিক নয়।’
কেকে/ এমএস