সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
রাজধানী
‘মেয়ের পর ছেলেটাও চলে গেলো, আমি এখন কী নিয়ে বাঁচবো’
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৬:৫১ পিএম আপডেট: ২৩.০৭.২০২৫ ৬:৫৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

‘গতকাল রাতেও আমার ছেলেকে রক্ত দেওয়া হয়। ডাক্তাররা বলছিল জানাবে। কিন্তু জানিয়েছে ছেলে মারা গেছে...। আমার মেয়েটা একদিন আগে চলে গেলো। এর পরদিন রাতে ছেলেটাও চলে গেলো। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো?’

বুধবার (২৩ জুলাই) কথাগুলো বুকে পাথর চাপা দিয়ে বলছিলেন বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত নাজিয়া-নাফির মা। বারবার গলা আটকে আসছিল, হারিয়ে ফেলছিলেন কথা বলার শক্তি। একদিনের ব্যবধানে দুই আদরের ধনকে হারানোর বেদনার কোনো মাপকাঠি হয় না।

১৩ বছর আগে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আশরাফুল ইসলাম দম্পতির কোল আলো করে পৃথিবীতে এসেছিল নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম। নিঝুমের জন্মের চার বছর পর কোলজুড়ে আসে ছেলে আরিয়ান আশরাফ নাফি (৯)।

নাজিয়া-নাফির বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়িয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। ভর্তি করেছিলেন দিয়াবাড়ি কামারপাড়া বাসার কাছাকাছি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। নাজিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর নাফি পড়তো ইংলিশ ভার্সনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

যে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিনরাত সময় কেটেছে বাবা-মায়ের, আজ তারা নিঃস্ব। পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ। যেন কেউ নেই তাদের সঙ্গে। শোকে পাথর পুরো পরিবার।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত নাজিয়ার নিজেরও ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবে। সাদা অ্যাপ্রোন পরে বলতো ‘ভয় নেই, আমি আছি।’ সব ভয়কে জয় করে নাজিয়া ও তার ছোট ভাই পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে।

নাজিয়া-নাফির মা ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলেন, ‘ঘটনার দিন দুই ছেলেমেয়ে স্কুলে ছিল। আমি ওদের বাসায় নিয়ে যেতে স্কুলে যাই। আমি স্কুলের ওয়েটিং রুমে বসে ছিলাম। ছেলেকে (নাফি) বলছিলাম মেয়েকে (নাজিয়া) আনার জন্য। মাঝে মধ্যে ওর বোনকে রিসিভ করে নিয়ে আসতো।’

ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে বিমান এসে বিধ্বস্ত হয়। স্কুল থেকে তাদের নিয়ে আর বাসায় যাওয়া হয়নি। গন্তব্য ছিল হাসপাতাল। সেখানেই সব শেষ।

সোমবার আহত হওয়ার পর নাজিয়া ও তার ভাই নাফিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেদিনই রাত ৩টার দিকে নাজিয়া মারা যায়। আর মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকে তার ছোট ভাই নাফি। তবে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টার দিকে নাফিও পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, ‘উত্তরা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ নাজিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ বার্ন হয়েছিল। আর নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ ফ্লেম বার্ন ছিল।’

নাজিয়া-নাফির বাবা-মা নন, পরিবারের অন্য সদস্যরা ভেঙে পড়েন। দুই শিশুর মামা মো. ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘আমাদের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমার বোন ও দুলাভাই দুজনই ভেঙে পড়েছেন। সবার কাছে দোয়া চাই। মঙ্গলবার নাজিয়ার জানাজা শেষে উত্তরায়ই দাফন করা হয়েছে। আজ নাফির জানাজার পরে বোনের পাশেই তার দাফন সম্পন্ন হবে।’

নিহত নাজিয়া ও নাফির দাদা এ কে এম আলতাফ হোসেন মাস্টার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ওদের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম নিরবের ইচ্ছা ছিল ছেলেমেয়েকে ভালো স্কুলে পড়িয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। সে জন্য ১৫-১৬ বছর আগে থেকে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি কামারপাড়া এলাকায় বাসাভাড়া করে বসবাস করছিল। ছেলেমেয়েকে ভর্তি করেছিল কাছাকাছি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কিন্তু আজ আমাদের সবার সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। নাতি-নাতনিকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব।’

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে বিধ্বস্ত হয়। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৯ জন।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  মাইলস্টোন   বিমান বিধ্বস্ত   নিহত  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মধ্যরাতে ঢাবি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার

রাজধানী- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close