রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫,
১৯ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: এনসিপি-ছাত্রদলের সমাবেশ আজ      নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি      এক দফা ঘোষণা      চব্বিশের স্মরণে ২৪ দফা ইশতেহার দেবে এনসিপি      রোববার শাহবাগ এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ      ৫ আগস্ট বিকালে ঘোষণা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র      জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন      
খোলাকাগজ স্পেশাল
মাইলস্টোনে বিক্ষোভ, রণক্ষেত্র সচিবালয়
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৯:০৬ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সচিবালয় এলাকা। এ ঘটনায় আহত ৭৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া গতকাল মাইলস্টোন স্কুলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন দুই উপদেষ্টা। এ সময় তারা দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। 

সচিবালয়ের সামনে লাঠিপেটায় আহত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। সামির নামের একজনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- মো. হাসান, তানভীর, সাকিব, বেরাতুল, রিফাত, আবির মাহমুদ, তানভীর, রিফাত, বিজন, তামিম, ইমন, সিয়াম, মেহেদী, সাদমান, সামিরা, মারুফ, সাকিব, মাহিম, রোহান, হাসিব, সায়েম, জিদান, রায়হান, রোমান, প্রান্ত, মাহিদ অনতু, বিশাল, ইমরান, আহনাদ, মাহি নাঈম, সাফি, স্বাধীন, তাসিন, ইমরান, ধ্রুব, শান্ত, তামিম, তন্ময়, জিসান, আজাহার, শাহেদ খান, জিসান, পারভেজ, নাঈম, নিহান, নাফিজ, ইমাদ, শাহিন। এদের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। 

গতকাল বিকাল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেন। ওই এলাকায় সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলও ছোড়া হয়েছে। 

ঢাকা মেডিকেলে মেহবুব ইমন নামের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, গত সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনার পর গভীর রাতে হঠাৎ করে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সে কারণেই শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগের দাবিতে সব কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে সচিবালয় ঘেরাও করেছিলেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান।

এর আগে বিকাল পৌনে চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা ফটক খুলে সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর সচিবালয়ের ভেতর পার্কিং অবস্থায় থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গাড়ি ভাঙচুরের জেরে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সচিবালয় থেকে বের করে দেন। এরপর সচিবালয়ের সামনে পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ ও ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব 

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে দিনভর আটকে থাকার পর সন্ধ্যায় পুলিশের পাহারায় উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বের হয়েছেন দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আটকে ছিলেন তারা। বাইরে চলছিল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। বিকালে একবার কলেজ থেকে বের হওয়ার পর দিয়াবাড়ি মোড়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ফিরে এসেছিলেন দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব। এরপর তারা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবন ৭-এর দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নেন। তাদের গাড়িগুলো কলেজ ক্যাম্পাসে রাখা হয়। তখন থেকে একাডেমিক ভবন ৭-এর পাশাপাশি ভবন ৫-এর সামনেও ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। পাশাপাশি র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদেরও ক্যাম্পাসে সক্রিয় দেখা যায়। 

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে নিচে নেমে আসেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা। সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে তারা কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। কলেজের প্রধান ফটক থেকে বের হয়ে তাদের গাড়িবহর দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ডিপো দিয়ে পার হয়ে যায়। 

গত সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। উদ্ধার তৎপরতা চলার সময় মাইলস্টোনের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল। এর মধ্যে সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সভা-সমাবেশ, দলবদ্ধ কর্মসূচি কিংবা অবস্থান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, দিয়াবাড়ি গোলচত্বর ও আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের জমায়েত বা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। পরে শিক্ষার্থীরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন। 

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সি আর আবরার ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যান। তারা সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে ধরেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন।

শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি জানান। এসব দাবি হলো, নিহত ব্যক্তিদের সঠিক নাম-পরিচয় প্রকাশ; আহত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা; শিক্ষার্থীদের প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ; বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু এবং বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও কেন্দ্র সংস্কার করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু, শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলার ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া।

দুই উপদেষ্টা পরে কলেজের ৫ নম্বর ভবনের নিচতলায় কনফারেন্স কক্ষে যান। তাদের সঙ্গে কলেজের শিক্ষকরাও ছিলেন। সেখানে পাঁচ থেকে সাতজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সঙ্গে তাদের আলোচনা চলে। এ সময় বাইরে শত শত শিক্ষার্থীকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। বেলা পৌনে একটার দিকে উপদেষ্টারা কনফারেন্স কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা প্রতিটি দাবি পূরণ করব। বিশ্বাস রাখেন।’ 

পরে বেলা সাড়ে তিনটার কিছু আগে কলেজ থেকে বের হন দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এ সময় কলেজের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়নি। উপদেষ্টাদের গাড়ি দিয়াবাড়ি মোড়ে গেলে বিকাল পৌনে চারটার দিকে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা আইন উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। তাদের বাধার মুখে দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মাইলস্টোনে ফিরে এসে একাডেমিক ভবনে অবস্থান নেন। 

জিপিও মোড়ে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ

সচিবালয়ে লাঠি চার্জের পর জিপিও মোড়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। শিক্ষার্থীরাও পুলিশের দিকে পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে একদল পুরানা পল্টন মোড়ের দিকে এবং আরেক দল বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের দিকে সরে যান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে। 

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

এনসিপি-ছাত্রদলের সমাবেশ আজ
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি
এক দফা ঘোষণা
ভেড়ামারায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মা—ছেলের মৃত্যু
‘জনগণই খুনি হাসিনাকে গণভবন থেকে নামিয়ে এনেছে’

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরের প্রভাবশালী আ.লীগ নেতা পঁচা দেলু গ্রেফতার
উখিয়ায় জামায়াতের পথসভায় জনস্রোত
মৌলভীবাজারে পৃথক দুর্ঘটনায় ২জনের মৃত্যু
‘শিল্পীর দূরদৃষ্টিতে ফেলনা বলতে কিছু নেই’
চাটমোহরে ভাঙা রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close