রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ তবুও ছাত্রসংগঠন গুলোর কার্যক্রম চলমান থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরব ভূমিকার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালকের চেয়ারে শাড়ী ও চুড়ি পড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২০ জুলাই) বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ গেটে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শেষে এমন কর্মকাণ্ড করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীদের, ‘ক্যাম্পাসে রাজনীতি চলে, প্রশাসন শাড়ী পরে’, ‘লেজুড়ের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না ’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দিব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’ , ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় শামসুর রহমান সুমন বলেন, আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠন তাদের কার্যক্রম চালালেও প্রশাসন কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। সেই ক্ষোভের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে শাড়ী ও চুড়ি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। এর কারণ আমরা মনে করি তারা শাড়ী ও চুড়ি পরে বসে আছে। যদি এ প্রশাসন তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করতে না পারে তাহলে তাদের দায়িত্বে থাকার দরকার নাই। আপনারা পদত্যাগ করুন এবং যারা আমাদের এ অভ্যুত্থানের সাথে একাত্মতা করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে পারবে তারাই এ প্রশাসনে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, জুলাই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম সূতিকাগার। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবী ছিল অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা এবং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা। তার-ই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠন তারা ক্যাম্পাসে কমিটি দেওয়া থেকে শুরু করে সদস্য ফরম বিতরণ করছে। এর ফলে এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা এই ক্যাম্পাসে আর দ্বিতীয় কোনো আবু সাঈদকে দেখতে চাই না। আমরা চাই না যে শিক্ষার্থী ন্যায্যতার কথা বলবে তার গলা চেপে ধরা হবে যেভাবে আবু সাঈদের গলা চেপে ধরা হয়েছিল গত ১১ জুলাই। শিক্ষার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ চাই, শিক্ষা, গবেষণা, মননশীলতার মধ্য দিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি চর্চার জন্য অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে যে সকল ছাত্র সংগঠন কাজ করবে সে সব ছাত্র সংগঠন কেবল ছাত্র সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবে।
আশিকুর রহমান আশিক বলেন, আমরা স্পষ্টত জানি, এ লেজুড়বৃত্তিক এই নোংরা ছাত্ররাজনীতির কারণে আমরা আবু সাঈদকে হারিয়েছি। আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির কোনো স্থান হবে না। আমরা লক্ষ্য করেছি বর্তমান প্রশাসন আরো লেজুড়বৃত্তি ছাত্র সংগঠনকে প্রশাসন আরো প্রটোকল দেয়। প্রশাসন তাদেরকে প্রশ্রয় দেয় বলেই তারা এভাবে তাদের কার্যক্রম চালাতে সাহস পাচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই আপনারা না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন। যারা আমাদের শিক্ষার্থীদের দাবী ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ক্যাম্পাস চালাতে পারবে এমন প্রশাসন-ই চাই। আপনারা না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন তবুও আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাই না। আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের তাল-বাহানায় এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। যদি অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা না হয় তাহলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাবী আদায়ের জন্য আবারো মাঠে নামবে।
উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় লেজুরবৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
কেকে/ এমএস