রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা      নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ফিরে দেখা গণ-অভ্যুত্থান
রক্তে রঞ্জিত রাজপথ
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ১২:০৫ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৮ জুলাই ২০২৪ সারা দেশে পালিত হয় শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের ঢেউ। সারা দেশের রাজপথে নামেন শিক্ষার্থীরা। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দিলেও, হামলা, গুলি, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বর্বরতা, প্রিয় মুখগুলোর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব বিভাগীয় শহরে অচল হয়ে যায় জনজীবন। আন্দোলনের মাত্রা, বিস্তার ও প্রভাব দেখে দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আগের দিন ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে ১৮ জুলাইয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং খুনিদের বিচারের দাবিতে ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করা হবে।’ তিনি স্পষ্ট করে দেন, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। সারা দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক : কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে ঢাকায় দিনভর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার মেরুল বাড্ডায় ভয়াবহ সংঘর্ষে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছুড়ে পাল্টা প্রতিরোধ করেন। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি ভবনে পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে তাদের হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে র‌্যাব। বাড্ডা, রামপুরা, বসুন্ধরা, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কাজলা, মতিঝিল, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, আইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধে অংশ নেন। পুড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক পুলিশ বক্স ও হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা। বিটিভির ক্যানটিনেও আগুন দেওয়া হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় নগরজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। সচিবালয়সহ প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলোতেও আতঙ্ক ও অচলাবস্থা দেখা দেয়। মন্ত্রিসভার নির্ধারিত বৈঠকও বাতিল করা হয়। সব মিলিয়ে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র উদ্বেগ, আতঙ্ক ও অস্থিরতা।

আন্দোলনের বিস্তার ও প্রতিক্রিয়া : সরকার ১৬ জুলাই থেকেই দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। শুরুতে শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের চাপে তারা হল ছাড়তে বাধ্য হন।

সরকার ভেবেছিল, হল বন্ধ করলে আন্দোলন থেমে যাবে। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় ১৮ জুলাই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার পর থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি পয়েন্টে একযোগে অবরোধ শুরু করেন। ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, আইইউবি, ইউআইইউ, এআইইউবি, সাউথইস্ট, আহসানউল্লাহ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল, কানাডিয়ান, প্রেসিডেন্সি, ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। রাস্তায় শক্ত অবস্থান নেন তারা। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরেও একই রকম অবরোধ ও বিক্ষোভ চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

সরকারি স্থাপনা ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন-ভাঙচুর: কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরকারি স্থাপনা ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়।

রামপুরায় বিটিভির মূল গেট, ক্যান্টিন, রিসিপশন ও একটি গাড়িতে আগুন এবং ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা। ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় আন্দোলনের কারণে। মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ও বনানীর সেতু ভবনে আগুন দেওয়া হয়। দুই দিনে রাজধানীতে ২৫টি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশের গাড়িও পোড়ানো হয়। 

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি), পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় ও জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর ও হামলা হয়। পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরানো হয়। রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস, ছাত্রলীগ কার্যালয় ও প্রেস ক্লাব এলাকায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষে ১২ জন আহত, সাংবাদিকও হামলার শিকার হন। লালমনিরহাট (হাতীবান্ধা) উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর, জানালার গ্লাস ও ব্যানার-পোস্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রক্তাক্ত রাজপথ : ১৮ জুলাইয়ের সেই ভয়াবহ দিনে সহিংসতায় সারা দেশে প্রাণ হারান অন্তত ২৭ জন, যার মধ্যে শুধু ঢাকাতেই নিহত হন ১৯ জন। প্রাণ হারানোদের বেশিরভাগই ছিলেন তরুণ শিক্ষার্থী স্বপ্নে ভরা ভবিষ্যৎ যাদের সামনে বিস্তৃত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেদিন তা থেমে গেলো হঠাৎই। ঢাকার এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র ইয়ামিন (২৪) পুলিশের ছররা গুলিতে নিহত হন। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে নিহত হন জিল্লুর শেখ মাত্র দুই দিন আগে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ফারহান ফাইয়াজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র, সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, বিইউপির এক নিরীহ ছাত্র, আহতদের পানি দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন মাথায় আর উঠে দাঁড়াননি।

সাংবাদিক হাসান মেহেদী, যিনি ঢাকা টাইমসে কাজ করতেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। ঢাকার বাইরে, নরসিংদীতে নিহত হন কিশোর তাহমিদ ভূঁইয়া (১৫) ও তরুণ ইমন আহমেদ (১৮)। এ শিক্ষার্থীদের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা দেশ। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে তাদের রক্তমাখা ছবি, ভিডিও ও বন্ধুদের শেয়ার করা শেষ কথাগুলো। শোকাহত মায়েদের কান্না, অসহায় বন্ধুবান্ধবদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে গোটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। 

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তাব : আওয়ামী লীগ ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, কোটা পদ্ধতি ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। ৮০ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। ওবায়দুল কাদের এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত এই আন্দোলনে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংলাপের আহ্বান জানালেও আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেন, ‘শহিদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কোনো সংলাপ নয়। সরকারকে রাজপথ থেকে পুলিশ সরিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

ইন্টারনেট বন্ধ : ১৮ জুলাই রাত ৯টার পর থেকেই দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোবাইল ডেটা, ব্রডব্যান্ড, ওয়াইফাই সব মাধ্যমেই ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন ট্রান্সফার, সংবাদ পাঠানো এবং প্রয়োজনীয় যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। আন্দোলনের আপডেট পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণ মানুষও পড়ে বিপাকে।

পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা : এ সংঘর্ষগুলোতে পুলিশ সরাসরি গুলি চালায় এবং টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। একইসঙ্গে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন, বিশেষ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা, আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। অনেক স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে তাদের আহত করা হয়।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  ফিরে দেখা   গণ-অভ্যুত্থান   রক্তে রঞ্জিত   রাজপথ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সিরাজদিখানে সাহেব আলী হত্যা, প্রধান আসামিসহ দুইজনের জামিন নামঞ্জুর
পদত্যাগ করে নির্বাচনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
‎টঙ্গীতে শিক্ষককে মারধর করে পুলিশে দিল ছাত্রজনতা
বিয়ে ছাড়াই সংসার করার অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

সর্বাধিক পঠিত

সাপ্টিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম
রাজশাহীতে চার পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ
রায়েরবাজারে দুই মাস ধরে অর্ধসমাপ্ত সাদেক খান সড়ক
মৌলভীবাজারে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন
চলনবিলে পাখি শিকারের ফাঁদ ধ্বংস, বক ও ঘুঘু উদ্ধার
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close