সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে যেভাবে সামাজিক ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় সূত্র। অভিযোগের তলদেশে গেলে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র, যা ইচ্ছাকৃতভাবে রেলওয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে বলেও দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
সূত্র জানায়, ১৭ জুন ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার বনগাঁও গ্রামে রেলওয়ের জমির সীমানা ঘেঁষে গাছ কাটার অভিযোগ ওঠে। রেলওয়ে পিডব্লিউ বিভাগের নির্দেশনায় পুলিশ গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে এবং জিম্মায় রেখে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে প্রকৌশলী দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।
কিন্তু পরবর্তীতে রতন মিয়া ও তার পরিবার দাবি করেন, ওসি তাদের ১০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং ৫ হাজার টাকা দিলে গাছ কাটায় ছাড়পত্র দেন। যদিও এ বিষয়ে তারা কোনো লিখিত অভিযোগ বা আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ দিতে পারেননি।
রেলওয়ে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, গাছটি সরকারি জমির সীমার মধ্যে রয়েছে কিনা—তা নিয়ে সংশয় ছিল। এ কারণে পুলিশ সরাসরি জড়িত না হয়ে আইডব্লিউ (ইনসপেকশন ওয়ার্কস) ও পিডব্লিউ (পাবলিক ওয়ার্কস) বিভাগকে নির্দেশনা দিতে বলে। এর বাইরে কোনো আর্থিক লেনদেনের তথ্য তাদের কাছে নেই।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই রেলওয়ে জমি দখল ও গাছ কাটায় জড়িত। এবার যখন পুলিশ গিয়ে বাধা দেয়, তখন উল্টো অভিযোগ তুলে ঘটনাটি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।
রেলওয়ের পিডব্লিউ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান রাজন বলেন, আমি কেবল তথ্য পেয়েছি যে রেলওয়ের জায়গার কাছাকাছি গাছ কাটা হচ্ছে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়। কে টাকা নিল বা দিলো—এই প্রসঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এদিকে রেলওয়ে থানা সূত্র দাবি করেছে, যাদের অভিযোগে প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য গঠিত, তারা পূর্বেও একাধিকবার পুলিশের কার্যক্রমে বাধা দিয়েছে এবং ‘মিডিয়া চাপ’ তৈরি করে স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করেছে। থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগের ব্যাপারে বিভাগীয় উর্ধ্বতন দফতরকে অবহিত করেছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছে।
ওসি লিটন মিয়া বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি নিয়ে সরকারি দফতর থেকে জানানো হলে আমরা রুটিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। পরবর্তীতে যারা আসে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয় প্রকৌশলী বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক।
স্থানীয় সুশীল সমাজ বলছে, নানা অভিযোগের আড়ালে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চলছে। সত্য উদঘাটনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।
একতরফা অভিযোগে যখন সরকারি কর্মকর্তাদের নামে অপপ্রচার ছড়ায়, তখন সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো সাংবাদিকতার নৈতিক দায়িত্ব। রেলওয়ে থানার ওসির বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগটিরও প্রয়োজন নিরপেক্ষ তদন্ত, যেন কেউ হয়রানির শিকার না হন এবং কোনো দোষীও যেনো ছাড় না পায়।
কেকে/এজে