চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্ন ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। পরীক্ষার আগের দিন গভীর রাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় খুলে গোপন মিটিং ও পরীক্ষার দিনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে নির্দিষ্ট পরীক্ষার্থীদের অসদুপায়ে সহযোগিতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জেলার সদর ও দামুড়হুদা উপজেলার ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬তম গ্রেডে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ পদে মোট ৩৯টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করেছিলেন ১৩ হাজার ৬৬৮ জন চাকরিপ্রত্যাশী। প্রতি পদের বিপরীতে প্রতিযোগিতা করেছেন প্রায় ৩৫০ জন। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়, যার ফলাফলের ভিত্তিতে উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে ডাকা হবে।
তবে পরীক্ষার আগের রাতেই চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস খোলা রেখে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ও গোপন বৈঠক নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। সাধারণত সন্ধ্যার পর ওই কার্যালয় বন্ধ থাকার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত অফিস খোলা ছিল।
এছাড়া অনেক প্রার্থী অভিযোগ করেন, তাদের পরীক্ষার কেন্দ্র ও সিট প্ল্যান দুই দফা পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কিছু প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র পরিবর্তনের বিষয়টি এসএমএসের মাধ্যমে জানানোর পরও পরীক্ষার দিন তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। পরীক্ষাকক্ষের অনিয়ম তুলে ধরে শুক্রবার ও শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আয়েশা হুসাইন নামে এক চাকরিপ্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘৩০২ নম্বর কক্ষে এক পরীক্ষক একজন পরীক্ষার্থীকে উত্তর বলে দিচ্ছিলেন। আমি প্রতিবাদ করলে কিছু সময় থেমে যান, আবার চেষ্টা করেন। পরে হল পরিদর্শক এলে আমি অভিযোগ করি এবং তারা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষককে নিয়ে বেরিয়ে যান।’ তিনি আরো প্রশ্ন তোলেন, ‘সিভিল সার্জন অফিস রাত দুইটা পর্যন্ত খোলা ছিল কেন?’
এসব অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত দাবি করেছেন সাধারণ নাগরিক ও ছাত্র সংগঠনগুলো। চুয়াডাঙ্গা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র তামান্না খাতুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ ও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চুয়াডাঙ্গা আগেই তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। যেই কোটা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশে হাজারো ভাই-বোন শহিদ হয়েছে এবং আহত হয়েছে। এই বাংলায় সেই দুর্নীতি আর চাই না।
ওই নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মৌখিক অভিযোগ ইতোপূর্বে আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গা জেলার সম্মানিত জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন মহোদয়কে অনুরোধ জানিয়েছি। এবং বলেছি, সে যেই হোক, দুর্নীতির প্রমাণ পেলে চুয়াডাঙ্গার ছাত্র-জনতা আইনগতভাবে তাকে ছাড় দিবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজকের পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদের থেকে পরীক্ষার হলে পরীক্ষক কর্তৃক প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করার অভিযোগ এসেছে। চুয়াডাঙ্গা কামিল মাদ্রাসার ৩০২ নম্বর কক্ষে কী হয়েছিল, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এবং যারা চুয়াডাঙ্গায় নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা গোপনে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছেন, তারা ধরা পড়বেনই।
আরো উল্লেখ্য, ম্যাসেজে প্রবেশপত্রে উল্লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তনের কারণ এবং পরীক্ষার আগের রাতে সারা রাত সিভিল সার্জন অফিসে কর্মকর্তারা কী করছিলেন, এটার জবাব জনগণ চায়। আমরা কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপরে প্রত্যক্ষ দোষারোপ করছি না। তবে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা তাদের কাছে জবাবদিহিতাপূর্বক তাদের স্বচ্ছতার অবস্থান জানতে চাই। আমরা চাই- টাকার জোরে নয়, মেধার জোরে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯টি কর্মসংস্থান হোক।’
এসব বিষয়ে জানতে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় বিষয়টি নিয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব।’
কেকে/এআর