বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সমাজেও প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও নৈতিকভাবে ভয়াবহ এক কর্ম সমকামিতা আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ, কিছু এনজিও ও বিদেশি প্রভাবিত গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির মানুষ তরুণ সমাজকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদের কারণে বহু তরুণ-তরুণী নিজেদের বিশ্বাস, চরিত্র ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে ফেলছে।
ইসলাম এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইন সমকামিতাকে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একই সঙ্গে ইসলাম এ থেকে বাঁচারও পথ বাতলে দিয়েছে।
সমকামিতা শুধুই একটি ব্যক্তিগত প্রবণতা নয়, এটি একটি ভয়াবহ সামাজিক, নৈতিক ও
ধর্মীয় বিপর্যয়ের নাম। ইসলাম এই পাপ থেকে বাঁচার সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়েছে।
আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থারও উচিত এই ব্যভিচার রোধে কঠোর অবস্থান
নেওয়া। সর্বোপরি, ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে—এই
অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে।
ইসলামের দৃষ্টিতে সমকামিতা
১. প্রকৃতি বিরুদ্ধ অপরাধ : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের মধ্যে বিবাহ ও পরিবার গঠনের একটি পবিত্র ও স্বাভাবিক পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন—একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে বৈধ বিবাহ। এর বাইরে গিয়ে সমলিঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা প্রকৃতি ও মানবিকতার বিরুদ্ধে।
২. কুরআনে সমকামিতার শাস্তির বর্ণনা : লুত (আ.)-এর জাতি সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, অতঃপর যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি জনপদের উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ ওপরে উঠালাম এবং তার ওপর স্তরে স্তরে কাঁকর-পাথর বর্ষণ করলাম।’ (সূরা হুদ : ৮২)
৩. রাসূল (সা.)-এর কঠোর হুঁশিয়ারি : ‘যে ব্যক্তি লুত সম্প্রদায়ের কাজে লিপ্ত হবে, আল্লাহর অভিশাপ তার ওপর বর্ষিত হবে।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস সহি)
হাদিসে রাসূল (সা.) আরো বলেন, তোমরা যাকে লুত সম্প্রদায়ের কাজে লিপ্ত দেখতে পাবে, তাকে এবং তার সঙ্গীকেও হত্যা করো। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
সমকামিতার স্বাস্থ্য ঝুঁকি
সমকামী আচরণ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ীও ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে, যেমন : এইডস, এসটিডি, মানসিক বৈকল্য, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে শাস্তি
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী ‘যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় প্রকৃতির নিয়মবহির্ভূতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা পশুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর শাস্তি আমরণ কারাদণ্ড বা দশ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।’
সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থাকলে করণীয়
১. ধৈর্য ধারণ করে নিজেকে সংযত রাখা এবং আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করা।
২. রোজা রাখা—যা যৌন বাসনা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৩. একাকিত্ব এড়িয়ে চলা এবং দীন ও উপকারী কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।
৪. পাপমুখী সঙ্গ ত্যাগ করা এবং সৎ সঙ্গী গ্রহণ।
৫. অশ্লীল ছবি, ভিডিও, গান ও বই থেকে দূরে থাকা।
৬. যৌন উদ্দীপক খাবার এড়িয়ে চলা।
৭. নিয়মিত নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে আত্মিক শক্তি অর্জন।
৮. আল্লাহর কাছে মুক্তির জন্য কাতর হয়ে দোয়া করা।
আল্লাহ বলেন, ‘তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দান করা হবে... সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সূরা আল-ফুরকান : ৭৫-৭৬)
সমকামিতা শুধুই একটি ব্যক্তিগত প্রবণতা নয়, এটি একটি ভয়াবহ সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় বিপর্যয়ের নাম। ইসলাম এই পাপ থেকে বাঁচার সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়েছে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থারও উচিত এই ব্যভিচার রোধে কঠোর অবস্থান নেওয়া। সর্বোপরি, ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে—এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে।
কেকে/এএম