দৈনিক খোলা কাগজ-এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর অবশেষে সহায়তা পেলেন জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হওয়া ১১ বছর বয়সী সাব্বির আহমেদের পরিবার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হাসান নিহত সাব্বিরের পরিবারের হাতে দুই মাসের খাবার ও এক বছরের বাসাভাড়ার অর্থ সহায়তা তুলে দেন।
শনিবার (২১ জুন) বিকালে এই সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয় মোহাম্মদপুরের আজিজ খান রোডে থাকা সাব্বিরের পরিবারকে।
এর আগে গত ১৮ জুন খোলা কাগজ ‘সন্তান কবরে—পেয়েছি হয়রানি’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে উঠে আসে সহায়তা না পাওয়া ও হয়রানির শিকার এক শহীদ পরিবারের করুণ চিত্র।
প্রতিবেদনটি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা খোলা কাগজের প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে সাব্বিরের বাসাবাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে কেন্দ্রের নির্দেশে সরাসরি সহায়তা পৌঁছে দেন যুবদলের নেতারা।
নিহত সাব্বির আহমেদ ধানমন্ডি এলাকায় হেঁটে হেঁটে চা বিক্রি করত। রিকশাচালক বাবা মোহাম্মদ নূর আলম ও ৪ সন্তানের অভাবী পরিবারে ১১ বছরের এই কিশোরই ছিল ভরসা। গত বছরের ২০ জুলাই ধানমন্ডি ১৩ নম্বরে একটি গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় ঘটনাস্থলে গিয়ে পিছন থেকে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সে। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা খোলা কাগজকে বলেন, আমার ছেলেকে আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে লাশ শনাক্ত করি। এরপর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করি।
নিহতের পরিবার জানায়, জুলাই ফাউন্ডেশন কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি তারা। যদিও জামায়াত ইসলামী কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, তবে সরকারি কোনো ত্রাণ বা প্রণোদনার ছায়াও পড়েনি।
বাবা নূর আলম বলেন, দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হলো, কিন্তু আমাদের কিছুই হলো না। আমার সন্তান কবরে, আর আমরা কেবল হয়রানি আর দৌড়ঝাঁপ করছি।
সাব্বির হত্যা মামলার বাদী তার নানা জয়নাল শেখ ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)।
খোলা কাগজকে তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, মামলাটি ধানমন্ডি থানায় হলেও ডিবি থেকে আমাদের কাছে এসেছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তবে কতজন আসামি গ্রেফতার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সাব্বিরের পরিবার জানায়, সরকারি শহিদ পরিবারের স্বীকৃতি, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য অন্তত ৩০ থেকে ৪০ বার জুলাই ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগে ঘুরেছেন তারা। কিন্তু কোনো সুফল মেলেনি। হতাশা নিয়ে তারা বলেন, আমরা এখনো বিচার চাই। চাই আমাদের মতো শহিদ পরিবারগুলোকে সরকার সম্মান ও সহায়তা দিক।
কেকে/এএম