আলোচনা শুরু হয়েছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। আগামী বছরের শুরুর দিকে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সম্ভাবনা দিন দিন জোরালো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময় নিয়ে অনেকটা ঐকমত্যে পৌঁছেছে বর্তমান দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার।
এ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বৃহত্তর ঐক্য গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করেছে দেশের ইসলামি দলগুলো। চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত, নানা বিশ্লেষণ। কয়েকটি ইসলামি দল ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠকে এর প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টি। তবে এখন পর্যন্ত এ ঐক্যপ্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেয়নি দেশের প্রধান ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। যদিও দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- জামায়াত অভ্যন্তরীণভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা ও আলাপ-আলোচনা সবকিছু ঠিক থাকলে ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য হতেও পারে।
সূত্র বলছে, নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের সমন্বিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি নির্দিষ্ট ‘ভোটবাক্স’ নির্ধারণ এবং আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার উদ্যোগে এগোচ্ছে দলগুলো। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হলেই সমন্বিতভাবে একটি জোট গঠনের আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ দেখা যেতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামি দলগুলোর এ ঐক্যচেষ্টা একদিকে যেমন ধর্মীয় ভোটব্যাংকে প্রভাব ফেলবে, অন্যদিকে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকেও কৌশল পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করবে। কারণ নির্বাচনি মাঠে যদি তারা সম্মিলিতভাবে অংশ নেয়, তবে তা বেশকিছু আসনের ফলাফলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তবে এ ঐক্য কতটা কার্যকর হবে এবং মাঠপর্যায়ে তা কতটা প্রতিফলিত হবে- তা নির্ভর করছে দলগুলোর অবস্থানের ওপর।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের খোলা কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচনের তো এখনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি। তাছাড়া সংস্কারের বিষয়গুলো এখনো ফাইনাল হয়নি। আর এসব বিষয়ে সমাধান না আসা পর্যন্ত এটা নিয়েও (ইসলামি ঐক্য) ফাইনালি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ইসলামি দলগুলোসহ সবার সঙ্গেই প্রাথমিক আলাপ আলোচনা চলছে।’
যেভাবে আলাপ-আলোচনা চলছে এতে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য হতে পারে জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর এ নেতা বলেন, ‘একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তারপরও অনেক আলাপ-আলোচনা, দও কষাকষি; অনেক বিষয় আছে। তখন বিষয়টা আরো ভালোভাবে বলা যাবে।’
এদিকে চলতি মাসের ২৫ তারিখ ইসলামি ঐক্য নিয়ে গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির একটি বৈঠক রয়েছে জানিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে ধারাবাহিক আলোচনা চলছে এবং আমরা অনেকটা অগ্রসর হয়েছি।’ আগামী লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক ৫ দলের বাইরে নতুন কোনো দলের প্রতিনিধি থাকবেন কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমাদের ৫টি দলের মধ্যেই আলোচনা চলতেছে। আশা করা যায়- পরবর্তীতে হয়ত আরো অনেকেই যুক্ত হবেন।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের খোলা কাগজকে বলেন, ‘ঐক্য নিয়ে পজিটিভলি আলোচনা অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে একটু সময় লাগবে। তবে এটি কোনো জোট না, নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের সমন্বিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি নির্দিষ্ট ‘ভোটবাক্স’ নির্ধারণ এবং আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার সমঝোতা হবে।’
এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা এখনো হয়নি, তবে কথা হচ্ছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী খোলা কাগজকে বলেন, ‘ঐক্য নিয়ে হোমওয়ার্ক চলছে এবং সম্ভাবনাও আছে। বাকি এতে কতগুলো দল যুক্ত হবে, এটা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে বলা যায়- ইসলামি দলগুলোর বৃহত্তর একটি ঐক্য হবে।’
ঐক্যপ্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না— জানতে চানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আশা করা যায়, সবাইকে নিয়েই ঐক্য হবে- ইনশাআল্লাহ।’
কেকে/এজে