সম্প্রতি কক্সবাজারের রাম উপজেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে গর্জনিয়া পর্যন্ত সড়কের অনিয়ম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে এসেছে। শুধু এটাই নয়, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এলজিইডির যেসব কাজ চলমান, তার প্রায় অধিকাংশ কাজে এমন অনিয়ম দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়ায় এলজিইডির সাড়ে আট কোটি টাকার প্রকল্পে হরিলুট শুরু হলে বিষয়টি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর নজরে আনেন এলাকাবাসী। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তারপর থেকে সেখানে উন্নতমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চলমান শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্রামীণ সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের (আর.সি.আই.পি) তত্ত্বাবধানে এডিবি ও জিওবির অর্থায়নে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী পশ্চিম বড়ার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ভেওলা-ঢেঁমুশিয়া-কোনাখালী-বাঘগুজারা (পেকুয়া সংযোগ সড়ক) বিসি দ্বারা ৫.৩০০ মিটার রাস্তাটির কাজ পায় ইউটি মং নামের এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে কক্সবাজারের সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম রেজা কাজটি নেন। প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার কাজটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে আট কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৫ টাকা। চলমান এ রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চলমান এ কাজে অত্যন্ত নিম্নমানের ইট, খোয়া ও কাদামাটিযুক্ত মাতামুহুরী নদীর বালু, লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে দেওয়া গাইডওয়ালটি নির্মাণ করা হচ্ছে মাটির উপরিভাগ থেকে। নিম্নমানের ইটের ভাঙা অংশ রাবিশ দিয়েও করা হচ্ছে কাজ। রাস্তার কাজে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী মিরাজুল ইসলাম, কার্য সহকারীসহ কাউকে এসে তদারকি করতে দেখা যায়নি। অথচ ইট, ইটের খোয়ায় পা দিয়ে চাপ দিলে তা ভেঙে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুবিনুল হক, ছৈয়দ করিম, রবিউল ইসলামসহ আরো অনেকে এ রাস্তার কাজ তদারকিতে চকরিয়া উপজেলার এলজিইডির কর্মকর্তাদের গাফিলতি এবং স্বজনপ্রীতি আছে বলেও অভিযোগ করেন।
রাস্তা নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে রাস্তার বক্স কাটিংয়ের পর সেই মাটিমিশ্রিত বালু দিয়ে বক্স ভরাটকরণ, রোড রোলারের ব্যবহার না করা, লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা এবং নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট ও বালুর সংমিশ্রণ, নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অনিয়মের অভিযোগের পর কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হলেও অফিস কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারের যোগসাজশে এখনো ওই কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার ও তাদের লোকজন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আবু সায়েম বলেন, টেন্ডারের চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারের কাজ করার কথা বললেও তিনি কোনো তোয়াক্কা না করে অনুমোদনবিহীন নিম্নমানের কাদামাটিযুক্ত বালু, ইট ও ইটের খোয়া দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী সেলিম রেজার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজের শুরুতে কিছু ইট ২ নাম্বার এসেছিল। তবে সেসব ইট দিয়ে কাজ না করতে বলা হয়েছে। বাকি সবকিছু ঠিক আছে। আমরা দরপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। অফিস আমাদের কাছ থেকে শতভাগ কাজ বুঝে নিচ্ছে।
এলজিইডির চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সহকারী প্রকৌশলী মিরাজুল ইসলাম কাজটির তদারকি করছেন। এ বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু উন্নয়ন কাজের চুক্তি মোতাবেক কাজ না হলে ও কাজে অনিয়ম হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান জানান, এ বিষয়ে জেনে আমি প্রজেক্ট এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি এখন ভালোমানের সামগ্রী দিয়ে প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে।
কেকে/ এমএস