রবিবার, ১১ মে ২০২৫,
২৮ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

রবিবার, ১১ মে ২০২৫
শিরোনাম: ভয়ঙ্কর গোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়ে মোদিকে যুদ্ধ বন্ধের চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র      ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দু’পক্ষের সংঘর্ষ      নিষিদ্ধ হলো আ.লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম      আ. লীগ নিষিদ্ধে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না আসায় ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা      জরুরি বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ      আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে এক ঘণ্টা সময় দিলেন হাসনাত      আমরা কোনো দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে না: জি এম কাদের      
খোলাকাগজ স্পেশাল
কেমিক্যাল আতঙ্ক নয়, চাই বিজ্ঞানসম্মত আমচাষ ও প্রশাসনিক সচেতনতা
মো. তাইফ আলী
প্রকাশ: বুধবার, ৭ মে, ২০২৫, ৫:০৪ পিএম
মো. তাইফ আলী

মো. তাইফ আলী

বাংলাদেশে এখন আমের মৌসুম। এ সময়টায় কৃষকের চোখে-মুখে থাকে আশার আলো। সারা বছরের পরিশ্রমে ফলানো ফসল বিক্রি করে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে কিছু ভুল ধারণা ও অজ্ঞতার কারণে ‘কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো’ অভিযোগে টনকে টন আম প্রশাসনের হাতে জব্দ ও ধ্বংস হচ্ছে। সদ্য সাতক্ষীরায় প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কেজি আম ধ্বংস করা হয়েছে, শুধু ‘রাসায়নিক দিয়ে পাকানো অভিযোগে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অবস্থান কি বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিপূর্ণ?

আম পাকানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, এমনকি বাংলাদেশেও, কিছু অনুমোদিত ফল পাকানো রাসায়নিক রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ইথোফন (Ethephon)। এটি বাজারে রাইপেনার বা প্লান্ট গ্রোথ হরমোন (পিজিআর) নামে পরিচিত। এটি একটি উদ্ভিদ বিকাশ নিয়ন্ত্রণকারী পদার্থ, যা ব্যবহারে ফল দ্রুত ও অভিন্নভাবে পাকতে সাহায্য করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), FAO এবং Codex Alimentarius Commission ইথোফনকে অনুমোদিত রাইপেনার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ইথোফন নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থাকলে এটি নিরাপদ— আমে ইথোফনের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা (MRL) হলো 2.0 mg/kg।

আমাদের দেশের কৃষকরা এখনো অনেকে পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি মেনে রাইপেনার প্রয়োগ করেন না। অনেক সময় তারা প্রয়োগের নিয়ম বা পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত না জানলেও, বিভিন্ন ল্যাব পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে— এমন অবস্থাতেও ইথোফনের কোনো ক্ষতিকর রেসিডিউ ভোজ্য অংশে পাওয়া যায় না। কারণ এটি পানিতে দ্রবণীয়, দ্রুত ভেঙে যায় এবং মূলত ফলের বাইরের আবরণে সীমাবদ্ধ থাকে। আমের খোসা ফেলে দিলে বা ধুয়ে খেলে এর ঝুঁকি প্রায় শূন্যের সমান। আমরা বিগত সময়ে মধুপুরের আনারসে ইথোফন এর রেসিডিঊ পরীক্ষা করেছি এবং সেখানে ভোজ্য অংশে কোনো রেসিডিউ পাওয়া যায়নি।

তাহলে প্রশ্ন হলো— শুধু ‘কেমিক্যাল’ শব্দটি শুনেই ফল ধ্বংস করা কি যুক্তিসঙ্গত? নিশ্চয়ই নয়। কারণ এখানে ‘কেমিক্যাল’ বললেই তা ক্ষতিকর হয়ে যায় না। মূল কথা হলো কোনো রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে, কী মাত্রায় হয়েছে, এবং সেটা মানবদেহের জন্য নিরাপদ কি না— এই প্রশ্নগুলোর বৈজ্ঞানিক উত্তর জানতে হবে। সমস্যা হলো— প্রশাসন ও জনসাধারণের এক শ্রেণি এখনো মনে করেন, কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো মানেই ক্ষতিকর। এ ভুল ধারণা থেকেই যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়া শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে কৃষকের আম ধ্বংস করা হয়। আর এই বিশ্লেষণ ছাড়া শুধু অনুমান বা সন্দেহের ভিত্তিতে কৃষকের দিনের পর দিন শ্রম দিয়ে উৎপাদিত ফল ধ্বংস করা ন্যায়সংগত নয়। এই ধরণের নির্বিচার ধ্বংস দেশের কৃষি অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাহলে করণীয় কী?

আমাদের উচিত হবে প্রশাসন, কৃষক ও জনগণের মধ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রশাসন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারেন:
১। প্রথমত, প্রশাসনকে বুঝতে হবে— প্রতিটি জব্দ করা আমকে ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
২। যদি দেখা যায় আমে ইথোফনের উপস্থিতি অনুমোদিত মাত্রার নিচে বা ভোজ্য অংশে নেই, তাহলে সেই আম ন্যায্যভাবে বাজারজাত করতে দেওয়া উচিত।
৩। আর যদি ফলগুলো বিক্রির অনুপযুক্ত হয়, তাহলে তা বিনষ্ট করার বদলে শিল্পপ্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ব্যবহার (যেমন : আচার) বা পশুখাদ্য, জৈব সার উৎপাদন হিসেবে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে— যাতে সম্পদ ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে।
৪। চাষিদের জন্য নিরাপদ রাইপেনার ব্যবহারে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। বর্তমানে বাংলাদেশে নিরাপদ ফল পাকানোর চেম্বার নিয়ে গবেষণা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলাসমূহে নিরাপদ ভাবে ফল পাকানোর জন্য সরকারিভাবে চেম্বার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে যাতে করে কৃষকরা সুলভমূল্যে বিভিন্ন ধরণের ফল নিরাপদ উপায়ে পাকানোর ব্যবস্থা করতে পারে।
৫। জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি।

সর্বোপরি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিজ্ঞানসম্মত মূল্যায়নের আগে কোনো খাদ্যকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচনা করা উচিত নয়। এটা যেমন কৃষকের প্রতি অন্যায়, তেমনি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে একধরনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা।
আমাদের এখন প্রয়োজন আতঙ্ক নয়, বৈজ্ঞানিক সচেতনতা, বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ এবং সমন্বিত নীতিমালা। কৃষক, প্রশাসন ও জনগণের যৌথ উদ্যোগেই নিরাপদ, টেকসই ও সুষ্ঠু খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।

লেখক : গবেষণা কর্মকর্তা,  বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ভয়ঙ্কর গোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়ে মোদিকে যুদ্ধ বন্ধের চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, সুন্দরগঞ্জে শিবিরের আনন্দ মিছিল
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দু’পক্ষের সংঘর্ষ
আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণায় বিপ্লবী জনতাকে চরমোনাই পীরের অভিনন্দন
নিষিদ্ধ হলো আ.লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম

সর্বাধিক পঠিত

জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ক্ষমতার ভারসাম্য দরকার: জুনায়েদ সাকি
নিষিদ্ধ হলো আ.লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আলোচনা করতেই জরুরি বৈঠক
আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখল করে এনসিপির অফিস
৫ মাস পর লিবিয়া থেকে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন শিবচরের রিফাত

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close