পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার শিক্ষাঙ্গনে যে নামটি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে উচ্চারিত হতো, সেটি হল এওয়াইএম কামরুজ্জামান— সবার প্রিয় কালাচাঁদ মিয়া। শিক্ষার আলো জ্বালাতে যিনি নিজেকে সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বাউফল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ কর্মজীবনে কালাচাঁদ ছিলেন এক জীবন্ত প্রেরণা। তার হাতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষার্থী, যাদের অনেকেই আজ সমাজের নেতৃত্বের আসনে। কিন্তু তিনি কখনও নিজেকে বড় করে দেখেননি — বিনয়, নৈতিকতা, আর মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ছিল তাঁর জীবনের মূল ভিত্তি।
নারী শিক্ষার প্রসারে বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি শুধু পাঠশালার শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন একজন নৈতিক দিকনির্দেশক, সমাজের আলোকিত পথপ্রদর্শক।
আজ এই মহান শিক্ষাবিদের প্রস্থান বাউফলের মানুষের মনে গভীর শূন্যতা রেখে গেল। তার ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী সবাই যেন বলছে, “কালাচাঁদ মিয়া শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি ছিলেন এক আলো ঝরানো প্রদীপ; যার আলোতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আলোকিত হয়েছে।”
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকাল ৫ টায় বাউফল পাবলিক মাঠে তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে কয়েক শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সবার চোখে মুখে কান্না, ‘আমাদের কালাচাঁদ স্যার চলে গেলেন না ফেরার দেশে।’
এদিকে, সাংবাদিক অহিদুজ্জামান সুপনের বাবা এওয়াইএম কামারুজ্জামানের কালাচাঁদ মিয়ার মৃত্যুতে শোক বার্তা পাঠিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার দুপুরে শোকবার্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন। এছাড়া বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। শোক বার্তায় তারা বিদেহী আত্মার মাগফেরাতসহ তার শোক সন্তপ্ত পরিবার এবংনস্বজনদের প্রতি মাগফেরাত ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এওয়াইএম কামারুজ্জামান রোববার (১২ অক্টোবর) রাত ১০টা ৫৬ মিনিটের দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে তার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর। তিনি দুই পুত্র, এক কন্যা ও নাতী নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এওয়াইএম কামারুজ্জামান শিক্ষকতা পেশার মাধ্যমে প্রথম তার কর্মজীবন শুরু করেন বাউফলের বিলবিলাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৭০ সালে। পরবর্তী তিনি ঢাকা শের-ই- বাংলা নগর বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও বাউফল মডেল সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৫ সালে বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন এবং ২০০৩ সালে অবসরে যান। এ ছাড়া তিনি কর্মময় জীবনে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের উন্নয়ন অনেক অবদান রেখেছেন।
কেকে/ এমএ